নিজস্ব
প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে অযথা ‘ভয় বা আবেগে’ তাড়িত না হওয়ার
পরামর্শ দিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেছেন, “ইমোশনাল হয়ে কোনো কাজ
হয় না। ইমোশনাল হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সরকার কী করছে? সরকার চেষ্টা
করছে। আমরা যদি ভাবি সরকার চুরি করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে এটা ঠিক না।”
শুক্রবার ঢাকার ধানম-িতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ‘করোনা টিকার সুষ্ঠু
ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কোভিড-১৯ বিষয়ক
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. নজরুল বলেন, এখন যে ভ্যাকসিন
জনগণকে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে বলা হয় ‘ফার্স্ট জেনারেশন’ ভ্যাকসিন।
বৈজ্ঞানিকদের ভাষায় একে ভ্যাকসিনের ফোর্থ ট্রায়ালও বলা হয়।
“হাজার হাজার মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আবার বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।”
ফার্স্ট
জেনারেশন ভ্যাকসিন আগে বড় আকারে ব্যবহার করা হত না জানিয়ে তিনি বলেন, “আগে
হয়নি, কারণ সময় ছিল। এখন যেহেতু সময় নেই, তাড়াতাড়ি আমাদেরকে নিতে হবে।
এজন্যই ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিনই আমরা নিচ্ছি, সারা পৃথিবীর লোকই নিচ্ছে।
“এতে
করে অনেক প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, ইন্ডিয়াতে এত লোক দিতে রাজি না। এই যে
নরওয়েতে ২৩ জন বুড়ো লোক মারা গেছে। এমনটা হলো ফাইজারের ভ্যাকসিনে। তাহলে তো
সাংঘাতিক ব্যাপার। আবার ইউকেতে বুড়ো মানুষদের দেওয়া হয়েছে, একজনও মরেনি।
তাহলে এসব নিয়ে অ্যানালাইসিস করতে হবে।”
ভয় পাওয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন না
নেওয়ার সম্পর্ক যে একেবারেই ক্ষীণ, সে কথা তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
বলেন, “অনেক অন্ধকার রাতে কেউ নেই, তখন তো একটু ভয় লাগবে। কিচ্ছু কিন্তু
নেই, তারপরও ভয় লাগে। ভয় পাওয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন না নেওয়া হচ্ছে
সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার। আমরা মনোযোগী হব বায়োলজিক্যাল ব্যাপারে, ফিজিক্যাল
ব্যাপারে। সত্যিকারই আমাদের ক্ষতি হয় কি না সেটা দেখব।”
ইপিআইয়ের যেসব
ভ্যাকসিন সেগুলোর বয়স ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত উল্লেখ করে অধ্যাপক নজরুল
ইসলাম বলেন, “যে কারণে সেগুলো সেরা। আর আমাদের এই যে করোনা ভ্যাকসিন সেগুলো
কেবল যাত্রা হল, এক বছরও হয়নি। অনেক কিছু আমাদেরকে কনসিডার করতে হবে।
ইমোশনাল হয়ে কোনো কাজ হয় না।”
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়
বাংলাদেশে ছয় ধরনের করোনাভাইরাস সনাক্তের দাবি করা হয়েছে, এসব ভাইরাসে নতুন
আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনগুলো কাজ করবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল
অধ্যাপক নজরুলের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “এই ভ্যাকসিন কাজ করবে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে
ভ্যাকসিনে মানুষের শরীরে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করবে।”
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন বলেন, “জার্মানির
কিউর-ভ্যাক নামে একটা ভ্যাকসিন কোম্পানি আছে, তারা করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে
এখনও বাজারে আসেনি। তারা বলছে, করোনাভাইরাসে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছয় মাস
থাকবে। আর ফাইজার বলছে, এক বছর কার্যকারিতা থাকবে। এটা এখনও সঠিকভাবে বলা
হয়নি।
“যদি পাঁচ মাসও কার্যকারিতা থাকে, আর এই সময়ের মধ্যে যদি সবাই ভ্যাকসিন নিতে পারি তাহলে তো আর ভাইরাস থাকবে না।”
অনুষ্ঠানে
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “ভ্যাকসিনের
বিষয়টি সোজা-সরলভাবে জাতির কাছে তুলে ধরতে চাই। ভ্যাকসিন নিয়ে ভয় পাওয়ার
কোনো কারণ নাই।”
সব ওষুধেরই যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, সে
কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাকে যদি বলেৃ যদি আমার নাম আগে আসে, আমি (টিকা)
নিয়ে নেব।”
অন্যদের মধ্যে বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের
চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের
উপাধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার, গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের গণমাধ্যম
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীল আলম মিন্টু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।