কুমিল্লা মুরাদনগরের বাঙ্গরায় জুমার খুতবার আজান দেওয়া নিয়ে মুসল্লিদের দু’পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় কুড়াখাল গ্রামে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের পর তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে কুড়াখাল গ্রামের বাইতুন নুর জামে মসজিদটি। বর্তমানে এ মসজিদে নামাজ ও আজান বন্ধ রয়েছে। মুসল্লিদের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বাঙ্গরা বাজার থানা যুবলীগের সদস্য মোঃ শাহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন কুড়াখাল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা কামরুজ্জামান রেজবী। এ খতিবের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় মসজিদের ভিতরে জোরে ও আস্তে আজান দেওয়া নিয়ে রেজভী ও সুন্নি মুসল্লিদের দু’পক্ষের সংঘর্ষে কুড়াখাল গ্রামের আবদু খানের ছেলে আবু হানিফ খান (৩৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় গুরুত্বর আহত হয়েছেন হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ মুসল্লিগণ।
সংঘর্ষে আবু হানিফ খান নিহতের ঘটনায় স্ত্রী বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাঙ্গরা বাজার থানা যুবলীগের সদস্য মোঃ শাহিন ও বাঙ্গরা বাজার থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে আটক করে পুলিশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত আবু হানিফ কৃষিকাজ করতেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তার মধ্যে ৮ মাসের একটি শিশু সন্তানও রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই মসজিদে রেজভী ও সুন্নি মুসল্লিদের দুইপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের ফতুয়া দেয়া নিয়ে রেষারেষি চলছিল। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ আদায়ের আগে খুতবার আজান মসজিদের ভিতরে দেয়াকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায় রেজভী সমর্থক বাঙ্গরা বাজার থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডিজে কালাম ও যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহিন ভূইয়াসহ একদল যুবক দেশিও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সুন্নি সমর্থকদের উপরে হামলা চালায়। এসময় ডিজে কালামের ছুরিকাঘাতে মুসল্লি আবু হানিফ খান ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। গুরুত্বর আহত হয় একই গ্রামের গফুর সরকারের ছেলে আবুল খায়ের (৪৮) ও মোতালেব খানের ছেলে ইমন খান (২৪)। পরে আহতদের উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, হানিফের স্ত্রীর মামলায় বাঙ্গরা বাজার থানা যুবলীগের সদস্য মোঃ শাহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে কুড়াখাল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে মসজিদে তালা থাকলেও নামাজ ও আজানের সময় খুলে দেওয়া হচ্ছে।