# স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আবারো নামছে মোবাইল কোর্ট: জেলাপ্রশাসক
# ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সবচেয়ে জরুরি: সিভিল সার্জন
# ভারতের চিত্র আমাদের মাথায় রাখা উচিত: এমপি বাহার
করোনা
মহামারির সময়েও কুমিল্লায় ঈদ মার্কেটমুখী মানুষের ঢল কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ
করা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিনের লকডাউনে নগরীতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা
কমে আসলেও মার্কেটমুখী মানুষের ঢল আবারো তৈরী করছে আশংকাজনক চিত্র। করোনায়
আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবরেও যেন টনক নড়ছে না কারো। ঈদের আরো বেশ কয়েকদিন
বাকি থাকলেও নগরীর কান্দিরপাড়ের প্রতিদিনের চিত্র যেন আজই কেনাকাটার শেষ
দিন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, শুধু নগরী
নয়, উপজেলা শহর গুলোতেও ঈদ বাজারের একই দশা। গত কয়েকদিনের লকডাউনে করোনা
সংক্রমণ কিছুটা কমে আসলেও- এখন মার্কেটের যা অবস্থা তা সংক্রমণ হার আরো
বাড়িয়ে দিবে। তবে আবারো মোবাইল কোর্ট মাঠে নামছে, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কাজ
করবেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ।
নগরীর কান্দিরপাড়, চকবাজার, ঝাউতলা,
বাদুরতলা, রেইসকোর্সসহ বিভিন্ন এলাকায় শপিংমল গুলোতে মানুষের দিনে রাতে
সমান ক্রেতাদের ভিড়। করোনা স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে শুধু মাত্র মাস্ক ব্যবহার
করেই যেন সবাই করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে বেঁচে যাবেন। অভিভাবকরা মাস্ক
ব্যবহার করলেও শিশুদের মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপক অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। বাবা
মায়ের মুখে মাস্ক থাকলেও সন্তানের মুখে মাস্ক আছে কি নাই সে ব্যাপারে
কারোরই ভ্রুক্ষেপ নাই। অন্যদিকে প্রতিটি দোকানেই এক একজন বিক্রয় কর্মীকে
প্রতিদিন শত শত ক্রেতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এই সময়ে তাদের করোনা সংক্রমণের
ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আর দোকানগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তার ৩ ফুট দূরত্ব মানার
দৃশ্য কোথাও নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাত্তার খান শপিং কমপ্লেক্সের
একটি অভিজাত পোষাক দোকানের এক কর্মী জানান, সারা বছরের মধ্যে এই একটি মাসই
ক্রেতাদের ভিড় থাকে। বিক্রয় ভালো হয়। আমরাও ভালো বেতন বোনাস পাবার আশা করি।
করোনার ভয় থাকলেও কর্মীরা আসে। এই অবস্থায় কিছুই করার নেই।
করোনা নিয়ে
কাজ করেন এমন চিকিৎসকরা বলছেন, বিক্রয় কর্মীদের অধিক সচেতন হতে হবে।
তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি চিকিৎসা- খাদ্যগ্রহন এবং পরিবারের
সদস্যদের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
গতকাল দিনে এবং রাতে কুমিল্লা
নগরীর কান্দিরপাড়ে একাধিক শপিংমলে ঘুরে দেখা গেছে একই রকম চিত্র। কোথাও
কোথাও শপিংমল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জীবানুনাশক টানেল বা সেনিটাইজারের
ব্যবস্থা রাখা হলেও ক্রেতাদের ঢলে সেসবের সঠিক ব্যবহার কোন ভাবেই সম্ভব
হচ্ছে না। এদিকে মানুষের ভিড় সামলাতে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায়
প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে বন্ধ রাখা হয়েছে যানবাহন চলাচল।
এদিকে
মঙ্গলবার প্রকাশিত জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে,
করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লায় প্রাণহারিয়েছেন আরো ৫ জন। এদের মধ্যে ৪ জনই
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো। নতুন শনাক্ত হয়েছে আরো
৪৮ জন।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, কুমিল্লার
কান্দিরপাড়ের যে চিত্র এটাতে আমরা আশাহত। সাধারণ মানুষ যদি তাদের
ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির দিকে নিজেরা নজর না দেয় তাহলে করোনা মোকাবেলায়
সরকার যত পদক্ষেপই গ্রহন করুক না কেন কেন সব ভেস্তে যাবে। মানুষের নিজের
জন্য নিজের সচেতন হতে হবে। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ভাবেই করতে হবে। আর
যেখানে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার কথা নির্দেশনায় বার বার বলা হচ্ছে সেখানে
কান্দিরপাড়ে ভিড় সামলাতে সড়ক বন্ধ করা হয়েছে- এটা খুবই দুঃখজনক।
এদিকে
করোনা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহায়তা দিতে এসে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে
এক অনুষ্ঠানে কুমিল্লা জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা ও সদর আসনের
সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার কুমিল্লাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন,
আপনারা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হবেন না। করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবেলায়ও
আমরা সফল হয়েছি- এবারও আমরা বিফল হবো না। আমাদের প্রতিবেশ দেশ ভারতের
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখা উচিত। আমরা আশা করি আমাদের এমন পরিস্থিতির
শিকার হতে হবে না।