এক
দিনে আরও ৮৯ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের মোট সংখ্যা
২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেল। গত ২০ অগাস্ট দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা
২৫ হাজারের দুঃখজনক মাইলফলক পেরিয়ে গিয়েছিল। নয় দিনে মৃতের তালিকায় যুক্ত
হল আরও এক হাজার নাম। তবে সংক্রমণ কমার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার
গতিও কিছুটা কমে এসেছে। মৃতের মোট সংখ্যা ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজারে পৌঁছাতে
সময় লেগেছিল পাঁচ দিন, তার আগে ২৩ থেকে ২৪ হাজার হতেও একই রকম সময়
লেগেছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়
প্রায় ২৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে দেশে ৩ হাজার ৯৪৮ জনের মধ্যে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এ নিয়ে দেশে মোট ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৭ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হল; আর আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হল মোট ২৬ হাজার ১৫ জনের।
গত
২৪ ঘণ্টায় যে ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৪১ জন ছিলেন পুরুষ এবং ৪৮
জন নারী। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মত দৈনিক মৃত্যুতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা
বেশি হল।
মহামারীর দেড় বছরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে যত পুরুষ
মারা গেছে, নারী মারা গেছে তার অর্ধেকেরও কম। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের
বিস্তারের পর অগাস্ট মাসেই নারীর মৃত্যুহার বেড়ে গেছে।
শনিবার দেশে
দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা নয় সপ্তাহ পর একশর নিচে নেমে আসার খবর দেয় স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর। সেদিন মারা যান ৮০; সারা দেশে ৩ হাজার ৪৩৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত
হয়।
সেই হিসাবে গত এক দিনে দেশে শনাক্তের সংখ্যা ও মৃত্যু কিছুটা
বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার। রোবাবর
শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, আগের দিন শনিবার তা ১৩
দশমিক ৬৭ শতাংশ ছিল।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ২ হাজার ৪৬৮ জনের
মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের
বেশি। আগের দিন এ বিভাগে ২ হাজার ৩৪৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
গত এক
দিনে মারা যাওয়া ৮৯ জনের মধ্যে ২৭ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম
বিভাগে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে, দেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে
গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ হাজার ৪৬৬ জন সুস্থ হয়েছেন । এ নিয়ে মোট ১৪ লাখ ১৫
হাজার ৬৯৭ জন সেরে উঠলেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা
পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর
সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই
দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের
১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার তা ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেল। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০
অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ
সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার
ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২১ কোটি ৫৯ লাখের বেশি রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৯২১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ
পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯৩টি নমুনা।
নমুনা পরীক্ষার
বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, এ পর্যন্ত
শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
গত
একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের ঢাকা ২৭ জন ঢাকা বিভাগের। এছাড়া চট্টগ্রাম
বিভাগে ২১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭ জন, খুলনা বিভাগে ৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৮
জন, সিলেট বিভাগে ১০ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা
ছিলেন ২ জন।
মৃত ৮৯ জনের মধ্যে ৫০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৬ জনের
বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জনের
বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের মধ্যে ৬৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৮ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ২ জন
বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।