৫৪৪ দিন পর খুললো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বসিত পদচারণায় মুখর কুমিল্লার প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মাস্ক পরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখে ছিলো আনন্দের হাসি। বিদ্যালয় খোলার দিন ভোর থেকে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিলেন শিক্ষকরা। মর্নিং শিফটে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ক্লাস শুরু হয়। ডে শিফটে ক্লাস শুরু হয় বেলা ১১টায়। এদিন শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮০ থেকে ৯০শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। আর গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতি ছিল ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি।
এর আগে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্লাস শুরুর দিন সবাইকে তাপমাত্রা মেপে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। জেলার ২১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই নির্দেশনায় ক্লাস আরম্ভ হয়। সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল চকোলেট আর বেলুন। শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে ক্লাসে প্রবেশ করে। আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেন। প্রতিষ্ঠানে এসে অন্যরকম উচ্ছ্বাস কাজ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
কুমিল্লা মডার্ণ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে শাহেরিন সুলতানা হৃদি। দেড় বছর পর ক্লাস করতে গ্রাম থেকে আবার শহরে এসেছে সে। বহুদিন পর প্রাণের বন্ধুদের সাথে আড্ডা-গল্প হবে, শিক্ষকদের সাথে দেখা হবে, ক্লাস হবে; এ নিয়ে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস কাজ করছে তার মধ্যে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাহিদুল হাসান জানায়, ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা হবে। তার আগে প্রতিষ্ঠান খোলার দরকার ছিল। আজ অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের ছাত্র আহমেদ আল আইয়ান অর্ক জানায়, গৃহবন্দী থাকতে থাকতে হয়রান হয়ে গেছি। আজ সবাইকে দেখে ভালো লাগছে।
নগরীর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার বলেন, আমাদের ৯৫শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। এটা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, সকালে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। ১২৫৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২২২জন উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। তাদের দেখে প্রাণ ভরে গেছে।
এদিকে রাবেয়া আক্তার কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার গল্লাই দক্ষিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী। রাবেয়া তার প্রথম শ্রেনীতে পড়ুয়া বোন কুলসুমকে নিয়ে হাতে হাতে ধরাধরি করে প্রায় দে বছর পর স্কুলে আসছে। স্কুলে এসেই প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর শিক্ষকদের দেয়া মাস্ক পড়ে রাবেয়া ও তার বোন কুলসুম। তারপর দু বোনকে দেয়া হয় চকলেট। রাবেয়া আনন্দিত। আনন্দ প্রকাশ করে রাবেয়া বলে উঠে, আজকে আমার স্যার দুইডা চকলেট দিছে। একটা কইরা মাস্ক দিছে।
শিক্ষকদের দেয়া মাস্ক পড়তে গিয়ে ছিড়ে ফলে প্রথম শ্রেনীর ছাত্র সাফায়েত হোসেন। পরে আরেকটি মাস্ক এনে পরিয়ে দেন শ্রেণী শিক্ষক। এবার আনন্দিত সাফায়েত একটু পর পর মাস্কে হাত দিয়ে দেখে মাস্ক ঠিক আছে কিনা। আনন্দ ও উৎসুক দৃষ্টি শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে।
শিক্ষার্থীদের মাঝে মাস্ক, চকলেট বিতরণ করার এমন দৃশ্য দেখা যায় কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার গল্লাই দক্ষিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন জানান, দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে। আমাদের স্কুলে ২৯৪ জন শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেছে। তাদের আগমন যেন আনন্দময় হয় সে জন্য স্কুলটি রঙ্গিন বেলুন দিয়ে সাজিয়েছি। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের মাঝে চকলেট ও মাস্ক বিতরণ করেছি। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছি। মাস্ক ও চকলেট পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দিত। আমরা চাই ভয় নয় সচেতন হয়ে উঠুক আমাদের শিক্ষার্থীরা।
চান্দিনা গল্লাই দক্ষিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত অন্য স্কুলগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক, চলকেট বিতরণ করেছে। পাশাপাশি হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে।
চান্দিনার গল্লাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন জানান, আমার প্রতিষ্ঠানের দুই ক্লাসে উপস্থিত ৬০শতাংশের মতো। তারপরও ভালো লাগছে। আস্তেআস্তে শিক্ষার্থী বাড়বে।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ২১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন নির্দেশনা জারি থাকবে। প্রতিটা স্কুলে নির্দেশনা দেয়স হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যেন ফুল চকলেট দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়।