তানভীর দিপু:
মাত্র
আট সদস্যের ইউনিট নিয়ে গত ১৪ মাস ধরে করোনা প্রতিরোধসহ অন্যান্য কার্যক্রম
চালাচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। সিভিল সার্জন
কার্যলয়ের সহযোগিতায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের ২৭টি ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ
প্রতিরোধে অধিকাংশ প্রচেষ্টা তাদের। মহামারিকালীন জটিল পরিস্থিতিতে নমুনা
সংগ্রহ, পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো, টীকা দান এবং তথ্য সংগ্রহের কাজগুলো
‘চাপ’ নিয়েই করে গেলেও করোনা সংক্রমণের দীর্ঘ সময়েও এই বিভাগে জনবল বাড়লো
না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন করোনা সংশ্লিষ্টদের।
করোনা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা
মনে করেন, এই ক্ষুদ্র ইউনিট নিয়ে কোন ভাবেই কুমিল্লা সিটির বিশাল জনগোষ্ঠীর
সফল করোনা প্রতিরোধ সম্ভব না। এখন যারা কাজ করছেন তারা সিটি কর্পোরেশনের
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য সেবামূলক দায়িত্বেও নিয়োজিত থাকেন, সেখানে
করোনার মত জটিল পরিস্থিতিতে কুমিল্লা সিটির স্বাস্থ্যবিভাগ এখনো কেন
শক্তিশালী হচ্ছে না - এই প্রশ্ন সাধারণ নাগরিকদেরও।
জনস্বাস্থ্যবিদ
নিসর্গ মেরাজ চৌধুরীর মতে, সিটি কর্পোরেশনে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনবল
বৃদ্ধি করে একটি দক্ষ ইউনিট গড়ে তোলা সময়ের দাবি। প্রয়োজন মত
স্বাস্থ্যকর্মী না থাকলে করোনা নিয়ে অনেক কিছুই প্রশাসনের নজরে আনা যাবে
না। আবার অনেক সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন নাগরিকরাও।
সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জানান, স্বাস্থ্যবিভাগে জনবল বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জেলা
করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান
জানান, করোনাকালীন দীর্ঘসময়ে সিটি কর্পোরেশন করোনা প্রতিরোধেই আলাদা
স্বতন্ত্র একটি ইউনিট গড়ে তুলতে পারতো। এতে সরকারি বিভিন্ন বরাদ্ধ ও সেবার
আরো সুফল পেতো নাগরিকরা।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ আবু সায়েম ভুইয়া পদবীতে একজন নির্বাহী
প্রকৌশলী, পালন করছেন অতিরিক্ত দায়িত্ব। এছাড়া যে একজন মেডিকেল অফিসার আছেন
তিনিও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সংযুক্ত হয়ে কাজ করছেন। ইপিআই
টেকনোলজিষ্ট এর পদটি ছাড়া বাকি যে পাঁচ জনই আছেন সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব
নিয়োগে। করোনা প্রতিরোধে কাজ করতে ওই ৫ জনকে স্বাস্থ্যকর্মীকে নেয়া হয়েছে
সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বেতনে।
সিটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চন্দনা দেবনাথ জানান, আমরা চাপ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। দায়িত্ব যা তা পালন করে আসছি।
প্রধান
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ আবু সায়েম ভুইয়া কাজের অতিরিক্তি চাপ স্বীকার করে
জানান, আমাদের শীঘ্রই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিক জনবল
প্রয়োজন। তাহলে আমরা আরো বেশি কাজ করতে পারবো।
ইপিআই মেডিকেল
টেকনোলজিষ্ট জহিরুল ইসলাম জানান, করোনার এই পুরো সময় জুড়ে আমরা এই কয়েকজন
যতটুকু সম্ভব নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে টীকা দান পর্যন্ত যা যা করার সবই
করছি। লোকজন না থাকায় অনেক বেশি কাজ করতে হচ্ছে এটা ঠিক।
২০২০ সালের
এপ্রিল মাস থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশনে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ১৮১ জনের। এর
মধ্যে পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৯৮ জন। এই সময়ের মধ্যে সিটিতে করোনায়
আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫০ জন।