সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরু হওয়ায় স্কুল খোলার প্রথম দিন
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেছে। শিক্ষার্থী উপস্থিতি
কম হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এদিন ক্লাসে পাঠ
কার্যক্রমে অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে
এক সপ্তাহ পর প্রাথমিকে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
করোনা মহামারির
কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৭ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। এ সময়ে এক শ্রেণির
শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণিতে উঠে গেছে। এ কারণে তাদের শিক্ষক, সহপাঠী ও
ক্লাস বদলে গেছে।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশু শিক্ষার্থীরা সার্বক্ষণিক
মাস্ক পরে নির্ধারিত আসনে বসে আছে। হঠাৎ অনভ্যস্ত এ পরিস্থিতিতে তাদের করো
কারো মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তিও দেখা গেছে। মাঝেমধ্যেই অনেকে মাস্ক খুলে
নিজের আসন ছেড়ে পরিচিত বা সহপাঠীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। শিক্ষকরা
বারবার ছোট ছোট এ ছেলেমেয়েদের সতর্ক করে নিজ নিজ আসনে বসাচ্ছেন। দেশের
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্কুল খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের গড়
উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অনুপস্থিত
শিক্ষার্থীদের অভিভাবককে ফোন করে স্কুলে না আসার কারণ জানার চেষ্টাও করেন
বলে জানা গেছে।
এদিন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আইডিয়াল মডেল সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া
হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক মোছা. গুলনাহার খাতুন জাগো নিউজকে বলেন,
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনটি কক্ষে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। প্রথম দিন ৫০
শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়
প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে। সাড়ে ৯টা থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। অভিভাবকদের ফোন
করে ১০ জন করে ছাত্রছাত্রী ভেতরে প্রবেশ করানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম
দিনের ক্লাস হিসেবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়া,
কোভিড পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনা বিষয়ে আলোচনা, বাংলা ও গণিত পড়ানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বাংলা রিডিং পড়া ভুলে গেছে কি না, সেটা দেখতেই তাদের রিডিং
পড়ানো হয়েছে। অনেক দিন ক্লাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের নাম ভুলে
গেছে, শিক্ষকদেরও চিনতে পারছিল না। নতুন করে তাদের সবার সঙ্গে পরিচয় করানো
হয়েছে।
বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী খালিদ হাসান জাগো নিউজকে
বলেন, দেড় বছর ধরে স্কুলে আসতে পারিনি বলে খারাপ লেগেছে। এখানে এসে নতুন
শিক্ষক, নতুন সহপাঠী দেখে কিছুটা খারাপ লাগছে। সারাক্ষণ মুখে মাস্ক পড়ে
থাকতে হচ্ছে, খেলাধুলা করতে না পারায় মন কিছুটা খারাপ।
এদিন রাজধানীর
বেইলি রোডে একটি স্কুল পরিদর্শনে আসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
মো. জাকির হোসেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন ও তাদের নানা
পরামর্শ দেন। বিদ্যালয়টি সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ করা হয়েছে কি না,
সে দিকটিও খতিয়ে দেখেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছি। সবখানে সুন্দরভাবে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে। স্কুল চলাকালীন নিয়মিত আমাদের
মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
এক শিক্ষক জাগো নিউজকে জানান, তার ক্লাসের দ্বিতীয় শ্রেণির ৫৩ জন
শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩১ জন উপস্থিত হয়েছে। যারা আসেনি তাদের অভিভাবকদের ফোন
করে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কারো ব্যক্তিগত সমস্যা, কেউ গ্রামের
বাড়িতে রয়েছে, কেউ ঢাকা থেকে স্থানান্তর হয়ে গেছে, কেউ অসুস্থ, কারো
অভিভাবক অসুস্থ, কেউ অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে, কারো কারো অভিভাবক সংক্রমণ
আশঙ্কায় সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দেননি।
তিনি বলেন, অনেক দিন পর ক্লাসে
আসলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে
সারাক্ষণ মুখে মাস্ক পড়ে থাকতে হয় বলে তাদের কারো কারো অস্বস্তিবোধও হয়েছে।
ওই
স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জামিয়া আফসার জানায়, ক্লাসে এসে নতুনদের
দেখছে সে, অধিকাংশই তার অপরিচিত। খেলাধুলা করতে পারছে না, সারাক্ষণ সিটে
বসে থাকতে হচ্ছে। এজন্য তার কিছুটা মন খারাপ লাগছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল
আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা দিনভর বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। আমাদের
নির্দেশনা মোতবেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসে পাঠদান পরিচালিত হয়েছে। ক্লাসে আসতে পেরে
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অনেক খুশি। শিক্ষক-অভিভাবকেরা দ্রুত আরো বেশি
সংখ্যক ক্লাস শুরুর দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রথম দিন শিক্ষার্থী
উপস্থিতি কোথাও কোথাও প্রত্যশার চেয়েও বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অনেক
শিক্ষার্থীর ক্লাস না থাকলেও এদিন ব্যাগ গুছিয়ে অভিভাবকে নিয়ে বিদ্যালয়ে
হাজির হতে দেখা গেছে। কারো কোনো ধরনের অসুস্থতা থাকলে তাদের ক্লাসে আসতে
মানা করা হয়েছে। ধীরে ধীরে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি আরো বাড়বে। আগামী এক
সপ্তাহ মনিটরিং চলবে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে এক সপ্তাহ পর শ্রেণি ও ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানান ডিপিই মহাপরিচালক।