
রীতিমতো
লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত
আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ছয় হাজার ৪৬৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তার
আগের ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৫৮ জনের দেহে। এর আগে
কখনো এত শনাক্তের ঘটনা ঘটেনি। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে একইভাবে। বৃহস্পতিবার
সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৫৯ জন। অথচ এখনো জরুরি
স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার েেত্র মানুষের সচেতনতা বা আগ্রহ খুবই কম দেখা যায়।
তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায় মানুষের আরো বেশি সহযোগিতা
চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আলোচনার সময় তিনি সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে
চলার, নাকে-মুখে গরম পানির ভাপ নেওয়ার, মাস্ক পরাসহ জরুরি
স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ
করেন, প্রথম ঢেউয়ের মতো আমরা দ্বিতীয় ঢেউও সফলভাবে মোকাবেলা করতে সম হব।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে
শনাক্তের হার ছিল ২২.৯৪ শতাংশ। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কিছু ল্যাবরেটরিতে
শনাক্তের এই হার ছিল ২৫ শতাংশের ওপর। তার অর্থ কিছু এলাকায় সংক্রমণের হার
অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই এলাকাগুলোতে অবিলম্বে লকডাউনের মতো কঠোর
পদপে নিতে হবে। সরকার এর মধ্যে কিছু পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা
করেছে। ১১ এপ্রিলের ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা ও
রংপুরের চিড়িয়াখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয়
কারিগরি পরামর্শক কমিটি বইমেলাসহ বিভিন্ন মেলা, সমাবেশ, সামাজিক
অনুষ্ঠানাদিসহ যেসব আয়োজনে অধিক লোকসমাগম হয় সেগুলো বন্ধ করার সুপারিশ
করেছে। কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া ১৮ দফা নির্দেশনার আলোকে আরো
কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে এবং এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট
কর্মসূচি নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি সরকারি হাসপাতালগুলোর সমতা
বাড়ানো এবং কভিড-১৯ টেস্ট বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে
করছেন, করোনা মোকাবেলায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এবং টিকা প্রদানের হার
দ্রুত বাড়ানো গেলে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ আবার নিয়ন্ত্রণে চলে
আসবে। ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার এখনো অনেক বেশি। তাই তাঁদের দ্রুত
টিকার আওতায় আনা গেলেও মৃত্যুহার অনেক কমানো যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে টিকার
পর্যাপ্ত সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকার
সরবরাহ বাড়াতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি উদ্যোগে টিকা
আমদানিকে উৎসাহিত করতে হবে। একইভাবে জানা বা অজানা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে
নতুন কেউ যাতে আক্রান্ত না হতে পারে সে জন্য কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ওপর
জোর দিতে হবে। সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর
পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। একই
সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিশ্চিত করা ও সেবামূল্য যৌক্তিক করার
উদ্যোগ নিতে হবে।