অজুর গুরুত্ব ও আমল
Published : Friday, 17 September, 2021 at 12:00 AM
গাজী মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির ||
অজু
ছাড়া নামাজ হয় না। তাই নামাজে দণ্ডায়মান হওয়ার আগে অজু করতে হয়। কোরআনে
পাকে ইরশাদ হচ্ছে , ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন
তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা
মাসেহ করো এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করো’ (সূরা মায়িদাহ : ৬)। অজুর
মধ্যে আল্লাহ তায়ালা এত নেয়ামত বরাদ্দ রেখে দিয়েছেন, যা শুনলে অনেকে হয়তো
আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাবেন। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে
নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু’ (মুসনাদে আহমাদ-৩ : ৩৪০ পৃ.)।
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু থাকা সত্ত্বেও নতুন অজু করে সে ১০টি নেকি
লাভ করে’ (মু.হা. অজুর ফাজায়েল : ২৫৩)।
অজুর বরকতে বান্দার অতীত জীবনের
গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হযরত আমর ইবনে আবাসা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
আমি একদিন প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অজুর ফায়দা কী? তিনি বলেন, ‘যখন
তুমি অজু করবে ও দুই হাতের কবজি পরিষ্কার করে ধৌত করবে, তখন গোনাহসমূহ
আঙুলের অগ্রভাগ ও নখ দিয়ে বের হয়ে নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করবে, মুখ ও
হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত
ধৌত করবে, তখন তুমি যেন তোমার গোনাহগুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলে। এরপর
যখন তুমি তোমার চেহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জমিনে রাখবে, তখন তুমি
এমনভাবে গোনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিল’
(নাসায়ি : ১৪৭)।
অজুকারী ব্যক্তি হাশরের ময়দানে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত
হবেন। হাশরের ময়দানে উপস্থিত সবাই অজুকারী ব্যক্তির দিকে বারবার তাকাতে
থাকবে। অজুকারী ব্যক্তির হাত-পা ও মুখমণ্ডল চমকাতে থাকবে। হযরত নোয়াঈম
মুজমির রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু হোরায়রা রা:-এর সাথে মসজিদের
ছাদে উঠলাম। তিনি অজু করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসে আমার
উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল
উজ্জ্বল থাকবে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার
ইচ্ছা রাখে সে যেন তা করে নেয়’ (বোখারি : ১৩৮)।
অজুকারীদের অনেকে
দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। যেমনটি হযরত বেলাল রা: পেয়েছিলেন।
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজের সময় হযরত
বেলাল রা:কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে বেলাল! তুমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে আমল করেছ তার কথা আমাকে বলো! কেননা, জান্নাতে আমি
তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। হযরত বেলাল রা: বললেন, দিন বা রাতে যখনই
আমি অজু করি, তখনই আমি সামর্থ্য (তাহিয়্যাতুল অজু) অনুযায়ী নামাজ পড়ি। এ
ছাড়া আর তেমন কিছুই করি না’। (বোখারি : ১০৮৩)।
অজু শেষে কালেমা শাহাদাত
পাঠকারী ব্যক্তির জন্য আরো সুসংবাদ রয়েছে। অজু শেষ করে যে কালেমা শাহাদাত
পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। প্রিয় পাঠক , অজু
হচ্ছে পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম পদ্ধতি এবং নামাজ বা সালাত আদায়ের
গুরুত্বপূর্ণ আমল।সুতরাং আসুন, আমরা সব সময় অজু অবস্থায় পবিত্র থাকার
চেষ্টা করি।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক ও গবেষক এবং টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপক, কুমিল্লা।