ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমেকে শয্যা সংকট এম্বুলেন্সেই চিকিৎসা
Published : Friday, 30 July, 2021 at 12:00 AM, Update: 30.07.2021 12:11:32 AM
কুমেকে শয্যা সংকট এম্বুলেন্সেই চিকিৎসামাসুদ আলম।। কুমিল্লায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু। জেলার সকল মানুষের করোনা চিকিৎসার নির্ভরতার জায়গা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) ও সদরের জেনারেল হাসপাতালে কোন সিট খালি নেই। খালি নেই আইসিইউ শয্যাও। ৯০ শয্যার হাসপাতালটিতে সিট সংকটে স্বজনরা ফিরছেন মুমূর্ষু রোগি নিয়ে। রোগীরা ফ্লোরেই অবস্থান নিয়েছে। কেউ সুস্থ্য হলে কিংবা কারও মৃত্যুতে যদি শয্যা খালি হয় তবেই মিলবে একটি ‘শয্যা’ এমন আশায় অপেক্ষা রোগী ও স্বজনদের। এমন আশায় বুক বেধে অনেক স্বজন এম্বুলেন্সেই রোগি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এদিকে বিপুল পরিমাণ রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। গ্রাম থেকে শ্বাসকষ্ট ও করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে রোগীদের গন্তব্য নগরমুখী হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুহার কমাতে সবধরনের চেষ্টা চলছে বলে জানান সিভিল সার্জন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে এম্বুলেন্স, সিএসজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, রোগীর স্বজন ও স্বেচ্ছাসেবকদের ঘিঞ্জি অবস্থা। সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক এম্বুলেন্স এসে থামছে। এম্বুলেন্সের ভেতরে শুধু শ্বাসকষ্টের রোগী। এরোগীর স্বজনরা বের হয়ে ট্রলি খুঁজছেন। রোগী নামিয়ে ভর্তির অপেক্ষা করছেন অনেকে। সিট না পেয়ে অনেকেই তড়িঘড়ি করে ফিরছিলেন অন্য হাসপাতালে। আবার অনেক স্বজন একাধিক হাসপাতাল ঘুরে অসহায় হয়ে এম্বুলেন্সে রেখে রোগির চিকিৎসা দিচ্ছেন।   
এদিকে করোনা ইউনিটে ভর্তিরোগীর মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারি চলছিল। মরদেহ নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগের চেষ্টা ছিল স্বজনদের মাঝে। দুপুরে কয়েক ঘন্টা ঘুরে এসব দৃশ্যই দেখা গেছে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সিট পাবার লড়াই নতুন কিছু নয়। তবে করোনাকালে সেই লড়াই আরও কঠিন হচ্ছে প্রতিদিন। রাতদিন ২৪ ঘন্টা জেলার ১৭ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন করোনা রোগী। যারা আসছেন তাদের অবস্থা আগে থেকেই জটিল। হাসপাতালে ভর্তিকরে চিকিৎসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারও আবার আইসিইউ শয্যা লাগছে। কিন্তু শত চেষ্টা করে অনেকের ভাগ্যে আইসিইউ শয্যাও জুটছে না। বৃহস্পতিবার প্রায় আড়াই ঘণ্টায় এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অন্তত ১৫টি এম্বুলেন্স রোগী নিয়ে এসেছে। এর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে সিএনজি, মাইক্রো, কার, অটোরিকশা করে আরও অনেক রোগী এসে। এসব রোগীর মধ্যে করোনা উপসর্গ বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ছিল। কারো কারো করোনা পজেটিভ ছিল। এসব রোগীর মধ্যে থেকে একাধিক স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা বাইরে থেকে এসেছেন। গ্রাম থেকে আসা রোগীরা অন্তত ১০ দিন আগে থেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন। এদের অনেকেই সর্দি-কাশি ভেবে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, অক্সিজেন লেভেল বিপদসীমায় নেমে আসায় তারা উপজেলা-জেলা হাসপাতাল ঘুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন। মাঝখানে যে সময়টুকুপার হয়েছে তত সময়ে রোগীদের অবস্থা জটিল হয়েছে।
লাকসামের বাসিন্দা শাহ মো. বেলাল হোসেন (৫২)। করোনা আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাই স্বজনরা তাকে এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যান কুমিল্লার সদর জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে শয্যা সংকট থাকায় তাকে আনা হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখানে আসার প্রায় এক ঘণ্টা সময় অপেক্ষা করে বেলাল হোসেনের স্বজনরা কোনো শয্যার ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরে তাকে এম্বুলেন্সে রেখে আপাতত চিকিৎসা দিচ্ছিলেন স্বজনরা।
এদিকে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে কুমিল্লা সদর জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন তার সন্তান। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮০। দ্রুতই তাকে অক্সিজেন দিতে হবে। কিন্তু শয্যা খালি নেই কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে।
হাসপাতালে সিট সংকটের বিষয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন জানান, দৈনিক রোগীর চাপ বাড়ছে। আসন না স্বজনরা রোগি নিয়ে পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু রোগি বেড়ে যাওয়া তাহা সম্ভব হচ্ছে না। এখন যে রোগিরা আসছে প্রথমে জ্বর সর্দি হলে কেউ টেস্ট করান না। পরে যখন শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় তখন হাসপাতালে আসেন। আগে থেকে করোনার চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর সংখ্যা এত হতো না। এ ছাড়া অসচেতনতার কারণে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় প্রবণতা উর্ধমুখী হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগেরও। শয্যা বাড়ানো ও অক্সিজেন সংকট যেন না হয় সেদিকেই নজর বেশি জানালেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন। তিনি বলেন শহর থেকে গ্রামে ছড়িয় পড়েছে করোনা। কুমিল্লায় চলতি মাসেই করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১২হাজার জন। এসময় মৃত্যুবরণ করেছে ২১০জন।