Published : Thursday, 26 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 26.08.2021 1:17:58 AM
নিজস্ব
প্রতিবেদক||
কুমিল্লায়
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণহানির সংখ্যা প্রথম ধাপের তুলনায়
অর্ধেক সময়ের মধ্যে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। ভাইরাসটির প্রথম সংক্রমণের শুরু
গত বছরের মার্চ থেকে এবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত যে মৃত্যু হয়েছে দ্বিতীয়
ঢেউয়ে মাত্র ৫ মাসে মৃত্যু হয়েছে প্রায় আড়াইগুণ বেশি। শুধু শহরে নয়
দ্বিতীয় ঢেউ সমপরিমান আঘাত হেনেছে গ্রামেও। রোগতত্ত্ববিদদের মতে, করোনার
প্রথম ঢেউয়ের ধারাবাহিকতার সাথে দ্বিতীয় ঢেউয়ে ডেল্টার সংক্রমণই এই বিপুল
পরিমান প্রাণহানির জন্য দায়ী। তবে লকডাউন আর প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকলে
মৃত্যু আরো বাড়তে পারতো।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী,
২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনার শুরু থেকে চলতি ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এক
বছরে কুমিল্লায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৮৮ জন। আর করোনারা ভারতীয়
ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা সংক্রমণের পর চলতি এপ্রিল থেকে আগষ্টের গতকাল(১৪৪ দিন)
পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় ধাপে প্রাণহানির সংখ্যা ৬১২ জন। দ্বিতীয় ধাপে প্রতি
মাসে গড় মৃত্যু ১২০ জনের বেশি এবং দৈনিক মৃত্যুর গড় ৪ জনের বেশি। কুমিল্লা
জেলায় এনিয়ে মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৯ শ’ জন।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা
আক্রান্ত হয়ে গত পয়লা এপ্রিল থেকে চলতি মাসের ২৪ আগস্টসহ কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই ৪৬৪
জনের মৃত্যু হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৪৪ দিনে কুমিল্লা মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে গড়ে করোনা মৃত্যু রয়েছে ৩ দশমিক ২ জনের উপরে। বুধবার (২৫
আগস্ট) কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা
গেছেন তাদের হিসাবটাই রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কুমেক হাসপাতাল
সূত্রে জানায়, করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পয়লা এপ্রিল থেকে ২৪ আগস্ট
পর্যন্ত গত ১৪৪ দিনে ৪৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রন্ত হয়ে মারা যাওয়া
ব্যক্তি মধ্যে এপ্রিলে ৭৮ জন, মে মাসে ৬২ জন, জুনে ৪৬জন, জুলাইতে ১৫২ জন
এবং চলতি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ১২৬ জন।
রোগতত্ববিদ ডা. নিসর্গ মেরাজ
চৌধুরী জানান, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শুধু শহর নয়-গ্রামেও ডেল্টা সংক্রমণের
সময় দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণহানি ছিলো সমান। প্রথম ঢেউয়ের এক বছরে মনোহরগঞ্জ
উপজেলায় মৃত্যু ছিলো মাত্র ৯ জন, কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের ৫ মাসেই করোনায়
মারা গেলেন ২৭ জন। যদি লকডাউন ও প্রশাসনিক কঠোরতা দিয়ে জনগণকে করোনার
স্বাস্থ্যবিধি না মানানো হত তাহলে মৃত্যুর পরিমান আরো বাড়তো। এখনো যে আবার
সংক্রমণ বাড়বে না এমন কোন নিশ্চয়তা নেই, তাই সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
আক্রান্ত
ও মৃত্যুর বিষয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা.
মহিউদ্দিন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিত রোগের চিকিৎসায় চাপ সামলাতে
হিমশিম খেতে হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশি ছিলো। মাঝে কিছুটা
সংক্রমণের হার কম থাকলেও মাস্ক ব্যবহারে সাধারণ মানুষের উদাসীনতায় আরও
সংক্রমণের হার বাড়ছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবারও কুমিল্লায় ১৬ দশমিকের উপরে
সংক্রমণের হার ছিলো। তবে বর্তমানে মেডিক্যালে করোনা রোগি ও মৃত্যুর পরিমাণ
কম।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন জানান,
আক্রান্তের হার ও মৃত্যু কমে আসলেও করোনা চলে যায়নি। মাস্ক ব্যবহারে
মানুষের মধ্যে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। এই উদাসীনতার কারণে করোনায় মৃত্যু আরও
বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।