ইসমাইল নয়ন।। ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় ১০ মাস কারাবাসের পর ডিএনএ টেস্টে নির্দোষ প্রমানিত হন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুরের হাজী শেখ আবুল হাছান। জেল থেকে বাড়ি ফেরার ১০ দিনের মাথায় শুক্রবার (৩০ জুলাই) মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরদিন শনিবার বাদ আসর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের দাবি, মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে শাস্তি পাওয়া আবুল হাছান মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে হয়েই স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবুল হাছানকে সামাজিক ভাবে হেয় করা এবং তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য ন্যায় বিচার চাচ্ছেন তার পরিবার। এনিয়ে মাধবপুর গ্রামবাসীর মধ্যেও বিরাজ কছে চাপা উত্তেজনা। গ্রামবাসীর দাবী, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী প্রকৃত ধর্ষণকারীকে দ্রুত খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে ও ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, গত ২৪ অক্টোবর ২০২০ সালে উপজেলার মাধবপুর গ্রামের কলেজ পাড়ায় ওমান প্রবাসী ব্যবসায়ী হাজী শেখ আবুল হাছানকে (৫৫) গ্রামের কিছু কুচক্রী মহলের মিথ্যে যোগসাজশে ‘ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে এক মেয়েকে ৪ মাসের গর্ভবতী’ দেখিয়ে মামলা দায়ের করে ওই মেয়ের মা। ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী (২০) চলতি বছরের মার্চ মাসে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে।
মামলার বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার মেয়েকে একাধিক বার ধর্ষণ করা হয়েছে ফলে ঐ মেয়ে অন্তসত্বা হয়। এই মামলায় পুলিশ আবুল হাছানকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করে। গ্রেপ্তারের পর আদালতে অনেকবার জামিন চাওয়া হলেও তিনি জামিন পাননি। জেলে থাকা অবস্থায় গত ১ জুন ডিএনএ টেষ্টের রিপোর্ট এসে পৌছালে তিনি জড়িত নন এমন রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আদালত তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেন। ১০ মাস জেল খাটার পর ঈদুল আযহার আগের দিন তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ী আসার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি যে সামাজিক ভাবে তিনি হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন এবং জনসমক্ষে নিজে ছোট হয়েছেন এমনটি ভেবে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। গত শুক্রবার দুপুরে তিনি তার নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন।
এ বিষয়ে আবুল হাছানের প্রবাসী ছেলে শেখ সোহেল রানা এ প্রতিনিধিকে জানান, ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর এলাকার একটি কুচক্রী মহল আমার বাবাকে একটি মিথ্যে ধর্ষণের মামলা দিয়ে দীর্ঘ ১০ মাস জেল খাটিয়েছে। ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত হয় আমার বাবা ধর্ষনের সাথে জড়িত নয়। সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে শুক্রবার আমার বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। আমি এলাকাবাসী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট আমার বাবার অস্বাভাবিক মৃত্যু ও আমাদেরকে সামাজিক ভাবে হেয় করায় বিচার দাবি করছি।
এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রকৃত আসামীদের বিচার দাবী করে মাধবপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাজী আনোয়ার হোসেন জানান, এই বিষয়টি আমরা আবুল হাছানের জানাজায় গিয়ে জানতে পেরেছি। এর আগে ওই মেয়ের পরিবার ও আবুল হাছানের পরিবার কেউ জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানায় নি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ অসুস্থ থাকায় কথা হয় তার ছেলে ফাহিম আহমেদ কাজলের সাথে। তিনি জানান, আমরা কলেজ পাড়া এলাকার অনেকের সাথেই কথা বলে শুনেছি তিনি নির্দোষ।
ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওপেলা রাজু নাহা জানান, বিষয়টি পুরোনো, আমি এসেছি নতুন। এমন কোন ঘটনার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
শনিবার বাদ আছর মাধবপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজে জানাযা শেষে আবুল হাছানকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মিয়া মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামসুল আলম, জাহের মেম্বার, মানিক পুলিশ, খোরশেদ আলমসহ এলাকার মুসুল্লিবৃন্দ।