গত শুক্রবার শুরু হওয়ার কথা ছিল ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার পঞ্চম টেস্ট ম্যাচটি। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ছিল নির্ধারিত ভেন্যু। কিন্তু খেলা শুরুর ঘণ্টা তিনেক আগে ভারতীয় ক্রিকেটারদের অনুরোধে স্থগিত করে দেয়া হয় ম্যাচটি। সেই ম্যাচ কবে অনুষ্ঠিত হবে, কিংবা আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না সন্দেহ।
এমন পরিস্থিতিতে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের সিদ্ধান্তকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে আইপিএলের সঙ্গে। কারণ, আর মাত্র এক সপ্তাহ পরই শুরু হচ্ছে আইপিএলের দ্বিতীয় অংশের খেলা। ম্যানচেস্টার টেস্ট খেললে, অন্তত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিরিজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হতো তাদের।
এর ফলে ভারতীয় এবং ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের আইপিএলের শুরু থেকে খেলাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়তো। যে কারণে একটা অজুহাতে ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি সমালোচনাকারীদের। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি কৌশলী জবাব দিয়েছেন। তিনি গুজব উড়িয়ে দিয়ে করোনাভাইরাসের দোহাই দিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন পরবর্তী সময়ে ম্যাচটি আয়োজন করার।
ম্যানচেস্টার টেস্ট ম্যাচ বাতিল হওয়া নিয়ে মুখ খুললেন বিসিসিআই সভাপতি। টেস্ট ম্যাচ বাতিল হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন যুক্তি দেওয়া হচ্ছিল। মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে প্রথমে বলা হয়েছিল যে, সহকারি ফিজিও যোগেশ পরমার করোনা পজিটিভ হওয়ার পর ভারতীয় দল খেলতে অস্বীকৃতি জানায়।
এরপর ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টম হ্যারিসন টিম ইন্ডিয়ার প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রীর বিরুদ্ধে তার দলে করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনেন। কারণ শাস্ত্রী কিছুদিন আগেই তার বই প্রকাশের জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন; কিন্তু শাস্ত্রী এই পুরো বিষয়ে নীরবতা ভেঙে তা অস্বীকার করেছিলেন।
চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট দল ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। শেষ টেস্টটা তাই ছিল ইংল্যান্ডের সিরিজ বাঁচানোর মিশন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে পঞ্চম টেস্ট ম্যাচ বাতিল হওয়া নিয়ে একটি নতুন বিবৃতি প্রকাশ করেন।
কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফের সাথে সাক্ষাৎকারে আনুষ্ঠানিকভাবে সৌরভ স্বীকার করেছেন যে, ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা ম্যাচটি খেলতে অস্বীকার করেছিল এবং এর কারণে সিরিজের পঞ্চম এবং শেষ টেস্ট ম্যাচ বাতিল করা হয়।
সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা খেলতে অস্বীকার করেছিল; কিন্তু এ জন্য আপনি তাদের দোষ দিতে পারবেন না। ফিজিও যোগেশ পরমার খেলোয়াড়দের খুব কাছাকাছি ছিলেন। তিনি খেলোয়াড়দের সাথে অবাধে মিশে গিয়েছিলেন, এমনকি তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষাও করেছিলেন। তিনি তাদের মালিশও করতেন, এটা ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। খেলোয়াড়রা ভয় পেয়েছিল, যখন তারা জানতে পেরেছিল যে তার (টিম ফিজিও) কোভিড -১৯ পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। তারা আশঙ্কা করেছিল যে তারাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং তারা ভয় পেয়েছিল। জৈব বলয়ে থাকা সহজ নয়। অবশ্যই, আপনাকে তাদের অনুভূতিকে সম্মান করতে হবে।’
নিজেদের হতাশার কথাও জানান সৌরভ। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ যে, সিরিজটি এ পর্যায়ে এসে স্থগিত করতে হলো। এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ। ফলে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়টা সবার সামনে আনা হয়। আমরা তাদেরকে কোনোভাবেই জোর করিনি। তারাই মূলতঃ খেলতে চায়নি।’