করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর ১৬ মাস কেটে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার। সেদিন সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৬৪ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ (৯ হাজার ৯৬৪ জন)। এদিকে শনাক্তের হার উঠে গেছে ২৯.৩০ শতাংশে। সংক্রমণের সর্বশেষ ধারায় আরো কিছু পরিবর্তন এসেছে। আগে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণ খুবই কম ছিল, এবার সেখানেও সংক্রমণ বেড়েছে। এরই মধ্যে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশে উঠেছে। এবার নারীরাও অধিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রোগী নিয়ে আসতে আসতে পথেই অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি থামাতে সরকার কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে। কিন্তু অনেক মানুষই তা মানতে চাইছে না। নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে চলে আসছে। লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই দলে দলে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার েেত্রও রয়েছে চরম উদাসীনতা। এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ। বসতে শুরু করেছে পশুর হাট। ঈদ যত কাছে আসবে, মানুষের চলাচল তত বেড়ে যাবে। লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ঈদের পরপরই আবার তারা নানা ধরনের যানবাহনে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরবে। এ সময় সংক্রমণের গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া হবে তার পরিকল্পনা এখনই করতে হবে।
টিকার যে সাময়িক সংকট দেখা গিয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠা গেছে। চলতি মাসের প্রথমেই ৪৫ লাখ ডোজ টিকা চলে এসেছে। এ মাসের মধ্যে সব মিলিয়ে এক কোটি ডোজ টিকা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও শিগগিরই চলে আসবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে ১০ কোটি ডোজ। এখন প্রয়োজন দ্রুত এসব টিকা প্রদান। সরকার সে চেষ্টাও করছে। বৃহস্পতিবার থেকে আবার টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। নিবন্ধনের বয়স ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৫ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও টিকা কর্মসূচির সাফল্য কমে যেতে পারে। কারণ নি¤œবিত্তের অনেক মানুষের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা কাজ করছে। তাদের কিভাবে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা যাবে, তা নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে।
রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অনেক হাসপাতালেই রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। জরুরি হলেও অনেককে আইসিইউ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ভেন্টিলেটর, হাই ফো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অনেক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। তাই দ্রুত হাসপাতালগুলোতে ধারণমতা ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের সংখ্যা। প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া। আমরা আশা করি, অচিরেই বাংলাদেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠবে।