ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কন্যা সন্তান হওয়ায় স্বামীর বাড়ি ছাড়তে হলো রোকসানাকে
Published : Saturday, 13 March, 2021 at 12:00 AM
কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় এক গৃহবধূকে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই না পেয়ে পুলিশের সহায়তায় নবজাতক সন্তানসহ বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন গৃহবধূ রোকসানা বেগম।
বৃহস্পতিবার বিকালে তিন দিন বয়সী নবজাতক ও তার মা রোকসানার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রতাপ ঘোড়ামারা গ্রামে।
তবে স্বামী রাজা মিয়া দাবি করেছেন, তিনি রোকসানা বেগমকে তালাক দিয়েছেন। তাই তাকে সন্তানসহ বাড়িতে উঠতে দেননি।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রসব ব্যাথা শুরু হলে স্বামীর বাড়ি থেকেই ফুফি শাশুড়ির সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রোকসানা বেগম।
রোকসানা বেগম জানান, তার বাবার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধনিয়ারকুড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে। পারিবারিকভাবে গত বছরের ১০ জুন সাদুল্যাপুর উপজেলার প্রতাপ ঘোড়ামারা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এটি তাদের উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে।
তিনি জানান, বিয়েল প্রথম মাসেই তিনি গর্ভধারণ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তখন থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে সন্দেহ করে মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। এরপর থেকে এভাবেই তিনি শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন।
রাজা মিয়া দাবি করেন, বিয়ের কয়েকদিন পরই তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী গর্ভধারণ করেছেন। তখন তার চলাফেরা কিছুটা বেপরোয়া ভাব দেখেন। এজন্য তিনি বিয়ের ২২ দিন পরই ২০২০ সালের ২ জুলাই রোকসানা বেগমকে তালাক দিয়েছেন। চাকরির সুবাধে তিনি যেহেতু ঢাকায় থাকতেন, তাই তালাক দেওয়ার পরও রোকসানা বেগমকে নিজের বাড়িতেই থাকতে দিয়েছেন।
রোকসানা বেগম জানান, তার স্বামী রাজা মিয়া সবসময়ে পুত্র সন্তান আশা করতেন। কিন্তু তার কন্যা সন্তান হবে জানতে পেরে তখন থেকেই খারাপ আচরণ শুরু করেন। স্বামীর বাড়িতেই থাকা অবস্থায় গত ৮ মার্চ প্রসব ব্যাথা শুরু হলে ফুফি শাশুড়ি কোহিনুর বেগম তাকে রংপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তিনি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান প্রসব করেণ। হাসপাতালে তিন দিন থাকার পর ১১ মার্চ বিকালে সন্তানসহ স্বামীর বাড়ীতে আসলে তাকে উঠতে দেননি শ্বশুর মহব্বর আলী। এসময় তিনি জানান, ছেলে রাজা মিয়া তাকে তালাক দিয়েছেন। তাই এই বাড়িতে আশ্রয় তার হবে না।এরপর শ্বশুর বাড়িতে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে যান।
এই বিষয়ে জানতে মহব্বর আলীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
শাশুড়ি আসমা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই রাজা মিয়ার সঙ্গে স্ত্রী রোকাসানা বেগমের ঝামেলা শুরু হয়। তখন ছেলে রাজা মিয়া তাকে তালাক দিয়েছেন বলে শুনেছেন।
সাদুল্যাপুর থানার ওসি মাসুদ রানা জানান, ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। সেখানে গিয়ে তালাবদ্ধ একটি বাড়ির সামনে নবজাতক সন্তানসহ মা রোকসানা বেগমকে পাওয়া যায়। ওই সময় রোকসানা বেগমের স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় নবজাতকের সুস্থতার বিষয় চিন্তা করে রোকসানা বেগমকে তার বাবার বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পরে নবজাতকসহ রোকসানা বেগমকে নিয়ে যান তার মা ফাতেমা বেগম। এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট এমএ মাজেদ সরকার বলেন, গর্ভবতী অবস্থায় কোন নারীকে তালাক দেওয়া যাবেনা। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কেউ গর্ভবতী নারীকে তালাক দিলে সেটি কার্যকর হবে না। যদি তালাক দিতেই হয় তবে সন্তান প্রসবের তিন মাস পর তালাক দিলে সেটি কার্যকর হবে। রাষ্টীয় এই নিময় অনুযায়ী রোকসানা বেগমের তালাক কার্যকর নয়। যদি তার স্বামী তালাক দিয়েও থাকেন তবে সেটি এখনো কার্যকর হয়নি।
সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুরঞ্জন কুমার বলেন ‘মায়ের গর্ভে সন্তান মেয়ে হবে, নাকি ছেলে হবে’ সেটির জন্য বাবায় দায়ী। এজন্য মাকে কোন প্রকার দোষারোপ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে রোকসানা বেগমকে দোষ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য কোন মাকেই এককভাবে দায়ী করা ভুল।'