একদিনের ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের উঠতি ক্রিকেটারদের জয় ৪ উইকেটে।
চট্টগ্রামে রোববার শেষ ওভারে নিষ্পত্তি হওয়া উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে ২৬৪ রানের লক্ষ্য
স্পর্শ করেছে তারা ২ বল বাকি রেখে।সময়ের দাবি মেটানো ইনিংসে ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৯ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন শামীম।
শেষ দিকে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন সুমন খান। এই পেসার ব্যাট হাতে গড়ে দেন শেষ ওভারের ভাগ্য।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ৯ রান। আইরিশদের জাতীয় দলের পেসার মার্ক অ্যাডায়ার
প্রথম বলটিই করেন অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল টস। সুমন দারুণ শটে এক্সট্রা কাভার দিয়ে আদায়
করে নেন বাউন্ডারি। ওই শটের পরই জয়টা হয়ে ওঠে কেবল আনুষ্ঠানিকতা। সিরিজের প্রথম ম্যাচ চলার সময় আয়ারল্যান্ডের রুহান প্রিটোরিয়াসের কোভিড শনাক্ত
হওয়ার খবর এলেন ৩০ ওভারের পর পরিত্যক্ত হয় ম্যাচ। এই ম্যাচের আগে এই অলরাউন্ডারসহ দুই
দলের সবাই পরীক্ষায় নেগেটিভ হন। শঙ্কা কাটিয়ে ম্যাচ হয় সূচী অনুযায়ীই। আইসোলেশন থেকে মুক্তি পেয়ে প্রিটোরিয়াই পথ দেখান টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে।
জেমস ম্যাকলামের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন তিনি ৮৮ রান। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের
উইকেটে সবুজের ছোঁয়া থাকলেও ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট ছিল বেশ ভালো। বল ব্যাটে এসেছে
দারুণভাবে। প্রিটোরিয়াস ও ম্যাককলাম তা কাজে লাগান। ২১তম ওভারে সুমনের অফ স্টাম্প ঘেষা ডেলিভারিতে
৪১ রানে ম্যাককলামের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।দ্বিতীয় উইকেটে স্টিভেন ডোহেনির সঙ্গে প্রিটোরিয়াস যোগ করেন আরও ৮৫ রান। দারুণ
খেলতে থাকা ডোহেনি ৩৯ বলে ৩৭ করে আউট হন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের বলে লং অনে
ক্যাচ দিয়ে।লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির আশায় থাকা প্রিটোরিয়াস উইকেট ছুঁড়ে আসেন
ওই ওভারেই। রকিবুলের লেগ স্টাম্পে থাকা বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। ৯
চার ও ১ ছক্কায় ১২৫ বলে তার রান ৯০।সেখান থেকে দলকে আড়াইশ রানের সংগ্রহ এনে দেন হ্যারি টেক্টর, শেন গেটকেট ও গ্যারেথ
ডেলানি। ২৯ বলে ৩১ করেন অধিনায়ক টেক্টর, ২৫ বলে ২৯ গেটকেক। দুজনই আউট হন একইভাবে। মুকিদুল
ইসলামের স্লোয়ারে স্কুপ খেলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন টেক্টর, সুমনের স্লোয়ারে একই
পজিশনে ধরা পড়েন গেটকেক।শেষ দিকে ডেলানি করেন ৮ বলে ১৮। শেষ ৫ ওভারে আইরিশরা তোলে ৫৫ রান। বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান ৩৯ রানে নেন ২ উইকেট। পেসার সুমন খান ২ উইকেট নেন
৫১ রানে। রান তাড়ায় তানজিদ হাসান ও সাইফ হাসানের ব্যাটে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। তানজিদ বরাবরের মতোই আত্মবিশ্বাসী শুরু করে বড় করতে
পারেননি ইনিংস। প্রিটোরিয়াসের অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে আলগা শটে কাভারে
ক্যাচ দিয়ে থামেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এরপর সাবধানী ব্যাটিংয়ে দলকে টানেন সাইফ ও মাহমুদুল হাসান। শুরুতে দারুণ কয়েকটি
ড্রাইভ খেললেও পরে সাইফ একটু গুটিয়ে যান। ইনিংস বড় করতে পারেননি তাতেও। তার ইনিংস শেষ
হয় হতাশাজনক শটে। শেন গেটকেটের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড
হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চারে নেমে রানের গতিতে কিছুটা দম দেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। মাহমুদুলের সঙ্গে দ্রুতই
জমে যায় তার জুটি। তবে ইয়াসিরের শেষটাও হতাশার। লেগ স্পিনার বেন হোয়াইটকে স্লগ বা স্লাইসের মতো কিছু
খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি শর্ট থার্ড ম্যানে। ৩৪ বলে ৩১ রানে তার বিদায়ে ভাঙে ৭৭ রানের
জুটি।
ম্যাচ শেষে দুই দলের ক্রিকেটারদের করমর্দন।
এক প্রান্ত আগলে রাখা মাহমুদুলকেও পরে থামান হোয়াইট। ৯৫ বলে ৫ চারে ৬৬ রানে ফেরেন
তিনি।দ্রুত ২ উইকেট হারানো দলকে আবার পথে ফেরান তৌহিদ হৃদয় ও শামীম। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের
একসময়কার দুই সতীর্থ গড়েন ৪২ রানের মূল্যবান জুটি। উইকেট বিলিয়ে আসার মিছিয়ে সামিল হন হৃদয়ও। জশ লিটলের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ফুল
লেংথ বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি (৩১)। আকবর আলি রান আউটে ফেরেন খালি হাতেই।সেখান থেকে সুমনকে নিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন শামীম। শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন ছিল
৪১ রান। প্রিটোরিয়াসকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কার পর লিটলকে স্কুপ করে ছক্কা মেরে শামীম
ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৭ বলে। ম্যাচের সেরা তিনিই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:আয়ারল্যান্ড উলভস: ৫০ ওভারে ২৬৩/৭
(ম্যাককলাম ৪১, প্রিটোরিয়াস ৯০, ডোহেনি ৩৭, টেক্টর ৩১, ক্যাম্পার ৪, গেটকেট ২৯, ডেলানি
১৮, অ্যাডায়ার ৩*; মুকিদুল ১০-০-৬২-১, সুমন ৯-১-৫১-২, শফিকুল ১০-০-৫৬-১, রকিবুল ১০-০-৩৯-২,
শামীম ২-০-১০-০, সাইফ ৯-০-৪০-০)
বাংলাদেশ ইমার্জিং দল: ৪৯.৪ ওভারে
২৬৪/৬ (সাইফ ৩৬, তানজিদ ১৭, মাহমুদুল ৬৬, ইয়াসির ৩১, হৃদয় ৩১, শামীম ৫৩*, আকবর ০, সুমন
১১*; লিটল ১০-০-৫৬-১, অ্যাডায়ার ৯.৪-০-৬৪-০, প্রিটোরিয়াস ৯-১-৪০-১, হোয়াইট ১০-০-৪৫-২,
গেটকেট ২-০-১৫-১, ডেল্যানি ৯-০-৩৫-০)
ফল: বাংলাদেশ ইমার্জিং
দল ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে
বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ : শামীম হোসেন।