দগ্ধদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
Published : Saturday, 13 March, 2021 at 12:00 AM
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বাসে অগ্নিকা-ের ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গোলাম হোসেন নামের ৭৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির শরীরের ৩১ শতাংশ পুড়ে গেছে, শ্বাসনালীতেও তি হয়েছে। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শামসুন্নাহার (৬৫) ও রওশন আরা (৪৫) নামে আরও দুজন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের শরীরের ১০ থেকে ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে।
“আমাদের এখানে ১৮ জন এসেছিলেন। তাদের ১৪ জনকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তারা পরে আমাদের বহির্বিভাগে দেখাবেন।”
এছাড়া ওমর ফারুক নামে আরেকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে নজরুল বলেন, “উনার বার্ন পার্সেন্টেজ কম, কিন্তু বুকে ব্যথাসহ অন্যান্য জটিলতা আছে। তাই তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করেছি।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা থেকে মতলবগামী একটি বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই একজন শিশুসহ দুজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। দগ্ধ হন ২২ জন। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়।বাকিদের চিকিৎসা দেওয়া হয় দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
নিহতরা হলেন দাউদকান্দির তিনপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৭০) এবং বনুয়াকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সাফিন (৪)।
নিহত রফিকুল ইসলাম বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি শামছুন্নাহারের স্বামী। তাদের পরিবারের মোট আটজন ওই বাসে ছিলেন, বাকিরাও কমবেশি আহত হয়েছেন।
তাদের ছেলে উজ্জ্বল মিয়া ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্ত্রী-সন্তানসহ আটজন ঢাকা থেকে দাউদকান্দি উপজেলার বড়কোঠা ইউনিয়নের তিন পাড়া গ্রামে নিজেদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
উজ্জ্বল বলেন, “বাসে যখন আগুন ধরে গেল, কী করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি বাসের জানালা ভেঙে লাফ দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। পরে স্ত্রী-সন্তানদের বের করে আনলাম। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি বেরিয়ে আসতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। সে কারণে তাদের অনেকটা পুড়ে যায়। বাবাকে তো আর বাঁচানো গেল না। ডাক্তার বললেন মায়েরও ১০ শতাংশ পুড়েছে।”
ওই বাসের যাত্রী গোলাম হোসেনের সাথে তার মেয়ে শাহীনুর আক্তার (৩২) ও নাতনী সানজানাও (১৩) অগ্নিদগ্ধ হন। প্রাথমিক চিতিৎসা শেষে তাদের অবস্থা এখন ভালোর দিকে।
শাহীনুর আক্তার বলেন, “বাবা অসুস্থ ছিলেন। ঢাকায় ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। দাউদকান্দিতে গিয়ে বাসটা গ্যাস ভর্তি করে কিছু দূর যাওয়ার পর গৌরীপুর স্ট্যান্ডে ব্রেক করল, তখন হঠাৎ বাসে আগুন লেগে গেল।
“তখন যে যার মত করে জানালার কাচ ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। মেয়েকে নিয়ে আমিও জানালা দিয়ে লাফিয়ে নেমে প্রাণে বেঁচেছি। তবে বাবা বৃদ্ধ মানুষ, তাৎণিকভাবে বেরিয়ে আসতে পারেননি।”
বাবাতে হারানো উজ্জ্বল মিয়ার ধারণা, ওই বাসের ফিটনেস ছিল না। ওই অবস্থায় যাত্রী ভর্তি অবস্থায় গ্যাস নেয় চালক।
“রাস্তায় আমাদের জীবন নিরাপদ নয়। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় অবাধে চলছে। অতিরিক্ত যাত্রী তোলে। গাড়িওয়ালাদের একটা বাজে স্বভাব, তারা অন্য সময় গ্যাস না ভরে, যাত্রী নিয়ে গ্যাস ভরে। মানুষ মরলে দুয়েক দিন এটা নিয়ে কথা হয়। তারপর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এই দুর্ঘটনার জন্য বাসের কর্তৃপ দায়ী।”