রণবীর ঘোষ কিংকর ।।
কুমিল্লা-৭
আসনের সাংসদ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এর মৃত্যুতে শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনের
তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর
প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন নির্ধারণ করার স্বল্প দিনের
মাঝে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন
প্রত্যাশীরা। যে যার মত দলীয় লবিং, তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন।
শূন্য
আসনের উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে দলীয় মনোনয়ন
ফরম বিক্রিও শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। শনিবার প্রথম দিনে তিন
প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। রবিবার আরও একাধিক প্রার্থী দলীয়
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন বলে জানা যায়।
আওয়ামীলী লীগের দলীয় মনোনয়ন
প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাবেক উপাচার্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি প্রখ্যাত
চিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত, এ আসনের সদ্য
প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এর একমাত্র তনয় উপজেলা আওয়ামীলীগ
সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক মুনতাকিম আশরাফ টিটু, কুমিল্লা উত্তর জেলা
আওয়ামীলীগ সদস্য নাজনীন আক্তার, উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল
আহসান মজুমদার রিপন, উপজেলা কৃষকলীগ আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. শাহজালাল মিঞা
শিপন, জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ও সাবেক উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির
হোসেন আজাদ। তারা প্রত্যেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনবেন বলে নিশ্চিত করেন।
এদিকে,
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রয়াত সাংসদ
অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এবং অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত’র মধ্যে তুমুল লড়াই
হয়। ওই নির্বাচনে অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্তের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা
অনেকটা বেশি থাকা সত্বেও সর্বশেষ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ’র হাতেই তুলে দেওয়া
হয় নৌকা প্রতীক। চলতি বছরের ৩০ জুলাই চান্দিনা থেকে পাঁচ বারের নির্বাচিত
সাংসদ অধ্যাপক আলী আশরাফ এর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন
কমিশন।
পুরো আগস্ট মাস জুড়ে শোকসভা ও প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক আলী
আশরাফ এর স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ইঙ্গিত বহন
করে উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন। সেপ্টেম্বর মাস শুরু থেকে
প্রতিটি ইউনিয়নে বর্ধিত সভার কর্মসূচী প্রকাশ ও যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করে
প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু। কেন্দ্রীয়
ভাবেও চালাচ্ছেন লবিং তদবীর।
অপরদিকে, গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার
প্রায় শতভাগ সম্ভাবনার পরও হতাশ হওয়ায় এখন নিরবে হাঁটছেন কুমিল্লা উত্তর
জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত। উপজেলা জুড়ে তার
সমর্থিত নেতা-কর্মীদের মাঝে নেই কোন সাড়া শব্দ। অনেকটাই নিশ্চুপ ভাবে দলীয়
মনোনয়ন পাওয়া এবং মাঠ গোছানোর চেষ্টা করছেন ওই প্রার্থী।
দলীয়
মনোনয়নের জন্য লবিংয়ে আছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য নাজনীন
আক্তার। দলীয় নীতি-নির্ধারকদের কাছে ছুটছেন তিনি। আলোচনায় আছেন সাবেক
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান মজুমদার রিপন, প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাদা মিঞা খোকা’র ছোট ভাই এড. শাহজালাল মিঞা শিপন।
তবে
৮ সেপ্টেম্বর দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার পর ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে
প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করার করবে আওয়ামীলীগ এমটাই প্রত্যাশা উপজেলা আওয়ামীলীগের।
অধ্যাপক
প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, দলের নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। দল যোগ্য মনে করলে
মনোনয়ন দেবে। দলীয় মনোনয়ন পেলে নৌকাকে বিজয়ী করে এলাকার মানুষের জন্য কাজ
করতে আগ্রহী।
প্রয়াত অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপি পুত্র ও উপজেলা
আওয়ামীলীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু বলেন, আমার বাবা নেই। দলের সভাপতি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন আমার অভিভাবক। বাবা এ আসনে পাঁচবার এমপি হয়ে
দীর্ঘ ৫৮ বছর এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগ,
অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। আমি নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। আমরা
চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ তার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে নৌকার
জন্য কাজ করব ইনশাআল্লাহ।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং কুমিল্লা
উত্তর জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহŸায়ক একমাত্র নারী প্রার্থী নাজনীন
আক্তার বলেন- চান্দিনার মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা আমার এগিয়ে যাওয়ার সাহস
যোগায়। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে আন্তরিক। তাই সব
কিছু বিবেচনা করে আমার হাতে নৌকা তুলে দিবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
চান্দিনা
উপজেলা কৃষকলীগ আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহজালাল মিঞা শিপন বলেন- ২০০১ ও ২০০৬
সালে আমার ভাই প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাজাদা মিঞা খোকা এবং আমি দুর্দিনে
নেত্রীর নির্দেশে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। বিএনপি-জামায়াত জোট
সরকারের দায়ের করা মামলায় প্রায় ৩০ হাজার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীকে বিনা পয়সায়
মামলা সহায়তা দিয়েছি। এজন্য আমি বিশ্বাস করি নেত্রী খোকা পরিবারকে
মূল্যায়ণ করবেন।