গত ১১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫ টায় নজরুল ইন্সটিটিউট, কুমিল্লা কেন্দ্রে "ছোটগল্পের আসর" র আয়োজনে দেশ বরেণ্য কবি, গবেষক ও গল্পকার প্রফেসর আনোয়ারুল হক'র গল্পগ্রন্থ 'ফুলকন্যা' ও 'ক্রসফায়ার'র পাঠ-প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।
গল্পকার আনোয়ারুল হকের উপস্থিতে তাঁর গল্প নিয়ে আলোচনা করেন প্রখ্যাত কবি ও গল্পকার সাকিব লোহানী, ছোটগল্পের কাগজ 'গল্পকার' পত্রিকার সম্পাদক মু. মহিউদ্দিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি জহিরুল হক দুলাল, সি সি এন ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার কবি ও গবেষক অধ্যাপক আলী হোসেন চৌধুরী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর গোলাম মোস্তফা, নাট্যব্যক্তিত্ব ও লেখক শাহাজান চৌধুরী, কবি, গবেষক ও গল্পকার আহাম্মেদ কবীর, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রীতা চক্রবর্তী, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি'র ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও লেখক সাকিব উল ইসলাম, চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রীতা সরকার, দশম শ্রেণির ছাত্র ও পাঠক সাব্বির ওসমানী আইমান, 'সমতট পড়ুয়া'র প্রধান সংগঠক সাইফুল ইসলাম, 'সমতট পড়ুয়া'র সাধারণ সম্পাদক স্মরণ আচার্য, নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যম ললিতকলা কেন্দ্রের সভাপতি জাহিদুর রহমান মামুন এবং তরুণ কবি ও কথাশিল্পী মোহতাসিম প্রীতিম।
কবি ও গল্পকার সাকিব লোহানী বলেন, আনোয়ারুল হকের গল্পে আমাদের চারপাশের জীবন ও জীবনচরিত মূর্ত হয়ে ওঠে। তিনি 'ক্রসফায়ার' গ্রন্থের 'চাপ' গল্পটি নিয়ে আলেচনা করেন। তিনি কুমিল্লার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছোটগল্প লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন করার প্রস্তাব দেন।
'গল্পকার' পত্রিকার সম্পাদক মু. মহিউদ্দিন আনোয়ারুল হককে চেনা মানুষের রূপকার বলে আখ্যায়িত করেন। মহিউদ্দিন আরও বলেন, বাংলা ছোটগল্পের পটভূমিকে আরও বিস্তৃত করতে হবে। গার্মেন্টসে কাজ করা মেয়েটির জীবন থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের জীবনকে ছোটগল্পে নিয়ে আসতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি জহিরুল হক দুলাল আনোয়ারুল হককে আরও বেশি করে গল্প লেখার অনুরোধ করেন।
কবি ও গবেষক আলী হোসেন চৌধুরী আনোয়ারুল হকের গল্পের বিষয় বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক সাকিব উল ইসলাম বলেন, আনোয়ারুল হক তাঁর গল্পে সমসাময়িক সমাজ বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষা ও বর্ণনা সহজ। গল্পের গভীরে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয় না।
প্রফেসর গোলাম মোস্তফা আনোয়ারুল হকের 'কোরবানি" গল্পটি নিয়ে আলোচনা করেন। মানুষের মমত্বের ভিন্ন একটি দিক গল্পটিতে ফুটে উঠেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আনোয়ারুল হকের রম্য গল্প 'বিচি' নিয়েও মনোমুগ্ধকর আলোচনা করেন।
কবি ও গল্পকার আহাম্মেদ কবীর বিশ্ব ছোটগল্পের আধুনিক কাঠামোর আলোচনা করে বলেন, আনোয়ারুল হকের গল্পে এসব কাঠামোর উপস্থিতি নেই। তিনি আনোয়ারুল হকের কাছে এসব নিয়ে গল্প লেখারও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
নাট্যব্যক্তিত্ব ও লেখক শাহজান চৌধুরী আনোয়ারুল হকের 'প্রেমজ' গল্পগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেন। জাহিদুর রহমান মামুন আলোচনা করেন "লাল মাটি কালো মানুষ" গল্প নিয়ে।
গল্পকার আনোয়ারুল হক তাঁর গল্পের আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনা করেন ও আলোচকদের আলোচনার প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি আয়োকদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আমাকে নিয়ে এমন একটি আয়োজন করার জন্য আমি আনন্দ ও সম্মান বোধ করছি। আনোয়ারুল হক বলেন, কবিতা লেখা দিয়েই আমি সাহিত্য শুরু করেছিলাম কিন্তু এখন ছোটগল্প লিখে আনন্দ পাচ্ছি এবং যতদিন বাঁচি ছোটগল্পই লিখে যাব। তিনি আরও বলেন, গল্প লেখার কাঠামো নিয়ে আমার আগাম ভাবনা নেই, লিখতে লিখতেই একটা কাঠামো দাঁড়িয়ে যায়। আমি কাদের জন্য লিখি সে আমি জানি এবং তাঁরা যদি আমার লেখা পড়ে বুঝতে পারে তাতেই আমার সার্থকতা।
"ছোটগল্পের আসর"র সমন্বয়ক কবি ও আবৃত্তিকার রুবেল কুদ্দুস ও গল্পকার কাজী মোহাম্মদ আলমগীর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।আনোয়ারুল হকের গল্পগ্রন্থ থেকে পাঠ করেন 'কবিতাবৃত্ত কুমিল্লা'র সভাপতি ও লালমাই সরকারি কলেজের অধ্যাপক সুলতানা পারভীন দীপালি ও 'সমতট পড়ুয়া'র পরিকল্পনা সম্পাদক অভিষেক কর।
'ছোটগল্পের আসর"র পক্ষ থেকে আনোয়ারুল হকের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন কবি বিজন দাস ও কবি জাফরিন সুলতানা।
"ছোটগল্পের আসর" থেকে আনোয়ারুল হককে নিয়ে একটি স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, কবি ও সংগঠক ফখরুল হুদা হেলাল, কবি সৈয়দ আহমাদ তারেক, অধ্যাপক সমীর মজুমদার, 'উষষী'র সাবেক সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইউনুস উল্লাহ, কবি ও সাংবাদিক খায়রুল আহসান মানিক, বুড়িচং এরশাদ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এনামুল হক, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি'র অধ্যাপক ও লেখক আলমগীর মোহাম্মদ, কবি ও গল্পকার কায়সার হেলাল, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপক ও লেখক ফারুক আহমেদ, অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক শাহীন শাহ, অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হায়দার মজুমদার, অধ্যাপক সহদেব বীর, অধ্যাপক মিন্টু কর্মকার, অধ্যাপক দিলীপ পেদ্দার, অধ্যাপক রাহুল তারণ পিন্টু, অধ্যক্ষ বিধান চন্দ, সংগঠক নিজাম উদ্দিন রাব্বিসহ আরও অনেকে। সাহিত্যরসিকদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।
অনুষ্ঠানটির প্রচার সহযোগী ছিল ঈক২৪ঃা। চার ঘণ্টা ব্যাপী তারা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেন। বই বিপণন সহযোগী ছিল নির্বাচিত বই বিপণন কেন্দ্র, কুমিল্লা।