মাসুদ আলম।। দেড়
বছর পর মহামারী করোনায় বন্ধ থাকা স্কুল খুলে দেওয়ার খবরে এক শ্রেণির
শিক্ষার্থী আনন্দে আছেন। আরেক শ্রেণির শিক্ষার্থী আছে কষ্টে। ১২ সেপ্টেম্বর
স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত খুশি এনে দিতে পারছে না কষ্টে থাকা এই শিশু
শিক্ষার্থীদের মনে। কারণ অস্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া এসব শিশু করোনায়
সৃষ্ট দরিদ্রতায় বই রেখে পুরোদমে কর্মজীবী শিশুতে পরিণত হয়েছে। ঝড়ে পড়া এ
শিক্ষার্থীদের কাছে টিকে থাকার সংগ্রামই এখন মুখ্য বিষয়। এদিকে দীর্ঘদিনের
করোনা সংকটে বন্ধ হয়ে পড়ে বেশকিছু কিন্ডার গার্ডেনসহ বিভিন্ন বেসরকারি
বিদ্যালয়। বন্ধ হয়ে পড়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীরাও জানেন
না, কবে থেকে আবারও তারা স্কুলে যেতে পারবেন।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন
সংস্থা সূত্রে জানা যায়, করোনা করোনা মহামারীতে সৃষ্ট দারিদ্রতা, পরিবারের
আর্থিক অস্বচ্ছতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে কুমিল্লা জেলায়
প্রায় ৪০ হাজার শিশু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশন এলাকায় ৬ হাজার। ঝড়া পড়া এ শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ স্কুলে ফিরে না
পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মহামারি করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের ঝরে
পড়ার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নির্ধারণে উন্নয়নমূলক সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায়
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন
কর্মসূচীর (পিইডিপি-৪) আওতায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন নামে একটি প্রকল্পের
মাধ্যমে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এই কার্যক্রম শুরু করে। তাদের লক্ষ্য
ঝরে পড়ার হার চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরানো।
কুমিল্লা
ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচীর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আশুতোষ চক্রবর্তী জানান,
করোনায় দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ঝরে পড়ার আশংকা রয়েছে। ঝড়ে পড়া
শিশু শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে গিয়ে দেখা গেছে গত বছর শিক্ষার্থীরা
যেপরিমান এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে যারা জমা দেয়নি
তারা আর বিদ্যালয়ে ফিরবে না। এরই প্রেক্ষিতে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ঝড়ে পড়া
শিক্ষার্থীদের জরিপ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যেসব
এলাকায় বিদ্যালয় বহির্ভুত শিক্ষার্থী রয়েছে তার একটি ম্যাপিং করে
শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাই করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী চিহ্নিত করবে।
তিনি আরও
জানান, জরিপে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে গ্রামাঞ্চলের
শিক্ষার্থীরা বেশি ঝরে পড়ার আশংকা রয়েছে। কিন্তু কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে
সে সংখ্যাটা নির্ধারণ করার জন্য এ জরিপ হচ্ছে।
আশুতোষ চক্রবর্তী বলেন,
চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত চালানো একটি জরিপে কুমিল্লা জেলায় ৪০ হাজার
শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার তালিকা করা হয়। তাদের মধ্যে ৬ হাজার কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশন এলাকায়। তবে এই তালিকাকে আমরা পূরণাঙ্গ বলছি না। কারণ তালিকাটি
যাচাই চলছে। জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে,
১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ঝড়ে পড়া তালিকায় স্বস্ব
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে। এই যাচাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলে
জেলার ঝড়ে পড়ার শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর বিষয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
ব্যুরো কাজ শুরু করবে।
কুমিল্লা জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো
সহকারী পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হক বলেন, করোনার কারণে উপার্জন কমে যাওয়ায়
হতদরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারগুলো শিশুদের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করছে। এতে এক
শ্রেণির ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা কম পারিশ্রমিকে শিশুদের নানা
কাজে যুক্ত করছেন। এতে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা বাড়েছে।
করোনায় ঝড়ে পড়া এই
শিক্ষার্থীদের আবারও স্কুলে ফেরাতে কাজ শুরু করেছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
মন্ত্রনালয়। সহযোগি হিসেবে ব্র্যাক কুমিল্লার দায়িত্ব নিয়েছে। তারা
এতোমধ্যে ঝড়ে পড়া শিশুদের চিহ্নিত করতে জরিপের সঙ্গে অবহিতকরণ সভা করছে।
ঝড়ে পড়ার একটি তালিকা করা হলেও সেটির যাচাই চলছে।
শিশুদের স্কুলে ফেরার
বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল মান্নান বলেন,
করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে
প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী। ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গে
মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সব ছাত্র-ছাত্রীকে আবার শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে স্কুল
শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাজ করতে হবে। বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করতে হবে।
তিনি
বলেন, খোলার দুই কিংবা আড়াইমাস পরও যদি কোন শিক্ষার্থী স্কুল না আসে,
তাহলে সেটিকে আমরা ঝড়ে পড়া ধরবো। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য শতভাগ শিক্ষার্থীকে
স্কুলে ফেরানো।