আবদুল জলিল জন্ম থেকেই অন্ধ। রিকশা করে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান তিনি। এতদিন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন ভাঙাচোরা একটি ঘরে। এখনও তাঁর বিশ^াস হচ্ছেনা জমিসহ একটি পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি। তাঁর কাছে এটি স্বপ্নের মত। দীর্ঘ ২০ বছর পর নিজের নামে জমির দলিল ও ঘরের কাগজ পেয়ে আনন্দের যেন কমতি নেই জলিলের সংসারে। জলিলের বাড়ি উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নে। আবদুল জলিল বলেন, গোমতীর বেঁড়িবাঁধের ওপর ছাউনি ঘরে দীর্ঘ ২০ বছর ছিলাম। স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে এটিই ছিলো আমাদের একমাত্র সম্বল। প্রধানমন্ত্রীর এখন আমাকে নতুন পাকা ঘর দিয়েছেন। ঘরটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ আছে। পানি আছে। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারব। দেবিদ্বার উপজেলার বারুর, বুড়িরপাড় ও কাচিসাইর আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘুরে দেখা গেছে, অন্ধ জলিলের মত এমন অনেকে রয়েছেন যাদের ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই। এমনই একজন রাঘবপুর গ্রামের বৃদ্ধ ছন্দু মিয়া। তিনি রাঘবপুর গ্রামের প্রতিবেশী হাবিবুর রহমানের একটি পরিত্যাক্ত ঘরে থাকতেন। দেড় বছর আগে হাবিবুর ঘরসহ জায়গাটি অন্যত্র বিক্রি করে দেন। এতে মাথাগুজার একমাত্র ঠাঁই হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ছন্দু মিয়া। পরে এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় ইউএনও রাকিব হাসানের কাছে এলে তিনি তাকে একটি প্রধানমন্ত্রীর ঘরের বন্দোবস্ত করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে ছন্দুমিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, চার ছেলে রয়েছে তাঁর। কেউ খোঁজ নেয় না। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এ ঘরে মাথাগুজার ঠাঁই হয়েছে তাঁর। এতেই তিনি খুশি।
ভূমিহীন সুমি আক্তার, শাহানা বেগম, শারমিন আক্তার ও আবদুল কাদেরের গল্পটাও খুব কষ্টের। এদের কারও ভিটে মাটি নেই। তাঁদের চারজনের কষ্টের গল্প পৃথক হলেও বুকের মধ্যে চাপা বেদনা ছিলো একই। কবে নিজের ঘরে শান্তিতে থাকবেন? এই চারজনের কষ্টের দিন আজ নেই। সবাই নিজের একটি ঘর পেয়েছেন। শুধু ঘর নয় হাতে পেয়েছেন ঘরের মালিকানার দলিলও। এখন নিজের একটা ঘর হয়েছে, তাতে আনন্দের সীমা নেই তাঁদের।
এদের মধ্যে আবদুল কাদের বলেন, ‘আগে কষ্টে দিন কাটাইছি। সরকার ঘর দেওয়ায় বড় উপকার হইলো। নিজের ঘরে শান্তিতে চাইট্টা ভাত খাইতে পারমু। আমগো পক্ষ থেকে শেখ হাসিনারে ধন্যবাদ জানইবেন মামা’।
জানা গেছে, দেবিদ্বার উপজেলায় এ পর্যন্ত ১০৫টি ঘর গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলে অর্থায়নে ১৫ টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলো হলো সুবিলের বুড়িপাড় ৪২টি, এলাহাবাদের কাচিসাইর ২৩টি, জাফরগঞ্জের বারুর ১৫টি, সুলতানপুরে ১৩টি এবং ধামতীতে ২টি। ইউএনও রাকিব হাসান মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে তাদের মতো লাখ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর দিতে বিশ্বের অভূতপূর্ব নজিরবিহীন এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেবিদ্বার উপজেলায় ১০৫টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা সবগুলো ঘরের গুনগত মান ঠিক রেখে উপকার ভোগীদের কাছে হস্তান্তর করেছি। আরও সরকারি জায়গা খোঁজা হচ্ছে। বরাদ্দ আসলে আমরা নতুন করে আরও ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করব।