প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ কোটি টাকা দেয়ার পর প্রিমিয়ার লিগ শুরু করতে নড়েচড়ে বসেছিল বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। লিগ কমিটি একাধিকবার সভাও করেছে। কিন্তু প্রতিটি সভাই শেষ হয়েছে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া। কিছুতেই যেন খুলছে না হকির জট।
হকির প্রিমিয়ার লিগ সর্বশেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। করোনার মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেটসহ আরও অনেক খেলা সক্রিয় থাকলেও ব্যতিক্রম হকি। ফেডারেশন আর ক্লাব আর কর্মকর্তাদের বিরোধের জেরে ধ্বংসের পথে দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলাটি।
অর্থসংকট দূর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরও কেন প্রিমিয়ার হকি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ফেডারেশন? আসলে প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত লিগ কমিটি। এই কমিটিই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কারণ, সভায় ক্লাবগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান।
অভিযোগ আছে, ক্লাবগুলো বাইরে বলে এক কথা, লিগ কমিটির সভায় বলে আরেক কথা। লিগ কমিটির সভা মানেই হলো ‘জোটের লড়াই’। ক্ষমতাধর ক্লাবগুলোর আছে আলাদা আলাদা জোট। জোটের মুরব্বিরা যা বলে, তাতেই সায় দেয় অনুসারী ক্লাবগুলো। সেটা সঠিক হোক, বা বেঠিক।
এই যেমন এবার জোটগুলো জট পাকিয়েছে বিদেশি খেলোয়াড় থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে। কোনো কোনো ক্লাব চাইছে বিদেশি ছাড়া লিগ আয়োজন করতে। কারণ, করোনার সময় বিদেশি খেলোয়াড় আনা মানেই একটা বাড়তি বিড়ম্বনা। আবার কোনো কোনো ক্লাব চাইছে বিদেশি কোটা থাকুক। যারা আনতে পারবে আনবে, যারা পারবে না আনবে না।
সর্বশেষ নির্বাচনের দুই জোটের একটির নেতৃত্বে ছিল মোহামেডান, আরেকটির আবাহনী। মজার বিষয় হলো, এবার লিগ শুরু নিয়ে মোহামেডান-আবাহনীর মতামত এক। দুই বড় ক্লাবই বিদেশিসহ লিগ চাইছে।
জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই এখন চাকরি করেন সার্ভিস সংস্থাগুলোয়। এই খেলোয়াড়দের একটা কোটা থাকে। একটি ক্লাব এবার সর্বোচ্চ কতজন সার্ভিসেস দলের খেলোয়াড় নিতে পারবে, তা নিয়েও আছে মতানৈক্য। মত পার্থক্য আছে বিকেএসপির খেলোয়াড় কোটা নিয়েও।
এই তিনটি বিষয়ে ক্লাবগুলো একমত হতে না পারায় লিগের বাইলজই চূড়ান্ত করতে পারছে না লিগ কমিটি। সভার আগে ক্লাব কর্মকর্তাদের বিচ্ছিন্ন বক্তব্যে মনে হয়-সবাই লিগ খেলতে এক পায়ে রাজি, যে কোন শর্তেই তারা খেলবে। কিন্তু ওই ক্লাবের প্রতিনিধিরা লিগ কমিটির সভায় করেন নানা বাহানা। এটা হলে খেলা সম্ভব না, ওটা হলে খেলা সম্ভব না-এরকম অনেক কিছু। যে কারণে, সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় লিগ কমিটির সভা।
এবার অবশ্য একটু ভিন্ন পথে হেঁটেছে লিগ কমিটি। আর মুখের কথা নয়, বাইলজ নিয়ে যা মতামত তা দিতে হবে লিখিতভাবে। সর্বশেষ সভায় লিগ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে খসড়া বাইলজের ওপর মতামত ১০ আগস্টের মধ্যে ক্লাবগুলোকে লিখিতভাবে প্রেরণ করতে হবে। তারপর সভায় বসে লিখিত মতামতের ভিত্তিতে বাইলজ চূড়ান্ত হবে।
একটি বড় ক্লাবের প্রতিনিধি বলেছেন, ‘লিগ কমিটির সভাগুলো হয়েছে ভার্চুয়ালি। আমার মনে হয়, ফিজিক্যালি সভা হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। পরবর্তী সভায় বাইলজ চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, ‘ক্লাবগুলো লিখিত মতামত দিলে আমরা ১২ আগস্টের মধ্যে ফিজিক্যালি লিগ কমিটির সভা করে বাইলজ চূড়ান্ত করতে পারব। আমরা লিগ আয়োজনে প্রস্তুত। এখন ক্লাবগুলো লিগ কমিটির সভায় বাইলজ চূড়ান্ত করলেই দলবদলের তারিখ ঘোষণা দেয়া যাবে। লিগ কমিটি বাইলজ চূড়ান্ত করলে ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে সেখানে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।’