ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মতিন খসরু অস্ত যাওয়া সূর্যে, স্নিগ্ধতা ছড়াবেন
Published : Tuesday, 4 May, 2021 at 12:00 AM
মতিন খসরু অস্ত যাওয়া সূর্যে, স্নিগ্ধতা ছড়াবেনরেজাউল করিম শামিম ।।
মৃত্যু মানেই হারিয়ে যাওয়া। অস্ত যাওয়া সূর্য দিনের আলো নিভিয়ে চলে যায়। কিন্তু ফিরে, নতুন আলো নিয়ে। মৃত্যু যাকে নিয়ে যায় তাঁকে চিরদিনের মতোই নিয়ে যায়। এ চলে যাওয়া অনেকের েেত্রই মেনে নিতে কষ্ট হয়। চলে যাওয়া মানুষের সান্নিধ্য, কর্মকা-, অন্যের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া কিংবা আলোচিত কর্মের স্বারই বার বার তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ভুলতে দেয়না তঁকে, তাঁর কর্মকে।
তেমনি একজন হলেন খসরু ভাই, আবদুল মতিন খসরু। নিজের কর্মের মাঝেই তিনি একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। এই হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত করে তুলেছেন নিজেকে। ওনার কর্মপরিধী অনেক বিস্তৃত। সেদিন উনি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে, এই পৃথিবী ছেড়ে চিরদিনের মতই। আর ওনার এই চলে যাওয়া, মহাপ্রস্থান,ওনাকে আরো গভীর ভাবে চিনিয়ে দিয়ে গেলো। এই করোনাকালীন ওনার জানাজায় মানুষের ঢল, বিভিন্নজনের আহাজারি আর স্মৃতিচারণের মধ্যদিয়ে উঠে আসা কথার মালা ওনাকে আরো নীবিরভাবে তুলে ধরেছে, করেছে আলিঙ্গন।
এমনি একজন ব্যক্তিত্বের সাথে আমার সম্পর্কটা রাজনৈতিক। তা সত্ত্বেও ঘনিষ্টতা যেন আরো অনেক বেশি একান্ত। আপনজনের মতোই। আজ সবকিছুই স্মৃতি। সেই স্মৃতির সাগরে ডুবরি নামালে, অতল গভীর থেকে উঠে আসবে যা কিছু জ্বলজ্বল করা কথা-তার কিছু তুলে ধরার চেষ্টা। বিশেষ করে সেই‘৯১ সালের আলোচিত নির্বাচনের কথা। সেসময় সারা দেশের মতোই কুমিল্লাতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মহাবিপর্যয় ঘটে। সেই নির্বাচনে কুমিল্লার রাজনীতিতে অপরিহার্য নেতা কালাম মজুমদারসহ অনেকেই বিজয়ী হতে পারেননি। শুধুমাত্র বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া থেকে খসরু ভাই বিজয়ী হয়েছিলেন। ওনাকে আমরা ক’জন উদ্যোগী হয়ে সংবর্ধনাও দিয়েছিলাম টাউন হলে। জেলা আওয়ামী লীগের তখন হযবরল অবস্থা। আর তার কিছুদিন পরেই জেলা আওয়ামী লীগ কমিটি ভেঙ্গ দেয়া হয়। কেন্দ্র থেকে আহবায়ক কমিটি গঠেন করা হয়। সে কমিটিতে খসরু ভাইকে সদস্য সচিব করা হয়। সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটিতে আমি ছিলাম সমাজসেবা সম্পাদক। হয়তো সেই সুবাদেই আমাকে আহবায়ক কমিটিতে সদস্য রাখা হয়। জেলা কমিটির সভার নোটিশ পাঠানো থেকে শুরু করে সভার কার্যবিবরণী লেখা এবং পরবর্তী সভায় পাঠের দায়িত্ব খসরু ভাই আমাকে দিয়েছিলেন। অবশ্য কালাম ভাই যখন সাধারণ সম্পাদক, তখনো কার্যবিবরণী আমাকেই লিখতে হয়েছে। সে সবের মধ্যদিয়েই খসরু ভাইয়ের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা। ওনার সাথে কাজ করতে গিয়ে দারুণ একটা আত্মতুষ্টি অনুভব করতাম। তিনি কাজের েেত্র ছিলেন খুবই নিষ্ঠাবান। সহজেই সহযোগিতা-সমঝোতার মাধ্যমে কাজ সুসম্পন্ন করতে এবং করিয়ে নিতে পারতেন। যেন অদৃশ্য কোন দেবদূত।
কালাম ভাইয়ের মতো খসরু ভাইও,সংসদীয় চর্চায় ছিলেন নিবেদিত। ৯১ সালে তিনি প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে পার্লমেন্টের কর্মপ্রদ্ধতি অর্থাৎ রুলস এন্ড প্রসিজিউ প্রেক্ট্রিস থেকে শুরু করে অন্যান করণীয় গুলো সহজেই রপ্ত করে নেন। এত্রেও ওনাকে সহযোগিতা করার সুযোগ আমার হয়েছিলো। এর আগে ‘৮৬ সাল থেকেই আমি সংসদ রিপের্টার হিসাবে কাজ করেছি অনেক সিনিয়ার সাংবাদিকের সাথে। তারও আগে সেই ৭৩ সালেই কালাম ভাইদের সাথে আমার সংসদে থাকার অভিজ্ঞতা ছিলো।
তবে খসরু ভাইয়ের সংসদীয় ভূমিকা স্পরিস্ফুটিত হয় ৯৬ সালে। সে সময়ই আওয়ামী লীগ ৭৫ পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথমবার সরকার গঠন করেন। আর সেই সরকারের মন্ত্রী পরিষদে, স্থান পান খসরু ভাই। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের। আর সেই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীও ছিলোনা। ফলে পুরো মন্ত্রণালয়ের গুরু দায়িত্ব ওনাকে সামলাতে হয়েছে।
এ েেত্র থসরু ভাইকে অত্যন্ত ভাগ্যবানও বলতে হয়। তবে নিজ গুণে তিনি প্রাপ্য সুযোগকে নিজের প্রতিভা-জ্ঞান-বুদ্ধির সমন্বয়ে যথার্থই কাজে লাগাতে সম হয়েছেনে। সেই মেয়াদে, এমনকি বলা যায় যে খসরু ভাইয়ের জীবদ্দশায় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি তিনি সম্পন্ন করেছেন সবচাইতে সাফল্যের সাথে। এর জন্য তিনি পার্লামেন্টের ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আর তা হলো ‘ইনডেমেনিটি রিপিল বিল’ সংসদে উপস্থাপন এবং তা পাশ করানো। কুখ্যাত এই কালো আইনটির কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার মতো ইতিহাসের সবচাইতে কলঙ্কজন হত্যাকা-ের বিচার বন্ধ হয়েছিলো আর তা বছরের পর বছর। এই আইনটি বাতিল অত সহজ ছিলোনা। বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে আইনটিক বহাল রাখার অপচেষ্টা চালিয়েছে। তারা এমনও প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে, এটি সংবিধানের অংশ। সুতারাং সংবিধান সংশোধন ছাড়া আইনটি বাতিল সম্ভব নয়। সে সময় সংসদে সংবিধান সংশোধন করার মতো আওয়ামী লীগের দুইতৃতীয়াং সংখ্যগরিষ্ঠতা ছিলোনা। তারা এই সুযোগটিও কাজে লাগানোর অপচেষ্টা করে গেছে। বলেছে কথিত এ অধ্যাদেশটি বাতিলের জন্য রেফারেন্ডাম অর্থাৎ গণভোট প্রয়োজন ইত্যাদি।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো সেসময় বিলটি সংসদে উত্থাপনের আগে দু’দিন ধরে খসরু ভাইয়ের সাথে থেকে কাজ করার। জাতির জনকের মর্মন্তুদ হত্যার বিচার করা যাবেনা বলে কথিত অধ্যাদেশটি রহিত করার পরিবেশ সৃস্টি হলো। এ জন্যে ‘ইনেডেমিনিটি রিপিল বিল ১৯৯৬’ নামে আইন পাশের নিমিত্তে খসরু ভাই সংসদে বিল উত্থাপন করলেন। এর পর অনেক ধাপ পার হতে হয়েছে। সংসদের এ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির অনেক সভা ছাড়াও ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম, সৈয়দ রেজাউর রহমান, মাহবুবে আলমসহ অনেক প্রখ্যাত আইনজীবীসহ আইন মন্ত্রণালয়ের দ কর্মকর্তাদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে তারপর আসে সেই মাহেন্দ্রনটি।
১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ছিলো সেই দিন। বিলটি পাশের চূড়ান্ত মুহূর্তে খসরু ভাই বিভিন্ন যুক্তিতর্ক আর আইনের বিভিন্ন রেফারেন্স তুলে ধরে ৩৯ মিনিট ভাষণ দেন। সংসদে তখন পিনপতন নিস্তব্দতায় নিমগ্ন। তখন শুধু খসরু ভাইয়ের আবেগ ভরা দরাজ গলায় দৃঢ় উচ্চারণ। আর সকলের বুকে চেপে রাখা কষ্টের নিঃশ্বাস ওঠা নামার শব্দ। খসরু ভাই এটা প্রমাণ করতে সম হন যে, ‘৭৫ পরবর্তী সরকার বা তাদের রাষ্টপতির অধ্যাদেশ জারি করারই কোন বৈধতাই ছিলোনা। তাছাড়া অধ্যদেশ আকারে জারি করা অধ্যদেশটি নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সংসদে উত্থাপনও করা হয়নি। ফলে এটা বাতিল করা হলে আইনের কোনই ব্যত্যয় ঘটে না। এরপরই শুরু হয় বিল পাশের প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী, সংসদনেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তখন মুখ ঢেকে কাঁদছেন, চোখ মুছছেন। হৃদয়ে তাঁর ভাঙ্গচুরের অভিব্যক্তি ভিআইপি গ্যলারিতে বসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম।
তথাকথিত ইনডেমিনিটি অধ্যদেশটি বাতিলের জন্যে উত্থাপিত বিলের কার্যক্রমটি ১০টা ১০ মিনিটে শেষ হয়। সেসময় বিএনপি-জামায়েতের সদস্যারা সংসদ ছেড়ে নীরবে বেড়িয়ে যান। ফলে,সংসদে উপস্থিত আওয়ামী লীগ, জাতীয় পাটি ও জাসদের সদস্যরা বিলটি সমর্থন করলে বিলটি পাশ হয়। রূপান্তরিত হয় আইনে। আর তারপরই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়।
কিছুদিন পর খসরু ভাই, প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এসময় তিনি আইন অঙ্গনে মানবাধিকার কমিশন গঠন, গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা, বিচার ব্যবস্থা আধুনিকিকরণ, বিবাহ রেজিস্টারে কাজীদের দায়িত্ব, জেলায় পুরোনো আদালত ভবন নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু যুগান্তকারী সংস্কার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন।
১/১১ এর সময় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলে, খসরু ভাইকে দেখেছি নেত্রীর মুক্তির জন্যে অন্যান্য আইনজীবীসহ সংসদ এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে নিয়মিত হাজির থেকেছেন। সেসময় রাজপথেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। খসরু ভাই হাইকোট থেকে বের হওয়া পুলিশে ব্যষ্টিত প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেয়া এবং বক্তব্য রাখতে দেখেছি। আর এমনি ভাবেই খসরু ভাই নিজের যোগ্যতা প্রমানের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে জাতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। খসরু ভাই, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে খুবই প্রিয় এবং বিস্বস্থ হয়ে উঠেছিলেন। এ বিষয়ে একটি ঘটনা বলি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, চট্টগ্রামের পরিচিত মুখ আখতারুজ্জামান বাবুকে কে না চেনে? কালাম ভাইয়ের সুবাদে সেই ৮৬ সাল থেকে আমাদের সাথে ওনার খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিলো। আমার সাথে তখন আমাদের টিটু ভূঁইয়াও সেই বাবু ভাইয়ের এমপি হোস্টেলের কামরায় বহুবার গিয়েছি। বাবু ভাই নির্বাচিত এমপি ছিলেন। অথচ, বিএনপির আমলে ওনার নামে একটি হত্যা মামলায় দিয়ে ওনাকে খুবই হয়রানী করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি গোপনে দেশত্যগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তিনি কুমিল্লা এসে উঠেছিলেন খসরু ভাইয়ের আদালতপাড়া বাড়িতে। ওনার সাথে ছিলেন সভানেত্রীর অত্যন্ত দুজ’ন কাছের লোক। একান্ত সহকারি মৃনাল দা (বর্তমানে তিনি এমপি) এবং মানু মজুমদার। সেই রাতে ঐ বাসায় কালাম ভাই, খসরু ভাই, আমি, খসরু ভাইয়ে ভাই ফেরদৌস, তাজুল ইসলাম জাহাঙ্গির ও টিটু ছিলো। মৃনাল দা তখন একটি ম্যাপ দেখিয়ে ছিলেন। যদিও আমরা ঐ পথটি আগে থেকেই চিনতাম। খসরু ভাইয়ের নেতৃত্বে দু’টি মটর সাইকেলে করে সেরাতে বাবু ভাইকে সীমান্ত পার করে দিয়েছিলাম। পথে অবশ্য টহলরত বিডিআর থামিয়েছিলো। তারা খসরু ভাইকে দেখে সালাম দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলো। খসরু ভাইতো ঐ এলাকার এমপি। ওনাকে তারা চিনতো। দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থার কারণেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব খসরু ভাইয়ের উপর  অর্পন করেছিলো।
খসরু ভাই, খুবই ধার্মীক ছিলেন। ওনার বক্সিবাজার এলাকায় একটি বড় মসজিদ আছে। সেখানে ওনার সাতে অনেক দিন তারাবিসহ বিভিন্ন নামাজ পড়েছি। দেখেছি সবসময় অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তিনি নামাজ আদায় করতেন। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠার জন্যে বরাবরই আল্লাহ্ শুকরিয়া আদায় করতেন। বিভিন্ন সময় একান্ত অবসরে আলাপচারিতার কালে ওনার এই মনস্তাত্বীক দুর্বল দিকটি প্রকাশ হতে দেখিছি। ওনার সাথে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন দূতাবাসের অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ফেরার পথে গাড়িতে বসেও এ সব আলাপ হতো। এপ্রসঙ্গে একটি কথা বলি। খসরু ভাই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর খাবার টেবিলে বসে কথা হচ্ছিলো। খসরু ভাই সবসময় লাল চাল অথ্যাৎ ঢেকিছাটা চালের ভাত খেতেন। তিনি জানালেন আমেরিকাতেও তিনি এ চালের ভাত খেয়েছেন। তারপর যা বললেন তা শুনে ওনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরো গভীর হলো। নিরহঙ্কার খসরু ভাই বললেন,‘হোয়াইট হাউজে পা রাখতেই আমার শরীলডা কাপ দিয়া উঠলো। মিরপুরের খসরা আইজ বিশ্বে সবচেইতে শক্তিশালী ও ধনী দেশের প্রেসিডেন্ট কিনটনের সঙ্গে দেহা করতে হোয়াইট হাউজে খারই রইছে। আল্লা চাইলে কি না করতে পারেন’।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সহজ-সরল খসরু ভাই, সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এবং থানা কমান্ড হওয়া থেকে শুরু তরে ধাপে ধাপে জাতীয় রাজনীতির প্রাদপ্রদীপে উঠে এসছিলেন। তিনি মন্ত্রী ছাড়াও কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ছিলেন আইন বিচার ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। অন্যদিকে পেশাজীবী হিসেবে কুমিল্লা জেলা জজ কোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোটের সিনিয়র এডভোকেট হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন। সেই সুপ্রিমকোট আইনজীবী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচনে সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের ঘোলাটে রাজনীতির সাথে খুব বেশি পেরে উঠেন নি। প্রয়াত নেতা কালাম ভাইয়ের পর, খসরু ভাই আর মুজিব ভাইকে একই পথের সারথি হতে দেখেছি। কিন্তু ঐ কথিত রাজনীতি কুটচাল আর চোরাগলিতে হারিয়ে যেতে দেখিনি। তাঁদের কপাল ভালো যে, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির গ-ি থেকে বেরিয়ে কুমিল্লা দণি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরিমন্ডলে তাঁরা চলে এসছিলেন। ফলে প্রয়াত নেতা কালাম ভাইয়ের মতো শহরের বাইরে জন্মানোর অপরাধে শহরের নেতৃত্বে তাঁদের অপন্থেয় হতে হয়নি। আর সম্ভবত এই কারণেই খোদ রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিলো। নেতার প্রতি,নিজেদের আপন মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে ভীড় জমিয়েছেন। তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়েছে। অথচ তাঁর রাজনীতি করা, পেশাগত কাজ করার চেনাজানা নিজস্ব পরিমন্ডল কুমিল্লা শহরের মানুষের কাছে তিনি মৃত্যুর পরও আসতে পারেননি। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে বাধ্য হয়ে বুড়িচং গিয়ে ওনার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হয়েছে।
স্মৃতিময় এমনি আখ্যান শেষ হবার নয়। খসরু ভাইয়েরাতো প্রজ্বলিত সূর্যের প্রখরতা নিয়ে বিচরণ করেই খ্যতিমান হন। মৃত্যুতে তারা হারিয়ে যাননা। মানুষের কান্না, আহাজারি, ভেজা চোখের পানি ঝাপসা হয়ে আসবে একদিন। একসময় তিনিও স্মৃতি হয়ে যাবেন। তারপরও খসরু ভাইয়ের মতো নেতারা স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে যাবেন। জ্বলজ্বল করে জ্বলবেন আমাদের মানষপটে। সৃজনশীল এমনি কর্মবীরের কর্মতো কনখনো বৃথা যাবার নয়।


লেখক: সাবেক সভাপতি: কুমিল্লা প্রেসক্লাব
সাবেক সভাপতি: কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগ