মাসুদ আলম: প্রায় চার ঘণ্টার বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ হয়ে পড়েছে কুমিল্লা নগরী। রবিবারের (৪ জুলাই) ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিতে কুমিল্লা নগরীর দুই তৃতীয়াংশ এলাকা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রশস্ত সড়কগুলো যেন একেকটি জলাধারে পরিণত হয়। রবিবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চার ঘন্টার টানা ভারি বর্ষণে পানি ঢুকে পড়ে নগরীর দোকানপাট, মার্কেট, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায়। তবে এই বৃষ্টি ভারি থেকে নেমে হালকা ও মাঝারি আকারে বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে সকল কিছু বন্ধ থাকলেও বাসাবাড়ি এবং নগরীর প্রত্যেকটি সড়ক প্লাবিত হওয়ায় নগরবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্ভোগে পড়া বাসিন্দারা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জলাবদ্ধতার ছাবি ও ভিডিও ছড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তাদের অভিযোগ, কুমিল্লা-নোয়াখালী চার লেন সড়ক উন্নয়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নগরীর কান্দিখাল ভরাট এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম দুই লেনের রেল লাইনের উন্নয়ন কাজে কুমিল্লার অংশে প্রায় ২০০টি কালভার্ট ভরাটে হালকা বৃষ্টিতে কুমিল্লা পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। যা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং ব্যর্থতা একমাত্র কারণ। সিটি কর্পোরেশন এর দায় নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের তদারকি ও ব্যর্থতার কারণে নগরীর পানি প্রবাহের একমাত্র কান্দিখাল এবং পানি নিষ্কাশনের কালভার্টগুলো ভরাট করা হয়েছে।
তবে সিটি মেয়র বলছেন তিনি একাধিকবার প্রতিবার করেছেন। কিন্তু কেউ ওনার কথা শুনছেন না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রবিবার সকালেই নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। সকাল থেকেই টানা প্রবল বর্ষণে নগরীর পধান সড়ক, গলি, উপগলি পানিতে তলিয়ে যায়। বাসা বাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কক্ষেও পানি ঢুকে পড়ে। নগরীর নজরুল এভিনিউ, অশোকতলা, পশ্চিম বাগিচাগাঁও, সালাউদ্দির মোড়, মনোহরপুর, মহিলা কলেজ রোড, উত্তর ও দক্ষিণ চর্থা, কাপ্তানবাজার, রেইসকোর্স, আশ্রাফপুর, ইয়াসিন মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লার রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (ইপিজেড) এবং বিসিক এলাকাসহ বিভিন্ন কারখানার নিচ তলায় পানি ঢুকেছে। ফলে এসব কারখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কুমিল্লা মহিলা কলেজ রোড এলাকার শিক্ষার্থী আবদুর রহমান রনি জানান, তাদের এলাকায় প্রত্যেকটি বাসা কোমরসমান পানির নিচে ডুবে গেছে। দোকানপাট ও বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি প্রবেশ করে। এ সময় বাসাবাড়িতে লোকজনকে বাসায় পানি বন্দি থাকতে হচ্ছে। বাহিরেও বের হতে পারছে না লকডাউনের কারণে।
এদিকে কুমিল্লা জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া জানান, রবিবার ভোর ৫টা থেকে কুমিল্লায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। সকাল ১১টা পর্যন্ত এই বৃষ্টি হালকা ও মাঝারি আকারে অব্যাহত রয়েছে। ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া এই ভারি বর্ষণ সকাল ৯টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। টানা ৪ ঘন্টার ভারি বর্ষণে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এদিকে নগরীর সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সকালে লকডাউনে কাঁচাবাজারেরউদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক সড়কে কোমর ও হাঁটু সমান পানির কারণে যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল কান্দিখাল ভরাট করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অন্যদিকে শহরের পানি প্রবাহের কালভার্টগুলো ভেঙ্গে ভরাট করেছে রেল লাইন উন্নয়নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। তাদের এই অবৈধ কর্মকণ্ডে আমি একাধিকবার বাধা প্রদান করেছি। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনেন না। আমরা নগরীর বৃষ্টির পানি সরোনোর মতো কোন রাস্তা খুজে পাচ্ছি না আমি।