অবশেষে অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি
Published : Monday, 25 January, 2021 at 12:00 AM
দীর্ঘ
বিতর্কের পর করোনাভাইরাস পরীার অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ
সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার সচিবালয়ে
সাংবাদিকদের বলেন, “অনেক দিনের দাবি ছিল অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি
দেওয়ার। এখন এটা চালু করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। আজ আপনাদের যখন বললাম, তখন
থেকেই এটা চালু হয়ে গেল।”
গত মার্চে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের
প্রকোপ শুরুর পর এ পর্যন্ত শুধু আরটি-পিসিআর টেস্টই চলে আসছিল। তবে পরীায়
গতি আনতে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর ওপর জোর দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
রিভার্স
ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পদ্ধতি সংক্রমণ
শনাক্তে বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
তবে এই
পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর ফল পেতে বেশ সময় লেগে যায়, খরচও তুলনামূলকভাবে
বেশি। তাছাড়া সব জায়গায় এ পরীার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরিও নেই।
সেখানে
র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে আধা ঘণ্টার মধ্যে জানা যায় করোনাভাইরাস
সংক্রমণ ঘটেছে কি না। আর শরীরে নির্দিষ্ট কোনো রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি
তৈরি হয়েছে কি না, রক্তোর নমুনা পরীা করে তা স্বল্প সময়ে জানা যায়
অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের কোম্পানি গণস্বাস্থ্য
ফার্মাসিউটিক্যালস গতবছর একটি র্যাপিড টেস্টিং কিট তৈরি করলেও
‘মানোত্তীর্ণ’ হয়নি বলে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সে সময় নানামুখী
বিতর্ক হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট নভেল
করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে বাংলাদশে করোনাভাইরাস
সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য দেশে অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দেওয়া
যায়।
এ কারণে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও বিভিন্ন সময় অ্যান্টিবডি পরীা চালুর পরামর্শ দিয়েছিল।
সে
কারণে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গতবছর জুনে র্যাপিড টেস্টিং
অ্যান্টিবডি কিট ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করলেও তা ব্যবহার বা আমদানির
অনুমোদন আর তখন দেওয়া হয়নি।
শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হলে এর বিরুদ্ধে
লড়তে শরীরই এক পর্যায়ে প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করে তৈরি করে নেয়, যাকে বলে
অ্যান্টিবডি। আর যে জীবাণুর প্রতিক্রিয়ায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাকে বলে
অ্যান্টিজেন। সেই অ্যান্টিবডির কাছে ভাইরাস পরাজিত হলে রোগী সুস্থ হয়ে
ওঠেন।
কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে
পাঁচ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে। ফলে, অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার আগে
র্যাপিড কিটে নমুনা পরীা করা হলে ফলাফল নেগেটিভ হবে। অর্থাৎ, শরীরে ভাইরাস
থাকলেও এই পরীায় তা ধরা পড়বে না।
আবার কেউ আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে
উঠলেও তার রক্তে অ্যান্টিবডি থেকে যাবে। ফলে তার শরীরে ভাইরাস না থাকলেও
র্যাপিড কিটের টেস্ট ফলাফল পজিটিভ আসবে।
সে কারণে করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ পরীার আরটি-পিসিআর বা অ্যান্টিজেন টেস্টের সঙ্গে যেন অ্যান্টিবডি
পরীাকে গুলিয়ে ফেলা না হয়, সে বিষয়ে জোর দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে এখন অ্যান্টিবডি পরীার জন্য প্রয়োজনীয় কিট আছে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনীয় যা কিট লাগে তা আনা হবে।
“তবে
এই মুহূর্তে সরকারের কাছে কিট আছে কি না- তা এখনও জানা নেই। অ্যান্টিবডি
টেস্টের কিট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও আমদানি করতে পারে। বিভিন্ন হাসপাতালে বা
সংস্থায় নিতে পারে। কাজেই এখানে বাধা নাই। আমাদের হাসপাতালেও ব্যবহার করতে
পারে, অন্যান্য জায়গায়ও ব্যবহার হতে পারে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান,
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে
তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সোমবার দেশে
আসতে পারে। সেজন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও সে অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে।”
এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “টিকার বিষয়ে অনেক ধরনের কথাবার্তা আসে। কিন্তু
একটা জিনিস স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি, টিকা নেওয়া মানুষের ব্যক্তিগত
স্বাধীনতা। বাংলাদেশে কাউকে জোর করে টিকা দেওয়া হবে না। মানুষ স্বাধীনভাবে
নেবে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের অনেকে বিদ্রুপ
করছে, এটা ঠিক নয়। মানুষের জীবনের চিন্তা করে আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এটা
নিয়ে কোনো রাজনীতি নয়, এটা ফান করার বিষয় নয়।”