নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় ৩২০০ কোটি টাকা
Published : Wednesday, 14 July, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব
প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জারি করা লকডাউনের
বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ হারিয়ে সঙ্কটে পড়া নি¤œ আয়ের মানুষের সহায়তায় ৩
হাজার ২০০ কোটি টাকার পাঁচটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত এক
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
করোনাভাইরাসের অতি
সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তারে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে
বাড়তে থাকায় গতবারের মত এবারও লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে হচ্ছে সরকারকে।
এপ্রিলে
এক দফা লকডাউন চলার পর গত ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ
করা হয়। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা
পর্যন্ত সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও ২৩ জুলাই সকাল থেকে ৫ অগাস্ট মধ্যরাত
পর্যন্ত আবারও আগের মত বিধিনিষেধ কার্যকর হবে।
সংক্রমণ এড়াতে এই
বিধিনিষেধের মধ্যে যানবাহন এবং জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় সবচেয়ে
বিপাকে পড়েছে নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, যাদের
প্রতিনিদের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।
তাছাড়া মহামারী শুরুর পর গত ষোল
মাসের মধ্যে অর্ধেক সময় পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় এ খাতের
উদ্যোক্তারা বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কর্মীদের বেতন দিতেও হিমশিম
খেতে হচ্ছে তাদের।
মহামারীর ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি যাতে ঘুরে
দাঁড়াতে পারে, সেজন্য ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সোয়া লাখ কোটি টাকার
বেশি বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। তার সঙ্গে এবার নতুন এই পাঁচটি প্যাকেজ যুক্ত
হওয়ায় মোট সহায়তার পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল।
১.
নি¤œ আয়ের ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন শ্রমজীবী মানুষ এই প্যাকেজের আওতায় নগদ
আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাবেন। সেজন্য বরাদ্দ থাকছে মোট ৪৫০
কোটি টাকা। উপকারভোগীদের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন দিনমজুর, ২ লাখ ৩৫
হাজার ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫০ হাজার ৪৪৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ১ হাজার
৬০৩ জন নৌ পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন।
২. শহর এলাকার নি¤œ আয়ের মানুষের
সহায়তায় ২৫ জুলাই থেকে ৭ অগাস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন সারা দেশে ৮১৩টি কেন্দ্রে
বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর আওতায় দেওয়া হবে ২০ হাজার মেট্রিক
টন চাল এবং ১৪ হাজার মেট্রিক টন আটা। সেজন্য এ প্যাকেজে বরাদ্দ করা হয়েছে
১৫০ কোটি টাকা।
৩. জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৩৩৩ এ ফোন করলে স্থানীয়
প্রশাসনের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার যে ব্যবস্থা চালু আছে, তা
অব্যাহত রাখতে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া
হয়েছে।
৮. গ্রামীণ এলাকায় কর্মসৃজনমূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য পল্লী
সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফ এর মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিতে
এর আগে বরাদ্দ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত হিসেবে আরও ১ হাজার ৫০০
কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ঋণের জন্য সুদের হার আগের মতই ৪ শতাংশ হবে।
৫.
পর্যটন খাতের হোটেল/মোটেল/থিম পার্কগুলো যাতে তাদের কর্মচারীদের বেতন/ভাতা
পরিশোধ করতে পারে, সেজন্য ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে তাদের
‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ যোগাতে ঋণ দেওয়া হবে। সেজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১
হাজার কোটি টাকা।
করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা সামলাতে সরকারের ঘোষিত
প্রণোদনা প্যাকেজ চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন অর্থ
বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
গত জুনে অর্থমন্ত্রীর বাজেট
পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “গতবছর ঘোষিত ২৩টি
প্রণোদনা প্যাকেজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত চলবে। এ বছর, আগামী
বছরও চলবে। যদি প্রয়োজন হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি আরও প্রণোদনা
প্যাকেজ নিয়ে আসবেন।”
গতবছর সরকারের ঘোষিত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজে
বরাদ্দ ধরা হয়েছিল এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬টি প্যাকেজের
৪০ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা সরাসরি বাজেট থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এপ্রিল
পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়ন হয় এর ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।
আগের ২৩টি প্রণোদনা
প্যাকেজের মধ্যে ছয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করছে। সেখানে বরাদ্দ প্রায়
৯০ হাজার কোটি টাকা, যা পুরো প্যাকেজের ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের ৩৮
হাজার ৪৪১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
বাংলাদেশ
ব্যাংক যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে, তার মুনাফা ও ভর্তুকি বাবদ
বছরে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে দেওয়া হবে বলে সরকারের তরফ
থেকে জানানো হয়েছে।