দেশে
করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছে, কিন্তু শঙ্কা কাটেনি। মঙ্গলবার সকাল ৮টার
পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৬.৫৪ শতাংশ।
এর আগেও শনাক্তের হার পাঁচের নিচে নেমেছিল, তারপর আবার তা বেড়ে ৩৫-৩৬
শতাংশে উঠেছিল। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে এক
প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ কোটি ৬৫
লাখ ১৩ হাজার ৬৬০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি জানান, দেশের
৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। ১২ বছর বা
তদূর্ধ্ব বয়সী সব ছাত্র-ছাত্রীকেও টিকা দেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী
জানিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত করোনা মহামারি প্রতিরোধে টিকাই প্রধান অস্ত্র,
যদিও তা শতভাগ কার্যকর নয়। এ পর্যন্ত ১২টি টিকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অনেক দেশ নিজেদের অনুমোদনেও কিছু টিকার ব্যবহার
করছে। আরো শতাধিক টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত চারটি টিকা
সংগ্রহ করেছে। আরো একটি টিকার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি টিকা
সংগ্রহের লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে দেশে টিকা উৎপাদনের
প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী
মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ২৪ কোটি টিকা দেশে এসে যাবে। প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার
হিসাবে এই টিকা পর্যাপ্ত হলেও বাংলাদেশকে আরো টিকা সংগ্রহ করতে হবে। কোন
টিকার কার্যকারিতা কত দিন থাকবে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। অনেকেই ধারণা করছেন,
বছরখানেক পর আবার টিকা নিতে হতে পারে। আবার কভিড-১৯ ভাইরাসটি যেভাবে
প্রতিনিয়ত রূপ বদলায় তাতে কবে সেই ভাইরাসটি টিকা প্রতিরোধী হয়ে উঠবে, তা-ও
বলা যাচ্ছে না। তাই টিকা সংগ্রহ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকতেই
হবে।
টিকা নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা মনে করারও কোনো কারণ
নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলসহ অনেক দেশেই ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ
কিংবা আরো বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। সেসব দেশেও আবার করোনা দ্রুত
ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণ আবার দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। তাই
বিশেষজ্ঞরা টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ
করেছেন। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে আকাশপথেই করোনাভাইরাস বাংলাদেশে
প্রবেশ করেছিল। অর্থাৎ বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রবাসী
বাংলাদেশিরা ব্যাপক সংখ্যায় দেশে ফিরেছিলেন। তাঁদের ঠিকভাবে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিন করা যায়নি। তাই দেশে করোনাভাইরাস ব্যাপক
আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। এমন যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
করোনা
মহামারির ভয়াবহতা এখনো বিদ্যমান। তাই টিকাদান কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে নিতে
হবে। টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে
হবে। পর্যাপ্ত পরীক্ষা, আইসোলেশন ও চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ওপর
গুরুত্ব দিতে হবে।