ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে
Published : Monday, 13 September, 2021 at 12:00 AM
স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবেমো. শফিকুল ইসলাম ||
করোনা মহামারীতে আমরা এক আতঙ্ক ও হুমকির মুখে বসবাস করছি। মানুষ দুশ্চিন্তায় আছে, ভাবছে কখন এই মহামারীর সমাপ্তি হবে? কিছুদিন আগে দ্রুত করোনার সংক্রমণ বেড়েছিল। কিন্তু এখন করোনার সংক্রমণ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমছে। এখনো করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সরকার ও মানুষ। কোভিড ১৯-এর কারণে অর্থনীতি, ব্যবসা, পর্যটন ও শিক্ষা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যদিও সবকিছু খুলে দেওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, তবুও অনেক আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারত শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুধু সঠিক কৌশল নির্ধারণ ও পরিকল্পনার অভাবে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে দেরি করেছি। তবে এখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ওই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।
এক বছর ছয় মাস বন্ধ থাকার পর আজ ১২ সেপ্টেম্বর দেশের স্কুল-কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তা অবশ্যই স্বস্তির খবর। কারণ ছেলেমেয়েরা ঘরে থাকতে থাকতে অসামাজিক হয়ে পড়ছে। শিশুরা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থার দ্বারপ্রান্তে ছিল। এখন সেখান থেকে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে পারবে। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করেছে অনেক আগেই। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এটি আমাদের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া একটু কঠিন হবে। তার পরও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্ষতি কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আসা সম্ভব। তবে আশঙ্কা থেকে যায় শিশুরা করোনার সংক্রমণে সংক্রমিত হয় কিনা। তাই স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে পাঠদান নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রুটিন তৈরি করতে হবে এবং তা যথারীতি মেনে চলতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রুটিন তৈরির একটি নির্দেশনা জারি করেছে। আশা করি, সব স্কুল-কলেজ ওই নির্দেশনা সঠিকভাবে কার্যকর করবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করবে। প্রথম পর্যায়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হবে প্রতিদিন। অন্যসব শ্রেণির শিক্ষার্থীর ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন।
স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তটি অভিভাবকদের মনে এক প্রকারের স্বস্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসছে। অনেক দিন পর স্কুল-কলেজ খুলবে বলে শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি হয়েছে। কারণ তারা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও গল্প করার সুযোগ পাবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা পালন নিশ্চিত করতে ও সঠিকভাবে অনুসরণের জন্য মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে। শুধু টিম গঠন করলেই হবে না, বাস্তবে তা কার্যকর করতে হবে- যাতে সব স্কুল-কলেজ এই বিষয়ে তৎপর থাকে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা আসার পর থেকেই সব জেলা ও উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় তৎপরতা বেড়েছে। পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আসবাব, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মাঠের গর্তে মাটিভরাটসহ ভাঙা দরজা-জানালা মেরামতের কাজ সম্পন্ন করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সবই ভালো উদ্যোগ।
সরকার ঘোষিত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, শিক্ষার্থীরা কতটা দূরত্বে বসবে- এসব বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা স্কুল-কলেজের নিতে হবে যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও যাতায়াতের সময় মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় চেয়ার-টেবিল ময়লা-আবর্জনায় ভরে থাকার কথা। তাই এখন এগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ বাস্তবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। করোনার সংক্রমণ এড়াতে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি মেনে চলতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে শিশুদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত স্কুল খোলার খবরে শিশুরা খুব খুশি। তারা স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে এক ভিন্ন ধরনের আনন্দ বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে খুব মজা পাবে তারা। শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষার অনিশ্চয়তা নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, এর অবসান হতে যাচ্ছে আজ। কারণ শিক্ষার্থীরা অলস সময় পার করেছিল এবং সেশনজট নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারায় তারাও মানসিকভাবে চাঙ্গা হতে পারবে। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনকে কোনোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলতে দেওয়া যাবে না। এ জন্য দরকার হবে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেশি সচেতন ও সতর্ক হওয়া- যাতে শিশুরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় থাকতে পারে। শিশুদের কোনো চাপ দেওয়া যাবে না পড়াশোনার জন্য। তাদের মানিয়ে নিতে হবে এবং শ্রেণিকক্ষে আসতে দিতে হবে, পড়াতে হবে। কিন্তু কোনো পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই। কারণ অনেক দিন পর তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার সুযোগ পেয়েছে। তাই তাদের স্কুল-কলেজে আনন্দ করতে দিতে হবে। তাদের বুঝিয়ে সব কাজ করিয়ে নিতে হবে এবং করোনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিহার্য।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যে ১১ দফা কর্মসূচি মানার নির্দেশনা দিয়েছে, এ বিষয়ে কোনো রকম ছাড় দেওয়া যাবে না। এর শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে পড়তে পারবে। তাই এই ১১ দফা মানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে শিক্ষকদের বেশি ভূমিকা পালন করা খুবই দরকার।

এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতি পূরণ করা। এ জন্য যথাযথ পদক্ষেপ ও সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে- যাতে খুব শিগগিরই এ ঘাটতি পূরণ করে ছাত্রছাত্রীদের সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারে সরকার। তারা শারীরিক দূরত্ব কী, তা নাও বুঝতে পারে। তাই তাদের সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হবে এবং নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর মনে করোনার আতঙ্ক থাকতে পারে। এই বিষয়ে তাদের সাহস ও মনোবল বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। উৎসবমুখর পরিবেশের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মোটিভেশনের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। তা হলে করোনাকালকে সহজেই মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে শুধু শিক্ষকদেরই দায়িত্ব তা নয়, বরং সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে- যাতে তারা সঠিকভাবে তাদের ছেলেমেয়েদের মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সতর্ক করেন। তা হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক কম ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসার পর যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা সহজেই স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ মানতে পারে। তবে এসব নির্দেশনার ব্যাপক প্রচার করতে হবে- যাতে সব শিক্ষক ও অভিভাবকের দৃষ্টিগোচর হয়। প্রয়োজনে এটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপানো যেতে পারে এবং সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হবে। এতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে সবাই এগিয়ে আসবে।
স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি সরকারের দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচি মানতে অবহেলা করে, তা হলে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ শিশুদের কোনোভাবেই করোনা ও ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রাখা যাবে না। যদি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, তা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু রাখতে কোনো রকম সমস্যা হবে না। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।