নিখোঁজের এক যুগ পর ভারত থেকে দেশে ফিরলেন দুই বাংলাদেশি
Published : Saturday, 13 March, 2021 at 12:00 AM
প্রায় একযুগ আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হন শায়েস্তারা বেগম (৫০)। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন স্বজনরা। কিন্তু শুক্রবার (১২মার্চ) দুপুর ১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। এছাড়া সমীর কুমার মজুমদার (৩৩) নামে আরেক ব্যক্তিও একই সময় নিখোঁজ হন। তিনিও ভারত থেকে আজ দেশে ফিরেছেন। মানবাধিকারকর্মী সৈয়দ খায়রুল আলমের প্রচেষ্টায় এই দুই নাগরিক দেশে ফেরেন।
ধারণা করা হচ্ছে, মানবপাচারের শিকার হয়ে এই দুজন ভারতে গিয়েছিলেন। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাদের আদালতের নির্দেশে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার দুপুরে দুই দেশের শূন্যরেখায় আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মো. জোবায়েদ হোসেন তাদের আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নূরে আলমের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তাদের নিজ নিজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
জানা য়ায়, শায়েস্তারা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার দেলী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। আর সমীর কুমার মজুমদার ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ঝুমারকান্দা গ্রামের শশধর মজুমদারের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তারা আগরতলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকাৎসাধীন ছিলেন। পরে মানবাধিকারকর্মী খায়রুল আলমের মাধ্যমে তাদের সন্ধান পান পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘদিন পর নিজ দেশে ফিরে স্বজনদের কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন শায়েস্তারা ও সমীর। দুজনেই মানবাধিকারকর্মী খায়রুল ও দুই দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
শায়েস্তারা বেগমের ভাই জয়নাল আবেদীন আখাউড়া স্থলবন্দরে সাংবাদিকদের জানান, গত দুই বছর আগে মানবাধিকারকর্মী খায়রুল আলমের মাধ্যমে শায়েস্তারা বেগমের খোঁজ পান তারা। দীর্ঘদিন পর বোনকে পেয়ে আপ্লুত জয়নাল দুই দেশের সরকার ও মানবাধিকারকর্মী খায়রুলকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে সমীর কুমার মজুমদারের ছোটভাই অমীর মজুমদার জানান, ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তার বড়ভাই সমীর। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন। দেড় বছর আগে জানতে পারেন তার ভাই আগরতলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ভাইকে ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দিত বলে জানান তিনি।
মানবাধিকারকর্মী সৈয়দ খায়রুল আলম বলেন, ‘আমি আমার নিজ এলাকার (নড়াইল) একটি মেয়েকে খুঁজতে আগরতলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে সমীর ও শায়েস্তারার খোঁজ পাই। পরে তাদের ঠিকানা জোগাড় করে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে দুই দেশের হাই কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি নিজেও অনেক আনন্দিত।’
আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মো. জোবায়েদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মোট ২৪ জন বাংলাদেশি আগরতলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তারা কীভাবে ভারতে এসেছেন, সেটি জানা যায়নি। তারা বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাফেরা করার সময় পুলিশ তাদের আটক করে। পরে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে দুই জনকে হাসপাতাল ছাড়পত্র দেওয়ায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদের পরিবারের সন্ধান পেলে একই প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’