পৌষ মাসকে বিদায় জানাতেই আয়োজন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি। আর এই সংক্রান্তি থেকেই উৎপত্তি হয়েছে সাকরাইনের। তাই এ সময় সাকরাইন উৎসব পালন করেন পুরান ঢাকার লাখো মানুষ। উৎসবের সকালের অংশে থাকে পিঠা-পুলিসহ নানা ধরনের মিষ্টি খাবারের আয়োজন। দুপুর থেকে শুরু হয় ঘুড়ি উৎসব। সূর্য ডোবার আগ থেকে শুরু হয় আলোকসজ্জা, আতশবাজি আর গানবাজনা। সাকরাইন উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে উচ্ছ্বাসিত থাকেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। আয়োজনের কমতি না রাখতে প্রস্তুতি শুরু হয় অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই।
পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাকরাইনের এই উদযাপন দুই ভাগে পালন করেন তারা। প্রথম দিন, অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার, গেন্ডারিয়া ও জুরাইন এলাকার মানুষ সাকরাইন উদযাপন করেন। পরের দিন (১৫ জানুয়ারি) শাঁখারি বাজার, তাঁতি বাজার, লালবাগ, বংশাল, নাজিরা বাজার এলাকার মানুষ সাকরাইন পালন করেন। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) পুরান ঢাকার এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ছাদে কেউ কেউ শামিয়ানা টানিয়েছেন। অনেক ছাদেই বসানো হয়েছে লাউড স্পিকার। ঘুড়ির দোকানেও দেখা গেছে ভিড়।
শাঁখারি বাজারের ঘুড়ি বিক্রেতা কমল জানান, প্রতি পিস ঘুড়ি ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সাধারণ ঘুড়ির পাশাপাশি বাহারি ডিজাইনের ঘুড়িরও চাহিদা আছে বেশ। ঘুড়ির পাশাপাশি নাটাই এবং সুতার চাহিদাও বেশ।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা রেজওয়ান আরিফ বলেন, ‘পুরান ঢাকায় সাকরাইনের মতো রঙিন উৎসব আর কিছু নেই। এজন্য অনেক আয়োজন করে পালন করা হয়। বিকাল থেকে মূলত শুরু প্রধান আয়োজন। গান-বাজনার তালে তালে চলতে থাকে ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি আর ফানুস ওড়ানো।’
এদিকে প্রথমবারের মতো সাকরাইন উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ঘুড়ি উৎসব। বিভিন্ন মাঠ ও বাড়ির ছাদ থেকে একসঙ্গে ১০ হাজার ঘুড়ি উড়বে রাজধানীর আকাশে। উৎসবে অংশ নিতে আগ্রহীদের মাঝে এসব ঘুড়ি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। পৌষের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর দুইটা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ স্লোগানে এই উৎসব একযোগে ডিএসসিসি’র ৭৫টি ওয়ার্ডে আয়োজন করা হবে।
আয়োজন সফল করতে ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আয়োজনের অংশ হিসেবে ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের ৭৫ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের ২৫ জন নারী কাউন্সিলরকে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির পক্ষ হতে ১০০টি করে ঘুড়ি সরবরাহ করা হবে। পরে কাউন্সিলররা সেসব ঘুড়ি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জনসাধারণের মাঝে বিলি করবেন।
উৎসব আয়োজন প্রসঙ্গে ডিএসসিসির ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ বলেন, ‘সাকরাইন উৎসব পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। কালের পরিক্রমায় এই ঐতিহ্য পুরান ঢাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যান্ত্রিক জীবনের বাস্তবতায় আমরা অনেকেই এটা ভুলতে বসেছি। তাই, ঢাকার ঐতিহ্য লালন, সংরক্ষণ এবং প্রসারে ডিএসসিসির মেয়র যে রূপরেখা ঘোষণা করেছেন, তার ধারাবাহিকতায় আমরা প্রথমবারের মতো এই ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছি।’
‘সাকরাইন উৎসব-১৪২৭’ আয়োজন প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই আয়োজন পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ফিরিয়ে আনতে একটি মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।’