তানভীর দিপু ।।
কুমিল্লা
নগরী জুড়ে যানবাহনের যে বিশৃঙ্খলা এর দায় নিতে চায় না কেউ। সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে যানবাহন চালকরাও দায় চাপাতে চায় একে অপরের উপর।
যানজট সমস্যা নিরসনে তারা সহযোগিতা চায় একে অপরের। তবে নগর জুড়ে দীর্ঘদিনের
এই সমস্যা তো কমছেই না, দিনে-রাতে তা যেন আরো প্রকট হয়ে উঠছে। কান্দিরপাড়,
চকবাজার, রাজগঞ্জ,শাসনগাছা, টমছম ব্রীজ ছাড়াও নগরীতে আরো অন্তত ৭টি
পয়েন্টে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের। এছাড়া রিকশা, ইজিবাইক,
সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা এখন দ্বিগুণের বেশি। তার উপর শহরে বেড়েছে সড়কের
আশেপাশে ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। অন্যদিকে স্বল্প জনবল নিয়ে সড়কে
শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের নাভিশ্বাস। সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক
বিভাগ এবং প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণের অংশগ্রহনে
সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় ওয়ার্ড
কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ প্রচেষ্টাও অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে বলে মনে
করেন সিটি কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লায় অন্তত ৫ বছর যানজট নিয়ন্ত্রনে কাজ
করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জানান, দিন দিন
নগরীতে যে পরিমানে যানবাহন বাড়ছে তা ধারণ ক্ষমতার বাইরে। তার উপর নগরীতেই
বাড়ছে সিএনজি ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড। কান্দিরপাড় আর চকবাজার এলাকায়
যানবাহনগুলো সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়। আমরা শৃঙ্খলারক্ষায় কাজ করতে পারবো,
কিন্তু শহরে যানবাহন চলাচলের যে সংখ্যা সেটার দায় কে নিবে?
কুমিল্লা
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক এমদাদুল হক বলেন, ৮৫ জন কর্মকর্তা ও ট্রাফিক
সদস্য নিয়ে কাজ করছে কুমিল্লা পট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু শুধু কান্দির পাড়েই
এক শিফটে কাজ করে ২জন অফিসারসহ ৬ জন। চকবাজারের মত জায়গায়ই আমাদের জনবল
সংকট থাকে, সেখানে কাজ করে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা। অন্যান্য জায়গায়
প্রয়োজন মত জনবল রাখার চেষ্টা চলে। কখনো কখনো এক পয়েন্ট থেকে অন্য পয়েন্টেও
সদস্যদের পাঠানো হয়। পুরো শহরেই ধারণ ক্ষমতার বেশি যানবাহন চলাচল করে।
তিনি
আরো জানান, ডিসি রোডে- সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় সংলগ্ন সিলভার ডেপলপরারে
পাশের স্কুল, সালাহউদ্দিন মোড়ে- সদর হাসপাতালে টিকা সংক্রান্ত কারনে বিপুল
সংখ্যক মানুষের চলাচল, টমছম ব্রীজ- রাস্তার উপর সংস্কারের জন্য
অপরিকল্পিতভাবে ইট ফেলে খানাখন্দ তৈরী, বাদুরতলা ফয়জুন্নেছা স্কুলের সামনে
রাস্তার উপরই- বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে রাখা, শাসনগাছায়- বাসটার্মিনালে
ধারণক্ষমতা বেশি ভারী যান বাহনসহ সর্বোপরি রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজি
অটোরিকশা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়ায় এই বিশৃঙ্খলা তৈরী হচ্ছে।
এছাড়াও
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝাউতলা ও রামঘাট এলাকায় রাস্তার উপরেই
সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল এবং
শপিংমলের সামনে এলোমেলো পার্কিং প্রতিনিয়ত যানজটের কারন।
কুমিল্লার
স্থায়ী বাসিন্দা রিকশা চালক আমজাদ হোসেন বলেন, গত ৫ বছরে রাস্তা তো বড় হয়
নি বা বাড়ে নি- কিন্তু শহরে কি পরিমান রিকশা বেড়েছে তার খবর কে রাখে? তার
উপর শহরের উপরেই সিএনজি স্ট্যান্ড। রাস্তার উপর হুটহাট দাঁড়িয়ে থাকে
ইজিবাইক। রাস্তার উপরই হুটহাট ইজিবাইক ঘুরানো- যানজট হবে না তো কি হবে!
কান্দিরপাড়
থেকে আলেখারচর রুটের সিএনজি চালক আবদুল কাদের বলেন, আমার স্ট্যান্ডে গাড়ী
বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রত্যেকটা সিএনজি স্ট্যান্ডেই গাড়ী বাড়ছে। আর
ব্যাটারিচিালিত রিকশা কয়টা আছে শহরে কে জানে। এগুলো নিয়ন্ত্রনের কেউ নেই।
ইজবাইক
চালক আমিনুল জানায়, শুধু নজরুল এভিনিউ রাস্তার মাথায় যে পরিন ইজিবাইক
দাঁড়ানো থাকে, কয়দিন আগেও এর অর্ধেক ছিলো। গ্রাম থেকেও যদি শহরে গাড়ী আসে
আসে তাহলে শহরের ইজিবাইকগুলো কই যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনোহরপুর
এলাকার ভ্রাম্যমান কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, সব দোষ মনে হয় ভ্রাম্যমান হকারদের।
পুরোনো হকারদের বাইরে এখন হকার বেড়েছে অন্তত একশ। নতুনরাই কোন নিয়ম মানে
না, ঝামেলা করে বেশি।
তেলিকোনার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী নাসির উদ্দিন
বলেন, চকবাজার থেকে কান্দিরপাড় সকাল বিকাল যাতায়াত করতে অন্তত ৪০ মিনিট সময়
লাগে, যা সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের পথ। চকবাজার পাড় হতেই লাগে ২০ মিনিট। এছাড়া
গোয়ালপট্টি, রাজগঞ্জ, মনোহরপুর এলাকায় যদি টানা যানজট থাকে তাহলে
একঘন্টারও বেশি সময় লাগে। বিকল্প রাস্তায় ঘুরে আসতে ভাড়া লাগে দ্বিগুণ।
অনেক সময় রিকশা এই পথে যানজটের ভয়ে আসতেই চায় না। কুমিল্লা নগরবাসীর
দীর্ঘদিনের সমস্যা কবে শেষ হবে ? কে এর দায় নিবে?
সিটি কর্পোরেশনের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীর সড়কের উপর যেসব
অবৈধ স্থাপনা আছে সেগুলো সরিয়ে দেয়া হবে। ট্রাফিক পুলিশ যদি সিটি
কর্পোরেশনের সহযোগিতা চায়- প্রশাসনিক বা লজিস্টিক সাপোর্ট সব দেয়া হবে।
তিরি আরো বলেন, নিয়মিত ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা
কাজ করতে পারেন। তারা যেন রাস্তার উপর না বসে সুশৃঙ্খলভাবে কোন একটি
নির্ধারিত জায়গায় বসতে পারে সে ব্যাপারে অবশ্যই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের
সহযোগিতা দরকার।