বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘কাঁদো বাংলার মানুষ কাঁদো/ যদি বাঙালি হও নিঃশব্দে কাছে এসো, আরো কাছে/.. এখানেই শুয়ে আছেন অনন্ত আলোয় নক্ষত্রলোকে/ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/ মৌমাছির গুঞ্জনের পাখির কাকলিতে করুণ সুর বাজে/ গভীর অরণ্যে পুষ্পের সুগন্ধে/..অনেক রক্তের মূল্যে পাওয়া এ স্বাধীনতা/ এখানে ঘুমিয়ে আছে, এইখানে দাঁড়াও শ্রদ্ধায়..।’
কবি রবীন্দ্র গোপ তাঁর ‘কাঁদো বাংলার মানুষ কাঁদো’ কবিতায় এভাবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
ঘাতকরা চেয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশ যেন কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। স্বাধীনতা পেলেও যেন সেই স্বাধীনতা কোনদিন অর্থবহ না হয়। কিন্তু ঘৃণ্য ঘাতক হায়েনাদের সেই ইচ্ছা সফল হয়নি। বাংলাদেশ আজ পরাজিত পাকিস্তানকে সব দিক থেকে অনেক পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা তাঁর নামটি পর্যন্ত মুছে ফেলতে হেন কোন ষড়যন্ত্র নেই যা করেনি। কিন্তু ঘাতকদের সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। বরং বাঙালীর মুক্তমননে দীপ্ত শিখা হয়েছে জ্বলে রয়েছেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেননা শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি দেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রের মহান স্থপতি।
নিজের স্বাধীন করা দেশে কোন বাঙালী তাঁর নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না; এমন দৃঢ়বিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধুর। সেজন্যই সরকারী বাসভবনের পরিবর্তে তিনি থাকতেন নিজের প্রিয় বাসভবনে, বাঙালীর স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। বাড়িটি অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখানে থেকেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু জঘন্য ঘাতকের দল তাঁকে সেই কাজ শেষ করে যেতে দেয়নি।
একজন মানুষ মৃত্যুর পরেও যে কতটা শক্তিশালী, একটা জাতির কতটা হৃদয়জুড়ে থাকতে পারে তার উদাহরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকার বঙ্গবন্ধু হত্যা করলেও বাঙালীর হৃদয় থেকে একচুলও সরাতে পারেনি। তাই আজও আগস্ট এলেই এই বাঙালী জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে। সেই শোকাবহ আগস্টের তৃতীয় দিন আজ।
রক্তাক্ত-কলঙ্কিত আগস্টের মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচীর সূচনা দিন রবিবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী ছিল শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। সর্বত্র শোকের কালো পতাকা। হাতে হাতে জাতির জনকের ছবি। বুকে কালো ব্যাজ। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান করে স্বাধীনতার স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা। আলোক শিখা প্রজ্বালন করে দৃপ্ত শপথে পলাতক খুনী, যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা-ধিক্কার, অসংখ্য শোক মিছিলের মাধ্যমে পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং খুনীদের মদদদাতাদেরও বিচারের আওতায় আনার সোচ্চার দাবি।
প্রাণঘাতী করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগসহ অগণিত সংগঠন নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করেছে শোকের কর্মসূচীর প্রথম দিন। ‘দ্রোহের আগুনে পুড়ে হোক ছারখার, যতসব বঙ্গবন্ধুর খুনী-যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার’- এই স্লোগানে আগস্টের প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে ধানম-ির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে হাজারো মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোর মিছিলের মাধ্যমে শোকের মাসব্যাপী কর্মসূচীর সূচনা করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ অগণিত নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর স্বাধীনতাবিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জঙ্গী-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গঠনের দীপ্ত শপথে নেতাকর্মীরা প্রজ্বালিত আলোক শিখা নিয়ে মিছিলও করেছে। অসংখ্য সংগঠন প্রথম প্রহরেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে।