সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৫৫নং কুমিল্লা-৭ শূন্য আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত’কে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার হয়। এ খবরে এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে তাঁর সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।
এ আসনের উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাত প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ, লবিং-তদবির করেন। তবে বেশি আলোচনায় ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত খ্যাতনামা চিকিৎসক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত ও সদ্য প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এর একমাত্র ছেলে মুনতাকিম আশরাফ টিটু’র নাম। কার হাতে যাচ্ছে নৌকার বৈঠা? এমন প্রশ্নে উপজেলা জুড়ে নানা আলোচনা, সমালোচনা ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছিল।
শনিবার দুপুরে অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্তকে প্রার্থী ঘোষণা করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চিঠি প্রকাশ হওয়ার পর আনন্দের জোয়ারে ভাসে গোটা চান্দিনা।
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ১৯৫৩ সালের ১ অক্টোবর চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের মহিচাইল ডাক্তার বাড়িতে পিতা স্বর্গীয় কালাচাঁদ দত্ত ও মাতা স্বর্গীয় কিরন প্রভা দত্তের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে মেধাতালিকায় স্থান অর্জনসহ এমবিবিএস পাশ করেন। পরে তিনি রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও আমেরিকা থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৯ সাল থেকে দুই মেয়াদে ছয় বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে চিকিৎসা সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘স্বাধীনতা পদক-২০১২” লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক ও প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে অধ্যায়ণরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধকালীন কুমিল্লা জেলা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার সৈয়দ রেজাউর রহমান এর সাথে মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন। পরে মুজিব বাহিনরি আঞ্চলিক অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মনির একান্ত সবিবের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে তিনি মুজিব নগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে রাষ্ট্রীয় দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র লেখার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ কমিটিতে পরপর দুই বার সহ-সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল জানান, আমাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মনোনয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সকলকে। আমার সাথে যারা দলের মনোয়ন চেয়েছেন সকলেই আওয়ামী লীগের লোক। আমি চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীকে সাথে নিয়েই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো। দলে বা দলের বাহিরে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সেজন্য সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই চান্দিনা থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এর মৃত্যুতে কুমিল্লা-৭ সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ১৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন এবং আগামী ৭ অক্টোবর এ আসনে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।