করোনা
মহামারি এখন রীতিমতো ভয়াবহ পর্যায়ে। করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার পর গত
প্রায় দেড় বছরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সাম্প্রতিক সময়ে।
চলছে কঠোর লকডাউন। তারই মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এমনিতেই
বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় যেখানে-সেখানে পানি জমে থাকে এবং
তাতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তার বেড়ে যায়। এ বছর প্রায় লাগাতারভাবে
বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার প্রজননও বেশি হচ্ছে। ডেঙ্গুর সংক্রমণও আগের দুই
বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। চলতি মাসের প্রথম ২৫ দিনেই শনাক্ত হয়েছে এক
হাজার ৩০৭ জন ডেঙ্গু রোগী। আর তাদের মধ্যে ৯৯ শতাংশেরই বসবাস ঢাকায়। ঢাকার
দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো কঠিন
হবে।
এডিস মশা খুব সামান্য পানিতেই প্রজনন করতে পারে। মানুষ যত্রতত্র
পলিথিন, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র
ফেলে রাখে। সেগুলোতে বৃষ্টির যে সামান্য পানি জমা হয় তাতেই এডিস মশা বংশ
বিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেকে ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখেন এবং
সেগুলোতে পানি জমে থাকে। অনেকের ঘরেও ছোটখাটো পাত্রে জমে থাকা পানি পাওয়া
যায়। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। এডিস মশার
বংশবিস্তার রোধে মশা প্রজননের উৎস ধ্বংস করতে হবে। যত্রতত্র খালি ভা- বা
আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। অনেক বাড়ির ভেতরে কিংবা দুই বাড়ির মাঝখানে এমন
অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে আবর্জনা জমে থাকে। অনেক বাড়িতে সিটি করপোরেশনের
লোকজন ওষুধ ছিটানোর জন্যও ঢুকতে পারে না। সেসব বাড়িতে যে মশা হয়, তা শুধু
সেসব বাড়ির মানুষকেই কামড়ায় না, আশপাশেও ছড়িয়ে যায়। এসব অনাচার দ্রুত রোধ
করতে হবে। এডিস নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনেই চলছে বিশেষ অভিযান। গতকাল
সোমবার থেকে ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০টি অঞ্চলে শুরু হয়েছে
মোবাইল কোর্টের অভিযান। বাড়িঘর বা কোনো স্থাপনায় মশা প্রজননের উৎস পাওয়া
গেলে সংশ্লিষ্টদের জরিমানাও করা হবে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার জন্য
চলবে মাইকিং। এই অভিযান আরো জোরদার করা প্রয়োজন।
করোনা সামাল দিতেই
হাসপাতালগুলোর বেসামাল অবস্থা। তার মধ্যে যদি ডেঙ্গু এভাবে বাড়তে থাকে,
তাহলে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই পরিস্থিতির
যাতে আর অবনতি না হয় সে জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে মশা নিধন
কর্মসূচিতে আরো বেশি জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিয়মিত
মনিটরিং করতে হবে। দেশে ডেঙ্গু রোগ ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল পরিষেবা আরো
উন্নত করতে হবে। সেই সঙ্গে নাগরিকদেরও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।