এইচএসসির ফল প্রকাশ হওয়ায় পৌনে ১৪ লাখ শিার্থীর যে উৎকণ্ঠার অবসান ঘটল, মহামারীর এই সময়ে পরীার চেয়ে সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন শিাবিদ ও অভিভাবকরা। বিশেষ পরিস্থিতিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার অনুসৃত পদ্ধতিকে ‘সর্বোত্তম’ বর্ণনা করে তারা বলছেন, শিার্থীরা এখন ঠা-া মাথায় উচ্চ শিাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে পারবে।
জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীার ফলের ভিত্তিতে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিার্থীকে পাস করিয়ে শনিবার ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করেছে সরকার। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে উদ্বেগের অবসানেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন গণস্বারতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
তিনি বলেন, “একটা উৎকণ্ঠার অবসান ঘটেছে। পরবর্তী স্তরে যাওয়ার জন্য শিার্থীরা এখন প্রস্তুতি নিতে পারবে।”
মহামারীর মধ্যে পরীা না নেওয়াকেই সমর্থন করছেন রাশেদা চৌধুরী। তার মতে, সেটা হত ঝুঁকিপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিা ও গবেষণা অনুষদের অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “এই পরীা না নেওয়ায় সবাই উপকৃত হয়েছে। কারণ যদি পরীা নেওয়া হত যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই পরীা দিতে পারত না।
ৃকেউ কেউ ফেল করত, এখন সবাই একটা সার্টিফেকেট পাবে। কারও কিন্তু তি হয়নি, লেখাপড়া করেই কিন্তু তারা এই সার্টিফিকেট পাচ্ছে।”
এবার সবাইকে পাস করানোয় একে সবাই ‘অটোপাস’ বললেও তা বলতে রাজি নন রাশেদ কে চৌধুরী।
“এটাকে আমি ঢালাওভাবে অটোপাস বলতে রাজি নই, কারণ এরা দুটি পাবলিক পরীা দিয়ে এসেছে।”
তিনি বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এভাবে রেজাল্ট দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ দেশই বিকল্প ব্যবস্থা করেছে, আমাদেরও বিকল্প না ভেবে উপায় নেই। আরও যদি আমরা অপো করতাম, তাহলে অনেক তি হয়ে যেতে পারত।”
গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীা শুরুর কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে তা স্থগিত করা হয়।
মাসের পর মাস অপো করেও পরীা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় গত অক্টোবর সরকার জানায়, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মতো এইচএসসি পরীাও নেওয়া যাচ্ছে না।
এরপর আইন সংশোধন করে পরীা ছাড়াই মূল্যায়নের পথ বের করে এই ফল দেওয়া হল।
‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করায় আগের দুই পরীায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার ৩৯৬ জন পূর্ণাঙ্গ জিপিএ-৫ পায় পাননি।
আবার জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীায় জিপিএ-৫ না পেলেও এবারের ফলাফলে ১৭ হাজার ৪৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এ নিয়ে রাশেদা চৌধুরী বলেন, “পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার জন্য ভর্তি পরীা দিতেই হবে। গোল্ডেন জিপিএ পেয়েও বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই ভর্তি হতে পারেনি, সেটা আমরা দেখেছি। ফলে জিপিএ-৫ বাড়ল কি, না বাড়ল, সেগুলো না ভেবে এখন শিার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ।
“এই ফলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হবেই। কিন্তু পেছনেরটা না ভেবে সামনে যাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ।”
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন কি না- এমন প্রশ্নে ছিল বাংলাদেশের শিা ও শিা ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত থাকা রাশেদা কে চৌধুরীর কাছে।
তিনি বলেন, “প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু আমি মনে করি না কোনো আদর্শ বিকল্প ছিল। কোনো বিকল্পই হয়ত আদর্শ হত না। শুধু আমরা না, অন্যরাও ভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান বিগত পরীার ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মহামারী তো এখন বাস্তবতা, এর মধ্যে আইনের আলোকেই এই ফলাফল দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে শিার্থীদের মূল্যায়নের জন্য নানা স্তরে নানান পদ্ধতি রয়েছে। সব মূল্যায়নই যে চূড়ান্ত পরীা নিয়ে দেওয়া হয় তা কিন্তু নয়।
“এদের ফল মূল্যায়ন ছাড়া দেওয়া হয়েছে তা কিন্তু নয়। আমি বলব মূল্যায়নের এটাও একটি পদ্ধতি।”
অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “সব শিক কি একইভাবে সব শিার্থীকে মূল্যায়ন করেন? সবাই সিনসিয়ারলি খাতা দেখেন?”
উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হওয়ায় এখন এসব শিার্থীরা উচ্চ শিা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে বলে মত দেন তিনি।
“যখন ভালো গ্রেড হয় তখনও আমরা কথা বলি, শিার মান নিয়ে কথা বলি। এ ধরনের বিতর্ক সারা পৃথিবীতেই আছে। এভাবেই রেজাল্ট দেওয়াই সব থেকে ভালো হয়েছে।”
ঢাকা বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিার্থীদের অভিভাবকেদর সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলুও মনে করছেন, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হওয়ায় শিার্থীদের মাথা থেকে ‘বোঝা’ নেমে গেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সবার আগে শিার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি দেখতে হবে, সরকার সেটিকে বিবেচনায় নিয়েই এভাবে ফল প্রকাশ করেছে।
“বলতে গেলে সবার ফলই আগের মতোই হয়েছে। এখন তারা উচ্চ শিা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ঠা-া মাথায় প্রস্তুতি নিতে পারবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে ভর্তিপরীা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে মহামারীকালে সব শিার্থীদের জড়ো করে পরীা নেওয়াও ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।