ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
করোনা উপসর্গে মৃত্যু বাড়ছে
Published : Wednesday, 11 August, 2021 at 12:00 AM
দেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত চার হাজার ৪৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৯২২ জন এবং নারী ৫১৩ জন। গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে এ বছরের ৩ আগস্ট পর্যন্ত উপসর্গে মৃত্যু বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি এমন তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮ দিনেই (৭ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত) মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৪৯৬ জনের করোনা উপসর্গ নিয়ে। ৭ জুলাই থেকে করোনা উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ৭ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত করোনা উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ৭৯৬ জনের। পরে ২১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত উপসর্গে মারা গেছেন আরও ৭০০ জন।
সিজিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, উপসর্গ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৫৮ জন। এরপরই রয়েছে খুলনা বিভাগ, যেখানে মারা গেছেন ৯৭০ জন। এছাড়া ৭৭২ জন চট্টগ্রাম বিভাগে, ৫৯৩ জন ঢাকা বিভাগে, ৫০১ জন বরিশাল বিভাগে, ৩৩৮ জন ময়মনসিংহ বিভাগের, ১০৩ জন সিলেট বিভাগের ও ১০০ জন রংপুর বিভাগে।
এতে বলা হয়, গত মাসে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুতে প্রথমেই ছিল রাজশাহী জেলা, এরপরে যথাক্রমে সাতক্ষীরা, বরিশাল, বগুড়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, খুলনা, ফরিদপুর ও চট্টগ্রাম জেলা।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে নয় জন করোনায় ও আট জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। সোমবার (৯ আগস্ট) সকালে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন এ তথ্য জানান।
করোনা ডেডিকেটেড কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন করোনায় ও পাঁচ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। সোমবার (৯ আগস্ট) হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন এ তথ্য জানান।
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে জেলার দুই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছয় জন ও করোনার উপসর্গ নিয়ে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত এক মাসে করোনা পরিস্থিতির বড় কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাছাড়া করোনায় শনাক্ত এবং মৃত্যু দুইই বেড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গত দুই মাসের তুলনায় রোগী বেড়েছে সাত গুণ। আমরা টিকার কাজ করছি, ডাক্তাররাও কাজ করছে। এছাড়া ফিল্ড হাসপাতাল, বেড আমরা বাড়িয়ে চলছি। কিন্তু এটারও তো একটা সীমা আছে। কতটুকু আর করা যেতে পারে? তিনি বলেন, হাসপাতালের বেড বাড়ানো নয়, এখন সময় এসেছে করোনা রোগী কমানোর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ঈদের সময়ের শিথিল লকডাউনের প্রভাব দেখা যাবে আরও দুই সপ্তাহ পর। এখন যে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং মৃত্যু সংখ্যা দেখা যাচ্ছে সেটা আগের শিথিল লকডাউনের প্রভাব। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির জন্য মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার সঙ্গে সঙ্গে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকেও দায়ি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘যে সময়ের লকডাউনই ধরি না কেন, লকডাউনতো হয় নাই’ মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এর প্রভাব দেখতেই পাচ্ছি। সংক্রমণ বাড়ছে-মৃত্যুও হচ্ছেই। এটা যে কোনটার প্রভাব কোনটা-সেটার খোঁজ করার দরকার নাই। সংক্রমণ এবং সংক্রমণের উচ্চহার অব্যাহত রয়েছে।
মানুষকে ঈদের ভেতরে ছেড়ে দেওয়ার খেসারত দিতে হবে মন্তব্য করে আবু জামিল ফয়সাল বলেন, আর এটা যে কতদিন পর্যন্ত দিতে হবে কেউ জানে না।
মৃত্যু কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনায় শূন্য মৃত্যুর টার্গেট নিয়ে কাজ করতে হবে।
সংক্রমণ বেশি হলে মৃত্যুও বেশি হবে‑ এটাই নিয়ম মন্তব্য করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যে ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়াবে বেশি, সেটা যদি অধিক মাত্রায় ক্ষতিকারক হয় তাহলে মৃত্যু বেশি হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা গত দেড় বছরেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বাড়াতে পারিনি, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই। যখন জটিল রোগীদের আইসিইউ দরকার হয় তখন তাদের ঢাকায় পাঠাতে হয়। ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও যারা পাচ্ছেন, কিন্তু সেটা শেষ মুহূর্তে। আর শেষ মুহূর্তে চিকিৎসা দিয়ে আসলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।