করোনা দুর্যোগে
স্বাস্থ্য খাতের নাজুক পরিস্থিতি যেভাবে উন্মোচিত হয়েছে, তাতে আমরা
প্রত্যাশা করেছিলাম, এসব কাটিয়ে উঠতে সংশ্নিষ্ট প্রশাসন আরও তৎপর হবে।
রোববার সমকালে প্রকাশিত 'স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ পরিকল্পনায় গলদ' শীর্ষক
প্রতিবেদনের ভাষ্য স্বভাবতই আমাদের হতাশ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বর্তমান
পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলার জন্য নতুন করে সাড়ে ১৭ হাজার চিকিৎসক ও নার্স
নিয়োগের পরিকল্পনা করলেও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির জনবল নিয়োগের উদ্যোগ না
নেওয়া বিস্ময়কর। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৩০ হাজার পদ শূন্য থাকা
সত্ত্বেও কেন তাদের নিয়োগে পদপে নেওয়া হচ্ছে না? আইনি জটিলতার কারণে এসব
পদে অনেক বছর বন্ধ থাকা নিয়োগে বাধা দূর হলেও প্রশাসনের নীরবতা হতাশাজনক।
সর্বশেষ দুই হাজারের বেশি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের উদ্যোগ
নিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীা হওয়ার ছয় মাস পার হলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বাণিজ্যের কারণেই নিয়োগ প্রক্রিয়া
আটকে আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি।
আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দুর্দশার
পেছনে অযোগ্যতা, অদতা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম যেমন, তেমনি জনবলের ঘাটতিও কম
দায়ী নয়। আমরা জানি, হাসপাতালের কভিড-১৯ ওয়ার্ডে মাসের পর মাস দায়িত্ব পালন
করে অনেকটাই কান্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর মধ্যেই
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায়
চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন। আমরা মনে করি, এ সময়ে যে
কারণে চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োগ দেওয়া যেমন প্রয়োজন, ঠিক একই যুক্তিতে
অন্যান্য জনবলেরও আনুপাতিক হারে নিয়োগ দেওয়া জরুরি। করোনা শনাক্তকরণে নমুনা
পরীা কিংবা নমুনা সংগ্রহ, হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখা, চিকিৎসকের গাড়ি
চালানো, হাসপাতাল ও রোগীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা প্রতিটি
কাজ গুরুত্বপূর্ণ। এসব কাজ যারা সম্পন্ন করবেন, তাদের নিয়োগ না দিয়ে শুধু
চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের মাধ্যমে কাঙ্তি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব
নয়।
এখন মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার যেমন দ্রুত চিকিৎসক ও নার্স
নিয়োগ দিচ্ছে, তেমনি চাইলে দ্রুত এসব পদেও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। এতে যেমন
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, তেমনি হাজার হাজার বেকার যুবকের ভাগ্য
বিড়ম্বনারও অবসান হবে। এমনিতেই জনসংখ্যা অনুপাতে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের
কর্মীর সংখ্যা কম। আবার স্বাস্থ্য খাতে যারা কর্মরত, তাদের ঠিকমতো দায়িত্ব
পালন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। উল্লেখযোগ্য চিকিৎসক কর্মস্থলে থাকেন না বলে যে
অভিযোগ রয়েছে, সেটিও আমলযোগ্য। নতুন জনবল যেমন নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন তেমনি
বর্তমান জনশক্তিও ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, সেটা তদারকি দরকার। আমরা জানি,
স্বাস্থ্য অন্যতম মানবাধিকার এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত মানব উন্নয়ন সূচক।
দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্বাস্থ্যসেবার ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না।
অথচ আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাত নানা দিক থেকেই অবহেলিত রয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য
খাতে বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় কম, জনবল সংকট, অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনার
অপ্রতুলতা এখানে স্পষ্ট। সরকারের উচিত হবে নতুন করে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে
সাজানো। এেেত্র জনবল সংকট যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমরা চাই
ত্রিশ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের বিষয়টি স্বাস্থ্য খাতের অগ্রাধিকারে
থাকুক। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের সব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করার
মাধ্যমেই স্বাস্থ্য খাতে গতি আসবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, করোনা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ডাক্তার ও রোগী
সংক্রান্ত প্রবাদ সূত্রে প্রশ্ন থাকে, রোগী মরে গেলে ডাক্তার দিয়ে কী হবে?
কার্যত স্বাস্থ্য খাতে ভারসাম্য ফেরাতে এর বিকল্পও নেই। সেেেত্র দুই বছর
আগে প্রকাশিত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে যে সাত
লাখের মতো আবেদন পড়েছে, তাদের স্থগিত নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা যেতে
পারে।