বাস্তব জীবনে টারজানের মতোই জীবনযাপন করছেন হো ভ্যান লং। খাদ্য জোগাড়ের জন্য পশুপাখি শিকার থেকে শুরু করে অন্যসব কাজই তিনি করে আসছেন সিনেমায় দেখা টারজানের মতোই।
শুধু তার কোনো নারী সঙ্গী নেই। তিনি আসলে জানেনই না পৃথিবীতে নারী বলে কিছু আছে। ভিয়েতনামের জঙ্গল থেকে সম্প্রতি এমন ঘটনা তুলে এনেছেন আলোকচিত্রী আলভেরো সেরেজো। দ্য মিরর।
১৯৭২ সালে সংঘটিত ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন বোমা হামলায় লং তার মা ও দু ভাইকে হারান। বিভীষিকাময় যুদ্ধের স্মৃতি বুকে নিয়ে সভ্য জগতকে বিদায় জানান তার বাবা হো ভ্যান থান। বেঁচে যাওয়া দুই ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যান সে দেশের গভীর জঙ্গলে। কুয়াং নাগাই প্রদেশের টে ট্রা জেলার ওই জঙ্গলেই তারা বসতি গড়ে তোলেন।
সামাজিক জীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ওই জঙ্গলেই তারা কাটিয়ে দেন ৪১ বছর। ছোট ভাই ট্রাই এবং বাবার জন্য খাদ্য জোগাড় করা ছিল তার গুরু দায়িত্ব।
পুরোপুরি বন্য জীবনযাপন করেছেন এই তিন ব্যক্তি। খেয়েছেন মধু, ফল, জঙ্গলের প্রাণী ও কিছু কিছু গাছের পাতা।
২০১৫ সালে পরিবারটির খোঁজ পান আলভেরো সেরেজো নামের এক আলোকচিত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা দূর থেকে মানুষ দেখতে পেলেই পালিয়ে যেত।’
২০১৫ সাল থেকে ভিয়েতনামের একটি গ্রামে নতুন করে খাপ খাইয়ে নেওয়া শুরু করে পরিবারটি। তবে সম্প্রতি সেরেজোকে সঙ্গে নিয়ে আবার জঙ্গলে ফিরে যায় তারা।
সংসার ধর্ম কী জানে না লং। ‘নারী বোঝে?’ সেরেজোর এমন প্রশ্নে যেন আকাশ থেকে পড়ল ৪৯ বছর বয়সি লং। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা এ সম্পর্কে কখনো কিছু বলেননি।’ তবে গ্রামের জীবন শুরু করার পর কিছু করে জানতে শুরু করেন তিনি।
সেরেজো বলেন, ‘আজ পর্যন্ত অবাক করার মতো বিষয় হলো তিনি নারী ও পুরুষ আলাদা করতে পারলেও এখন পর্যন্ত জানেন না তাদের মধ্যকার প্রয়োজনীয় পার্থক্য।’
আলভেরো সেরেজো আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি অন্য অনেক কিছুর মতোই কখনো তিনি বংশবৃদ্ধির কথা ভাবেননি।’
লংয়ের ভাই তাকে ‘মানুষের অবয়বে একটি শিশু’ আখ্যায়িত করেছেন। শুধু নারী বিষয়েই নয়, লং অনেক মৌলিক সামাজিক ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞ। শিশু বয়স থেকে তার পুরো জীবন কেটেছে জঙ্গলে।