ঢাকা শহরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। যে চক্রের সদস্যদের প্রতেক্যেই নারী। চক্রটি লেডি মাফিয়া গ্যাং নামে পরিচিত। এ লেডি মাফিয়া গ্যাংয়ের সদস্যরা রাত নামলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। দামি সব গাড়িতে করে ঢাকা শহর দাপিয়ে বেড়ায়। এরা শিকারের খোঁজে অভিজাত এলাকার এক ক্লাব থেকে আরেক ক্লাবে ঘুরে বেড়ায়। আর এদের টার্গেট-উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান কিংবা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। মদের নেশায় বুঁদ করে রেখে এসব ব্যবসায়ীর নারীসহ আপত্তিকর ভিডিও আর ছবি তুলে নেয়। ব্যাস, এদের প্রাথমিক কাজ শেষ। পরে ধীরে ধীরে এসব ব্যবসায়ীকে আপত্তিকর ছবি আর ভিডিও দেখিয়ে নিজেদের কব্জায় নেয়। সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিণত হয়ে যায় ব্যবসায়ী বা ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরা। ঢাকা শহরেই এ ধরনের কয়েকটি লেডি মাফিয়া গ্যাং তৎপর। যারা শহরের মধ্যেই গড়ে তুলেছে এক ভিন্ন জগৎ। যে জগৎটি সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না। দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে যে কোনো দুর্যোগেও যদি সব থেমে থাকে থামে না শুধু এ গ্যাংয়ের তৎপরতা। করোনাভাইরাসের এ মহাদুর্যোগেও এ গ্যাংগুলো তৎপর ছিল।
ঢাকা শহরে এমন একটি লেডি মাফিয়া গ্যাংয়ের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন মরিয়ম আক্তার মৌ। গত রোববার রাতে মৌয়ের মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা আর সিসা উদ্ধার করা হয়েছে। তার বাসায় প্রায় প্রতিদিনই মদের আসর বসে। আর এ আসরের মধ্যমণি হয়ে থাকেন মৌ। তার গ্রুপে রয়েছে অসংখ্য নারী।
চট্টগ্রামের একটি পার্টিতে পিয়াসার সঙ্গে পরিচয় হয় মরিয়ম আক্তার মৌয়ের। সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠতা। ধীরে ধীরে পিয়াসার নেটওয়ার্কে বিচরণ ঘটে তার। পিয়াসার পরামর্শে মাঝে মাঝেই ২২/৯, বাবর রোডের বাসায় আসর বসাতেন মৌ। অনেকটা মিনিবারের মতো করেই মৌ তার ড্রয়িং রুমের ডেকোরেশন করেছেন। অনেক সুন্দরীর উপস্থিতিতে সেই পার্টিতে রাখা হতো বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করতেন। তাদের রিমান্ড আবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া ওই আসরে ধনী ও ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেল করতেন মৌ। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মৌ তার নিজের বাসায় নাচ ও গানের আসর বসান। তার সঙ্গে আরও দু-তিনজন জড়িত রয়েছেন। আসামি মৌ একজন নারী মাদক ব্যবসায়ী। স্বামী একটি লিজিং কোম্পানির কর্মকর্তা। তবে তিনি স্ত্রী মৌয়ের নির্দেশনায়ই চলতেন। মৌ তার দ্বিতীয় স্ত্রী। আগের স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পরই মৌকে বিয়ে করেন তিনি। তবে মৌয়ের এটা তৃতীয় বিয়ে। গত রবিবার গ্রেফতার হওয়ার আগে মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চলার সময় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে মৌ দাবি করেছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠিত বিপণিবিতানের মালিকের স্ত্রীর পরকীয়ার খবর তিনি জেনে যাওয়াই তার কাল হয়েছে। তবে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী তার বন্ধু ছিলেন। চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে পরিচিত হন। যদিও তারা এখন শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী মনে করছেন তিনি সেই খবরটি তার স্বামীর কানে দিয়েছেন। তিনি তার ফ্ল্যাটে সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের নাইট পার্টির কথা বলে ডেকে এনে মাদক বিক্রয় করে যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করেন। তারা পার্টির নামে উচ্চবিত্তদের বাসায় ডেকে মদ ও ইয়াবা খাইয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখতেন। পরে সেই ছবি দেখিয়ে ব্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। পিয়াসার দেওয়া তথ্যে মৌয়ের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে মৌকে আটক করা হয়।
সূত্র জানায়, মৌয়ের টার্গেট ছিল ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করত তারা। বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তাদের ছেলেদের আমন্ত্রণ জানিয়ে গোপন ক্যামেরায় ছবি তুলে ব্যাকমেল করতেন।