পেঁয়াজ কেনার পর ব্যবহারের আগে কিছু অংশ পচে যায়। কিন্তু এই পেঁয়াজ
পাউডার করে রাখলে পচার শঙ্কা থাকে না। পাউডার অবস্থায় ভালোভাবে সংরক্ষণ করা
গেলে গুণগতমান বজায় থাকে দুই বছর। এভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা গেলে দেশে
পেঁয়াজ নষ্ট হওয়া নিয়ে ভাবতে হবে না।
কাঁচা পেঁয়াজের গুঁড়া (পাউডার) তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বগুড়ার শিবগঞ্জের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানী ড. মাসুদ আলম।
প্রাথমিকভাবে তার উদ্ভাবিত এই গুঁড়া পরীক্ষা করে গুণ ও মান শতভাগ ঠিক থাকার প্রমাণ মিলেছে। পেঁয়াজের এই গুঁড়া এখন বাজারজাত হচ্ছে।
মাঠ থেকে সংগ্রহের পর খাদ্যে ব্যবহারের আগে নষ্ট হয় অন্তত ৩০ শতাংশ
পেঁয়াজ। মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, চার-পাঁচজনের একটি
পরিবারে মাসে গড়ে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়। এ হিসেবে একটি পরিবারে
বছরে পেঁয়াজ প্রয়োজন ৬০ কেজি। বছরে ৬০ কেজি পেঁয়াজ যে পরিবারের চাহিদা,
তাদের কিনতে হয় অন্তত ৮০ কেজি। কারণ পেঁয়াজ কেনার পর ব্যবহারের আগে কিছু
অংশ পচে যায়। কিন্তু এই পেঁয়াজ পাউডার করে রাখলে আর পচার শঙ্কা থাকে না।
পাউডার অবস্থায় ভালোভাবে সংরক্ষণ করা গেলে তার গুণমান বজায় থাকে পরবর্তী
দুই বছর।
পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণে গুঁড়া করলে এর গুণগত মান, খাদ্যে ব্যবহারের
পরিমাণ কোনোটাই কমে না। এক কেজি পেঁয়াজ শুকিয়ে পাউডার পাওয়া যায় ১০০ থেকে
২০০ গ্রাম। এক কেজি মাংস রান্না করতে সাধারণত কাঁচা পেঁয়াজ লাগে ২৫০ গ্রাম।
২৫০ গ্রাম কাঁচা পেঁয়াজ গুঁড়া করলে পাওয়া যাবে ২৫ গ্রাম। সেই হিসাবে এক
কেজি মাংস রান্নায় ওই ২৫ গ্রাম গুঁড়া ব্যবহার করলে ২৫০ গ্রাম কাঁচা
পেঁয়াজের ফল পাওয়া যাবে। এতে খরচও কম পড়বে।
পেঁয়াজের পাউডার প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করছেন
ড. মাসুদ আলম। এ গবেষণার সফলতা পেতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর। এরপরও প্রায় ছয়
বছর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে পেঁয়াজের
পাউডার বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচা পেঁয়াজের চেয়ে এর পাউডার সাশ্রয়ী এবং সংরক্ষণ
করা যায় দীর্ঘদিন। ফলে পেঁয়াজ আমদানির ওপর চাপ কমবে। পেঁয়াজের বাজারও
স্থিতিশীল হবে। আর পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাত করে পাউডার করা গেলে ৩০ শতাংশ
পেঁয়াজ নষ্ট হবে না।
পেঁয়াজের পাউডার সূর্যের তাপ আর যান্ত্রিক পদ্ধতি দুইভাবেই করা যায়।
এজন্য প্রয়োজন পেঁয়াজ কাটার যন্ত্র, প্লাস্টিকের পাত্র, লবণ, সোডিয়াম মেটা
বাইসালফাইড, ড্রায়ার মেশিন ও পলিব্যাগ।
প্রথমে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে বাছাই করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। পরে সেগুলো
মেশিনে স্লাইস করে কেটে ভাপ দিতে হবে। এরপর সোডিয়াম মেটা বাইসালফাইড দ্রবণে
ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরের ধাপে এই পেঁয়াজ শুকাতে হবে। শুকানো পেঁয়াজ গুঁড়া
করলেই কাজ শেষ। এরপর মোড়কে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে।
যান্ত্রিকভাবে শুকিয়ে পেঁয়াজের গুঁড়া তৈরি করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৪৮
ঘণ্টা। আর প্রাকৃতিকভাবে করলে লাগে কয়েক দিন। ঘরে বসেই তৈরি করা যায়
পেঁয়াজের পাউডার।
মসলা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য মতে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায়
৩৫ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন।
বাকিটা আমদানি করতে হয়।
মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামীম রেজা বলেন,
‘দেশে সব ধরনের মসলায় আমদানি নির্ভর। যত বেশি চাষ এবং প্রক্রিয়াজাত করতে
সক্ষম হব, তত আমাদের লাভ।
ড. মাসুদ পেঁয়াজ গুঁড়ার যে পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, তা যুগান্তকারী। এটি
ব্যাপকহারে বাজারজাত করা গেলে পেঁয়াজ আমদানির দৌরাত্ম্য কমবে।’
গুঁড়া পেঁয়াজের কার্যকারিতা সম্পর্কে বগুড়ার রহমাননগর এলাকার গৃহিণী
স্মরণী রনি জানান, সাধারণ পেঁয়াজের মতোই স্বাদ ও গন্ধ পাউডারে। পরিমাণে
অতিরিক্ত ব্যবহারের ঝামেলা নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা কাঁচা পেঁয়াজ ঘরে রাখলে
নষ্টের পাশাপাশি গন্ধ হয়। এখন সেই ঝামেলা থেকেও মুক্তি মিলবে।