স্বাস্থ্য খাতের
দুর্নীতি গণমাধ্যমের সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য
খাতের বহুল আলোচিত খবরগুলোর মধ্যে রয়েছে রিজেন্ট কা- ও তার সঙ্গে কিছু
কর্মকর্তার যোগসাজশ, জেকেজি কা-, কোটিপতি গাড়িচালক, এক কর্মচারীর
দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড়, ঢাকার ৯টি হাসপাতালে কয়েক শ কোটি টাকার
দুর্নীতি-অনিয়ম ইত্যাদি। সেই স্বাস্থ্য খাত আবারও খবরের শিরোনাম হয়েছে।
গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে ভৌতিক দামে ১৬টি ওষুধ বিভিন্ন পরিমাণে কেনা হয়েছে। ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে ওষুধ কেনা হয়েছে মাত্র ৯৪ পয়সায়, মুগদা
হাসপাতালে সেটি কেনা হয়েছে ১৬ টাকা ১০ পয়সায়। এ রকম ব্যবধান প্রায় প্রতিটি
ওষুধে। তাতে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় সোয়া কোটি টাকা।
স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা বিভাগের কাছে মুগদা হাসপাতালের এই অনিয়ম ধরা পড়েছে।
ভৌতিক মূল্যে ওষুধ কেনার এই ঘটনাটি ঘটেছে গত অর্থবছরে, কিন্তু ধরা পড়েছে
চলতি অর্থবছরে এসে। তবু মন্দের ভালো। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কেনা এসব ওষুধের জন্য মাত্র চারটি দরপত্র জমা
পড়েছিল। এর মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনটি দরপত্র বৈধ ঘোষণা করে। এই তিন
প্রতিষ্ঠানেরই ঠিকানা এক, মালিকরা আপন ভাই এবং কাগজপত্রে হাতের লেখাও এক।
ধারণা করা যায়, বিশেষ যোগসাজশের কারণেই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সরাসরি
টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি। কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি
দরপত্র দাখিল করতে পারলে অনেক কম দামে এসব ওষুধ কেনা যেত এবং সরকারের এক
কোটি ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩০ টাকা সাশ্রয় হতো। এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
নিরীক্ষা বিভাগের নিরীক্ষায় ঢাকার ৯টি হাসপাতালের নানা ধরনের অনিয়মের চিত্র
উঠে আসে। ৩৫০ টাকার কম্বল কেনা হয় প্রায় আড়াই হাজার টাকায়। অতিরিক্ত দামে
কেনাকাটা ছাড়াও ছিল নি¤œমানের কিংবা ব্যবহার অনুপযোগী উপকরণ কেনা, প্রয়োজন
না থাকলেও যন্ত্রপাতি-উপকরণ কেনা, অনুমোদনহীন কেনাকাটাসহ আরো অনেক ধরনের
অনিয়ম। এতে সরকারের গচ্চা গেছে মোট পৌনে চার শ কোটি টাকা। বছরের পর বছর এত
অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র উঠে আসার পরও স্বাস্থ্য খাতে কোনো পরিবর্তন নেই কেন?
স্বাস্থ্য
খাতের অনিয়ম আর দশটি খাতের অনিয়মের মতো নয়। এখানকার অনিয়ম বহু মানুষের
বাঁচা-মরার সঙ্গে সম্পর্কিত। নকল এক্স-রে ফিল্ম আর ভেজাল উপকরণ কেনা হলে
সেগুলো দিয়ে সঠিক রোগ পরীক্ষা কখনো করা যাবে না। আর ভুল রিপোর্টের ওপর
ভিত্তি করে দেওয়া চিকিৎসা কখনো কার্যকর হবে না। সে ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুই
ত্বরান্বিত হবে। তার পরও স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত
করার উদ্যোগের এত অভাব কেন? আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি
দূর করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি ঘটনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
করোনায়
গোটা বিশ্ব শেষ হয়ে যাবে, আমরা সবাই মরে যাবো- এমন কোনো বাজে আভাসও নই।
বেঁচে যাওয়াদের কী হবে?-সেই নির্দেশনাও নেই। করোনা ঠেকাতে বাংলাদেশে লকডাউন
তেমন ফলপ্রসূ কিছু নয়, সেটাও প্রমাণের বাকি নেই। গণপরিবহনে এখন আর
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা হচ্ছে না। শপিংমল,
বাজারগুলোতে ভিড় আছে। কম-বেশি সভাসমাবেশও হচ্ছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে।
বিয়ে শাদী হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন তোয়াক্কা নেই। ফলে যা
হওয়ার তাই হচ্ছে। করোনা নির্দিধায় স্বস্তিতে ধেয়ে চলছে উল্লাসনৃত্যে