মাসুদ আলম।
কুমিল্লা ওয়াইডব্লিউসিএ
স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শিশু শারিয়ার নাঈম। গত বছরের জানুয়ারিতে
তৃতীয় শ্রেণিতে ছিলেন। নতুন বই নিয়ে বেশিদিন স্কুলে যাওয়া এবং সহপাঠিদের
সাথে খেলাধুলার সুযোগ হয়নি। ভালোভাবে ক্লাস শুরুর আগেই করোনা মহামারি
সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ হয়ে যায়
তার বিদ্যালয়ও। সেই থেকে বন্ধ বিদ্যালয়।
করোনাকালিন সময়ের মধ্যে পরীক্ষা
না নিয়ে দেশের সকল স্কুলে প্রমোশন দেওয়া হয়। অটো প্রমোশনে নাঈম তৃতীয়
শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছেন। বছরের শুরুতে নতুন বইও পেয়েছেন।
কিন্তু এখনও বিদ্যালয়ের নতুন ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। শনিবার সে তার এক
স্বজনের সঙ্গে কুমিল্লা মডার্ণ স্কুলের পাশে পাইভেট পড়তে আসেন। ৩০ মার্চ
সারাদেশের সাথে তার স্কুল খোলার বিষয়টি শুনেন না শারিয়ার নাঈম। যখন জানতে
পারলেন আগামী ৩০ মার্চ স্কুল খুলবে, তখন নাঈমের মধ্যে খুশির জোয়ার বৈইছে।
তাদের আর তর সইছে না। শারিয়ার নাঈমের মতো কুমিল্লাশহরের ঘরবন্দি শিশুরা
স্কুল খোলার খবরে ভীষণ খুশি। যদিও চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হবে সপ্তাহে
একদিন।
কুমিল্লা কর ভবন এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার ভূঁইয়া। তার মেয়ে
সুমাইয়া আক্তার কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সুমাইয়া
টেলিভিশনে বিদ্যালয় খুলে দেয়ার ঘোষণা শুনে আনন্দে আত্মহারা। করোনা মহামারীর
কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় দীর্ঘ এক বছর ঘরবন্দি থেকে শিশুরা মানসিক চাপে
রয়েছেন। আগামী ৩০ মার্চ থেকে আবারও স্কুল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে মানসিক চাপ
থেকে মুক্তি মিলবে। সুমাইয়ার মতো শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার জন্য অধীর
হয়ে আছে।
সুমাইয়া জানান, স্কুল খুলে দেয়ার ঘোষণায় সে অত্যন্ত খুশি। সে
জানায় আবারও স্কুলে যাবে, আগের মতো বন্ধুদের সাথে ক্লাস করবে এবং ঘুরবে সব
মিলিয়ে মজা হবে।
কুমিল্লা কিন্ডার গার্ডেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামীম হায়দার জানান, তিনি কুমিল্লার একটি কিন্ডার গার্ডেন
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। সরকারের দেওয়া স্কুল খোলার ঘোষণায় স্কুলের শিশু
শিক্ষার্থীরা খুশি। তারা অধীর আগ্রহে আছেন ঘরবন্দি থেকে আবারও স্কুলে
ফিরতে। অভিভাবকরা প্রায় খোঁজ নেন কখন স্কুল খুলবে। কখন আবার তাদের ছেলে
মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠাবে। সরকারের ঘোষণার পর ৩০ মার্চ শিশুদের স্কুলের
পাঠাতে অভিভাবকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নসহ স্কুল
কর্তৃপক্ষগুলোও নানা প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন।
কুমিল্লা নগরীর ঝাউতোলা
এলাকার বাসিন্দা এড. আশিকুর রহমান ভূঁইয়া নামে এক অভিভাবক জানান, তার শিশু
ছেলে মোহাম্মদ আইমান গুলবাগিচা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম
শ্রেণির ছাত্র। তিনি জানান, টেলিভিশনে স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর
থেকে তার ছেলে আইমান স্কুলে যাওয়ার জন্য তার আরও তর সইছে না।
নিজের
ছেলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সে বাইরে বেরোতে পারে না, বন্ধু-বান্ধবের
সঙ্গে দেখা হয় না। খেলাধুলাও বন্ধ। সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে।
কুমিল্লা
শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুস সালাম জানান, সরকারের ঘোষণা
অনুসারে আমি ৩০ মার্চ থেকে স্কুল খুলে দেয়া হবে। করোনাকালে এক ধরনের
আইসোলেশনে থাকতে থাকতে শিক্ষার্থীদের মনোজগতে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।
আগামী ৩০ মার্চ থেকে পূণরায় স্কুলে আসা যাওয়ায় তাদের সেই চাপ মুক্ত হবে।
উল্লেখ্য,
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে করোনা মহামারির কারণে প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ
থাকা স্কুল-কলেজগুলো ৩০শে মার্চ থেকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
কর্তৃপক্ষ, যদিও শুরু থেকেই প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হবেনা শিক্ষার্থীদের।
ঢাকায়
সচিবালয়ে এক আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি জানান
দেশের সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ত্রিশে মার্চ খুলে দেয়া হবে। তবে সব শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে যাবেনা। আর প্রাক-প্রাথমিক সম্পর্কে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে
বলছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।