তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
করোনা ভাইরাসকে ছাপিয়ে এখন দুশ্চিন্তার বিষয় জলাবদ্ধতা। মসজিদ, মন্দির,
স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সব কিছুই হাবুডুবু খেয়েছে বৃষ্টির পানিতে। সবচেয়ে
ভয়াবহ অবস্থা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা সদর হাসপাতালের।
পানি ঢুকেছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের নিচতলার সব ক’টি ওয়ার্ডে। বৃষ্টি
থেমে যাওয়ার ৭ ঘন্টা পরও পানি নামেনি সদর হাসপাতালের মূল ভবন মেডিসিন
ওয়ার্ডের কক্ষগুলো থেকে। এই ওয়ার্ডটিকে সম্প্রতি করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে
রূপান্তরিত করা হয়েছে। বিদ্যুতায়িত হবার ভয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে
রাখা হয়েছে সদর হাসপাতলের ওই ভবনটিকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল
রবিবার রাত ৯টায়ও ওই ভবনের নিচতলা থেকে পানি সরেনি। নিচতলা যাচ্ছেন না
কেউই। হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে সব ক’টি রাস্তা রাতের বেলাও
ডুবে আছে হাঁটু পানিতে। কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিভাগ যে সময় করোনা মহামারি
প্রতিরোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার কথা- তারাই এখন চিন্তা করছেন হাসপাতালের
পানি নিষ্কাশন নিয়ে।
জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন গতকাল
সন্ধ্যায় জানান, সিটি কর্পোরেশনকে জানানোর পর বলেছে ২ ঘন্টার মধ্যে পানি
নিষ্কাশন হয়ে যাবে। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পার হলেও পানি সরছে না।
কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচাল ডা. সাজেদা বেগম জানান, সন্ধ্যার পর পানি
সরে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন কি করবে, নিজেরাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা
করছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল রাতেও কুমিল্লা সদর হাসপাতালের
অভ্যন্তরে রাস্তা ও ভবনের ভেতর থেকে বৃষ্টির পানি সরেনি। প্রায় ১০ ঘন্টা
সময় ধরে নিমজ্জিত হয়ে আছে প্রধান ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডটি। সবাইকে হাঁটু
পানি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ইঞ্জিন বিকল হবার ভয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ
করছে না এ্যাম্বুলেন্স। অটোরিকশা ও ইজিবাইকে করেই রোগীরা এসেছেন সারাদিন।
দিনের বেলা অনেক রোগীর স্বজনকে দেখা গেছে মেডিসিন ওয়ার্ড(বর্তমান করোনা
আইসোলেশন) এর নিচ তলায় পানিতে পা ডুবিয়ে অপেক্ষারত। ঘন্টার পর ঘন্টা পানি
না সরায় নিচতলা থেকে নার্সরাও চলে গেছেন দোতলায়।
করোনা ওয়ার্ডে
কর্তব্যরত একজন নার্স কুমিল্লার কাগজকে জানান, করোনা ওয়ার্ডে এখনো রোগী আসে
নাই। কিন্তু যদি রোগী চলে আসে কি করবো বুঝতে পারছি না। নিচতলা থেকে পানিও
সরছে না। আবার বিদ্যুতও নাই। নার্সরা সবাই দোতলায় গিয়ে বসে আছে।
সদর
হাসপাতালের প্রবীন নার্স রেখা রানী দাস জানান, ৩০ বছরেও এমন দৃশ্য কেউ
দেখিনি। সারাদিন এমন ডাক্তার, নার্স ও রোগীরা কি যে এক ভোগান্তিতে ছিলো তা
বলার মত না।
মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসে আমিনুল জানান, সরকারি হাসপাতালের যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে, কেউই সরকারি হাসপাতালে আসতে চাইবে না।
রাতের
বেলায়ও পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পরেছেন সদর হাসপাতালের
ইমার্জেন্সিতে দায়িত্বরত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স জাফর আহমেদ। জাফর আহমেদ জানান,
সাধারন চিকিৎসা নিতে যারা আসবেন তারা এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করবে না- তারা
কিভাবে পানি ডিঙিয়ে আসবে? আমরা তো এখন করোনার চেয়ে বেশি পানি নেমে যাওয়া
নিয়ে চিন্তিত।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলিভার,
ক্যাজুয়ালিটি ও প্রসূতি বিভাগের তিনটি ওয়ার্ড পানিতে নিমজ্জিত হয়। তিন
ওয়ার্ডে শতাধিক রোগী এসময় ভোগান্তির শিকার হন। রাত ১০ টা পর্যন্ত পানি
নিষ্কাশনের কাজ করে হাসপাতালের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
ওয়ার্ড
মাস্টার আকতার হোসেন জানান, সন্ধ্যায় পানি সরে যাওয়া শুরু করে। পরে রাতে
আমাদের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পানি নিষ্কাশনের জন্য কয়েক ঘন্টা কাজ
করতে হয়।
শুধু ওয়ার্ড নয়, দিনের বৃষ্টির পর কুমিল্লা মেডিকেলের পুরাতন
ভবনের নিচতলার সব কক্ষেই পানি প্রবেশ করে। হাসপাতালের ময়লা আবর্জনা সহ
পানিতে সয়লাব হয়ে যায় সব ক’টি কক্ষের মেঝে।