ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বোঝা চাই
Published : Saturday, 24 April, 2021 at 12:00 AM
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বোঝা চাইসিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ||
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের একপাশে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, অন্যপাশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। একটির ঐতিহ্য অন্যটির সম্ভাবনা দুটিই এ অভ্যুত্থানের ভিতরে ছিল। ঐতিহ্যটি অবশ্য আরও পুরনো; ১৮৫৭-তে উপমহাদেশে সিপাহি অভ্যুত্থান হয়েছিল, পাশাপাশি কৃষক বিদ্রোহ ঘটেছে, সাঁওতাল বিদ্রোহের কথা আমরা জানি, বাধাবিঘœ সত্ত্বেও ঐতিহ্যটা প্রবহমান ছিল। ১৯৪৫-এর শেষ দিকে, বিশেষভাবে বাংলায় একটি প্রায়-বিপ্লবী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেটিকে দমন করা হয়েছে প্রথমে নির্বাচন দিয়ে তারপরে দাঙ্গা ঘটিয়ে, এবং আরও পরে সাতচল্লিশের দেশভাগ সম্ভব করে।
বায়ান্নতেও একটা অভ্যুত্থান ঘটে, যার পরিণতিতে চুয়ান্ন সালে নির্বাচন দেওয়া হয় এবং পরে সামরিক শাসন চলে আসে; ওই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেই ছিল ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান। তবে এর গভীরে ছিল আরও এক আকাক্সা। সেটা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বন্ধন থেকে মুক্তির; আন্দোলনকারীদের একাংশের আকাক্সায় উপস্থিত ছিল সমাজবিপ্লবের স্বপ্নও। বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জাতি প্রশ্ন এবং শ্রেণি প্রশ্ন দুটোই মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছিল। বাস্তবে ভারতীয় উপমহাদেশটি ছিল বহুজাতির দেশ; সেখানে একজাতিতত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পথ করে দেওয়া হয়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্বের আবির্ভাবের জন্য, এবং তার পরে, ওই দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই ঘটে সাতচল্লিশের দেশভাগ। বলা বাহুল্য, তাতে জাতি প্রশ্নের সমাধান হয়নি- না ভারতে না পাকিস্তানে। পাকিস্তানে বাঙালির সংখ্যা ছিল শতকরা ৫৬; কিন্তু শাসন চালু হয়েছিল অবাঙালিদের; রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল ওই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই একটি অভ্যুত্থান। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করবার দাবি, ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পেছনে পাকিস্তানের পূর্ব ভূখন্ডে বসবাসকারীরা ছিল ঐক্যবদ্ধ; তদুপরি ভাষা যেহেতু কোনো শ্রেণির একচেটিয়া অধিকার ও সম্পত্তি নয়, তাই ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা সকল শ্রেণির মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের অব্যাহত সংগ্রামেরও একটি অংশ ছিল বইকি। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার প্রশ্ন এবং সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সমান অধিকারের প্রশ্ন, একত্র হয়ে গিয়েছিল।
ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানে তাই জাতি ও শ্রেণি উভয় প্রশ্নেরই মীমাংসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। আন্দোলনকে প্রথমে মনে হয়েছিল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, কিন্তু অচিরেই বোঝা গিয়েছিল যে পূর্ববঙ্গের মানুষ কেবল যে সামরিক শাসনের অবসান চায় তা নয়, পাকিস্তানি রাষ্ট্র থেকেও তারা মুক্তি চায়। স্বায়ত্তশাসনের অভাবের দরুন অসন্তোষ অবশ্য শুরু থেকেই বলা চলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই ছিল। ১৯৪০ সালের সেই লাহোর প্রস্তাবে একটি নয়, একাধিক রাষ্ট্রের কথাই বলা হয়েছিল। পূর্ববঙ্গের বাঙালি মুসলমান পাকিস্তানকে সেভাবেই দেখত। কিন্তু তার বদলে প্রতিষ্ঠা ঘটল অখ- ও এককেন্দ্রিক একটি আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের, যেটিকে আরও বেশি এককেন্দ্রিক করার জন্যই একটি মাত্র রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে উর্দুকে চালু করার প্রস্তাবটা এসেছিল। পূর্ববঙ্গের মানুষ স্বভাবতই হতাশ ও বিুব্ধ হয়েছে, এবং তারা আন্দোলনে নেমেছে। পঞ্চাশ সালে লিয়াকত আলী খান সংবিধানের যে অগণতান্ত্রিক মূলনীতিগুলো ঘোষণা করেন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে; দাবি উঠেছে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হোক। বায়ান্নতেও ওই দাবি ছিল, ঊনসত্তরে এসে তা আরও প্রবল হলো। এবং আন্দোলন যখন প্রবল হয়ে উঠল তখন বোঝা গেল স্বায়ত্তশাসন নয়, মানুষ আসলে স্বাধীনতাই চায়।
যে প্রশ্নটা সংগত, যদিও কিছুটা প্রচ্ছন্নভাবে ছিল, সেটা হলো এবারের স্বাধীনতা কাদের নেতৃত্বে অর্জিত হবে- আগের বারের মতো জাতীয়তাবাদীদেরই, নাকি সমাজতন্ত্রীদের? আন্দোলনে উভয় ধারাই ছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যে তরুণরা অংশ নেয় অস্পষ্ট রূপে হলেও তারা জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সমাজতন্ত্রকেও যুক্ত করতে চেয়েছে; কিন্তু চুয়ান্নর নির্বাচনে যে রাজনৈতিক নেতারা সামনে চলে এসেছিলেন তাঁরা অধিকাংশই জাতীয়তাবাদী ধারারই ছিলেন; নির্বাচনে সমাজতন্ত্রীরা অখ- বঙ্গের ছেচল্লিশ সালের নির্বাচনে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি, চুয়ান্নতেও পারলেন না; পারবার অবশ্য কথাও ছিল না। কিন্তু ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানে জাতীয়তাবাদীদের পাশাপাশি সমাজতন্ত্রীরাও সামনে চলে এসেছেন। বস্তুত পরিমাণে ও গুণে তাঁরাই ছিলেন অধিক শক্তিশালী; কিন্তু নেতৃত্ব তাঁরা ধরে রাখতে পারেননি।
আওয়াজ ছিল দুই ধরনেরই- ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/পূর্ববাংলা স্বাধীন কর’, এবং ‘শ্রমিক কৃষক অস্ত্র ধর/পূর্ববাংলা স্বাধীন কর’; আবার ‘তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা মেঘনা যমুনা’, এবং পাশাপাশি ‘তোমার আমার ঠিকানা/খেত-খামার আর কারখানা’। কিন্তু সমাজতন্ত্রীরা নিজেরাই তত দিনে দুই ভাগ হয়ে গেছেন। একদল পরিচিত হয়েছেন মস্কোপন্থি হিসেবে, অন্য দলের পরিচিতি দাঁড়িয়েছে পিকিংপন্থি বলে। পিকিংপন্থিদের তুলনায় মস্কোপন্থিরা আপসপন্থি ছিলেন; কিন্তু পিকিংপন্থিরা ছিলেন কয়েকটি উপদলে বিভক্ত, উপরন্তু তাঁদের ওপর আবার এসে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ির ঢেউ। তাঁদের কেউ কেউ সবরকমের গণসংগঠন ও শ্রেণিসংগঠন ভেঙে দিয়ে সরাসরি শ্রেণিসংগ্রামের অর্থাৎ ‘শ্রেণিশত্রু’ খতম করার এবং গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করার অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব পথ ধরেছিলেন। রাজনৈতিকভাবে প্রধান দ্বন্দ্বটা তত দিনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি রাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ববঙ্গবাসীর; সে দ্বন্দ্ব বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের ‘জয় বাংলা’ আওয়াজে যেমন স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছিল সমাজতন্ত্রীদের ‘জয় সর্বহারা’ আওয়াজে তেমনভাবে আসেনি; যদিও দুই আওয়াজের ভিতর বড় একটা বিরোধ ছিল না, সর্বহারার জয় সুনিশ্চিত করবার জন্যই জয় বাংলার অধিকার কায়েম করা আবশ্যক ছিল। জাতি প্রশ্নের মীমাংসা শ্রেণি প্রশ্নের মীমাংসা করবার পথ করে দিতে পারত। ওদিকে কি মস্কোপন্থি কি পিকিংপন্থি উভয় ধারারই নেতৃত্বে ছিলেন মধ্যবিত্তরাই, তাঁদের কণ্ঠে ‘জয় সর্বহারা’ আওয়াজটি উঠতে চায়নি, উঠলেও তেমন জোরদার হয়নি, এবং তাঁদের ঠিকানা যে খেতখামার কলকারখানা সেটাও খুব পরিষ্কার ছিল না; অন্যদের কাছে তো নয়ই, তাঁদের নিজেদের কাছেও নয়। বাঙালিকে বীর বলা ও অস্ত্র তুলে ধরে বীরত্বকে প্রদর্শিত করার ডাকের তুলনায় দূরবর্তী শ্রমিক-কৃষককে অস্ত্র ধরতে বলার ভিতর জোরটা কিছু কমই থাকবার কথা। ছিলও। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে তাই জাতীয়তাবাদীদেরই। চরিত্রগতভাবেই তাঁরা বিপ্লবী ছিলেন না, ছিলেন আপসপন্থি এবং পুঁজিবাদী উন্নতিতে আস্থাশীল সামরিক শাসক আইয়ুব খান যখন সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন এবং তাঁরই অধীন সেনাপ্রধান ও তাঁর তুলনায় নি¤œমানের এক ব্যক্তি, ইয়াহিয়া খানকে মতায় বসিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে পড়বার হাত থেকে রা করবার ব্যবস্থা করলেন, এবং মতা পেয়ে ইয়াহিয়া খান যখন নির্যাতনমূলক পথ না ধরে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন তখন বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁরা স্বস্তি পেলেন এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রমতায় যাওয়ার পথ মোটামুটি উন্মুক্তই দেখতে পেলেন।
রাষ্ট্রমতায় অধিষ্ঠিতদের জন্য নির্বাচন দিয়ে জনরোষ শান্ত করা ছিল পুরনো কৌশল। ছেচল্লিশে নির্বাচন দিয়ে তারা একটি প্রায়-বিপ্লবী পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছিলেন; চুয়ান্নতে নির্বাচন দিয়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ভিতর দিয়ে শক্তিশালী হয়ে-ওঠা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে বিভক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। সত্তরে নির্বাচন দেওয়ার পেছনেও হিসাবটা ছিল ওই একই রকমের। আন্দোলনকারীরা বিভক্ত হয়ে যাবে, এবং মতাসীনরা রা পাবে, আশা ছিল এইটাই। তাদের সে হিসাবটা মেলেনি; কারণ আগের আন্দোলনগুলোর ভিতরকার শক্তিটাকে ধারণ করে ও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক বেশি ুব্ধ হয়ে কেবল মধ্যবিত্ত নয়, সকল শ্রেণির মানুষই তত দিনে বুঝে নিয়েছিল যে পাকিস্তান নামের শোষণমূলক রাষ্ট্রে তাদের জন্য আসলে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। শত্রু হিসেবে অবাঙালি শাসকদের তাদের চেনাটাও আর অসম্পূর্ণ ছিল না।
ঊনসত্তরের ওই অভ্যুত্থান কেবল শাসক পরিবর্তনের নয়, বিপ্লবের কাছাকাছিই পৌঁছে গিয়েছিল। আন্দোলনের সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মণি সিংহ জেলে ছিলেন, অভ্যুত্থানের ফলে তিনি মুক্ত হন; কারামুক্ত হয়ে ওই বছরই পয়লা মের এক ঘরোয়া সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘২৪ জানুয়ারির মহান গণঅভ্যুত্থান আগামী বিপ্লবের ড্রেস রিহার্সেল।’ হ্যাঁ, হতে পারত, কিন্তু হয়নি।
জানুয়ারির ২৪ তারিখে অভ্যুত্থান একটি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছিল। বিপ্লবকে সম্ভব করে তোলার েেত্র অন্য অনেকের তো বটেই কমরেড মণি সিংহের নিজের দলের, কমিউনিস্ট পার্টিরই গড়িমসি ছিল। সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান আসগার খান ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের রাকামীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের এই রূপ বিপ্লবের আশঙ্কা আছে বলিয়াই আমি সতর্ক করিয়া আসিতেছিলাম। আইয়ুব সরকারই এজন্য দায়ী। আইয়ুব সরকারের অপসারণ দরকার। [...] বিপ্লব চলিতেছে [...] এখনো সময় আছে।’ তাঁর উদ্বেগটা ছিল পাকিস্তানের অখ-তা নিয়ে; আশঙ্কা করছিলেন যে পূর্ব পাকিস্তান ‘বিপ্লব’ ঘটিয়ে স্বাধীন হয়ে যাবে। তিনি এটা বোঝেননি যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের যে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী চরিত্র তাতে আইয়ুবকে সরিয়ে অন্য কাউকে বসালে পাকিস্তানকে রা করা যাবে না; আইয়ুব গেলে ইয়াহিয়া আসবেন, ইয়াহিয়ার পরে আসবেন জুলফিকার আলী ভুট্টো, তাঁরপর জিয়াউল হক, এবং পাকিস্তানকে ক্রমাগত অধঃপতিত করার কাজে আগের জনের তুলনায় পরের জনের ভূমিকা মোটেই খাটো হবে না। তখনকার পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকা সাধারণত পূর্ববঙ্গের হয়েই কথা বলত, বলতে গিয়ে সরকারের রোষে পড়ে পত্রিকা একবার নিষিদ্ধ হতে হয়েছে ও সম্পাদক আবদুস সালামকে কারাযন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়েছিল; কিন্তু পত্রিকার মালিক হামিদুল হক চৌধুরী, যিনি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’র জন্য আইয়ুববিরোধী ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটিতে (ড্যাক) সক্রিয় ছিলেন, সামাজিক বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখে তিনি বরং আসগার খানের চাইতেও অধিক শঙ্কিত হয়ে থাকবেন, যেজন্য তাঁর পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘ছাত্রনেতারা যেন সামাজিক বিপ্লব সাধনের আহ্বান না দেয় এবং এ সংগ্রামকে যেন শেষ যুদ্ধে পরিণত না করে।’ দৈনিক ইত্তেফাক ছিল আগাগোড়াই স্বায়ত্তশাসনের প,ে আইয়ুব-মোনায়েমের শাসনে পত্রিকা নিষিদ্ধ, ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত ও সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া কারারুদ্ধ হয়েছিলেন; মুক্ত হয়ে সে-পত্রিকাও কিন্তু উগ্রপন্থার, বিশেষ করে মওলানা ভাসানী-ঘোষিত ঘেরাও ও কথিত ‘জ্বালাও পোড়াও’ নীতির সমালোচনা করেছে। ইত্তেফাকের ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’তে ‘বামপন্থিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তৎপরতার বিরুদ্ধেও বলা হয়েছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে সামরিক আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ পর্যন্ত দেয়।
ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিত আলোচনাই দরকার। তাতে তাঁকে এবং ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান উভয়কেই বুঝতে সুবিধা হবে।
বস্তুত এ অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে মওলানা ভাসানীর নাম বারবারই আসবে। তিনিই ছিলেন এর প্রধান সংগঠক এবং মূর্ত প্রতীক। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৬৮ সালের শেষে ৬ ডিসেম্বর লাটভবন ঘেরাও এবং পরদিন হরতাল ডাকা হয়, নির্দিষ্ট অর্থে যেখান থেকে ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের সূত্রপাত। আরও বড় সত্য হচ্ছে এটি যে, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের ভিতরে যে সমাজতান্ত্রিক আকাক্সাটা ছিল সেটিকে তিনি পুরোপুরি ধারণ করতেন।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।