মাসুদ আলম ||
অপরিকল্পিত
নগরায়নে চলমান জলাবদ্ধতা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিনের
সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হালকা বৃষ্টিতেই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে শহর। পানি
নিষ্কাশনে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ করলেও পরিকল্পনার অভাবে তার
সুফল পাচ্ছেন না নগরের বাসিন্দারা। এদিকে নতুন করে সড়কের যানজট কুমিল্লা
নগরীর নিত্যদিনের সমস্যা। এই সমস্যা নগরজুড়ে জনভোগান্তি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে
সীমান্ত অতিক্রম করে মাদক কুমিল্লার স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও
তরুণ-যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। জেলা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও মাদক
নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে গেলেও সমাজ থেকে তা
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অলিগলি ও দোকানপাটে হাত বাড়ালেই সহজেই মিলছে
মাদক। এছাড়া কুমিল্লার পাসপোর্ট ও বিআরটিএ অফিসে দালালদের উৎপাত বেড়েছে।
প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।
সোমবার (১১ অক্টোবর) কুমিল্লা
জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় আয়োজিত
সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের অংশগ্রহণে আলোচনা সভায় উপস্থিত
কুমিল্লার সুধী সামাজের ব্যক্তিবর্গ এই অভিযোগগুলো করেন।
সভায় কুমিল্লা
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান এনডিসি। তিনি বলেন, সুশাসন
প্রতিষ্ঠায় সবাইকে দুর্নীতি মুক্ত থাকতে হবে। নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত থেকে
সেবা প্রত্যাশিদের সেবা প্রদানের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতি মুক্ত
ঘোষণা করে নিজেকে গুটিয়ে রাখলে সেবা প্রত্যাশিরা তাদের কাঙ্খিত সেবা থেকে
বঞ্চিত হবেন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে না।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য
রাখেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ, কুমিল্লা
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী
কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল
তালুকদার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর খান,
কুমিল্লা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জামাল নাছের চৌধুরী, কুমিল্লা জেলা পিপি
এডভোকেট জহিরুল হক সেলিম, কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক এডভোকেট গোলাম ফারুক,
অধ্যক্ষ শান্তি রঞ্জন ভৌমিক, অধ্যাপক হাসান ইমামান মজুমদার ফটিক, নারী
নেত্রী দিলনাশি মহসিন, সনাক কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুমা জেনু, সনাক
কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শাহ মোঃ আলমগীর খান, সাপ্তাহিক অভিবাদন
পত্রিকার সম্পাদক আবুল হাসানাত বাবুল, দৈনিক কুমিল্লার কাগজের
সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়।
সভায় প্রায় অধিকাংশ সময়জুড়ে কুমিল্লার শহরের
সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা ছিলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সেই সঙ্গে নগরীর
যানজট এবং অবৈধভাবে সড়কের দুইপাশের ফুটপাত দখলের বিষয়টিও উঠে আসে।
প্রথমেই
পরামর্শমূলক বক্তব্যের শুরুতে জলাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরে কুমিল্লার
ইতিহাস গবেষক এডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, কুমিল্লা শহরের জলাবদ্ধতা
দীর্ঘদিনের সমস্যা। সিটি কর্পোরেশন সারা বছরই সড়ক ও ড্রেন খোঁড়াখুঁড়িতে
ব্যস্ত থাকেন। অধিকাংশ প্রকল্পের টাকা এই ড্রেন নির্মাণেই ব্যয় করে আসছেন।
কিন্তু তাতেও জলাবদ্ধতা নিরসনে সুফল নেই। তার কারণ সড়ক থেকে এক ফুট উঁচু
করে অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণে জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিবর্তে জনভোগান্তির
কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে বলে তিনি দাবি করেন।
সনাক
কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শাহ মোঃ আলমগীর খান বলেন, কুমিল্লা শহরের
যানজট নিত্যদিনের সমস্যা। শহরজুড়ে সৃষ্ট যানজটে মানুষের জনদুর্ভোগ ক্রমেই
বাড়ছে। নগরীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে বাসিন্দাদের সময়ের দাবি।
আমরা
কুমিল্লার মানুষ ভালো নেই উল্লেখ করে লেখক-সাহিত্যিক ও সিনিয়র সিটিজেন
শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন, জলাবদ্ধতায় নাকাল কুমিল্লার সাধারণ মানুষ। হালকা
বৃষ্টিতেই সড়ক ডুবে বাসা-বাড়িতে পানি উঠছে। সড়কে বের হলেই যানজটের
ভোগান্তি। পাড়া মহল্লার অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাদক। জলাবদ্ধতা, যানজট ও
মাদক এছাড়াও একাধিক সমস্যায় কুমিল্লার মানুষ ভালো নেই। এই সমস্যাগুলো
সমাধান না হলে কুমিল্লার মানুষের বাঁচার উপায় নেই।
বক্তব্যে কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুর ইসলাম বলেন,
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরশন কাজ করে যাচ্ছে। ড্রেন নির্মাণে বরাদ্দকৃত
অর্থ স্বল্প পরিমাণের হওয়ায় সঠিক সময়ে ড্রেনের কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নতুন প্রকল্পের অর্থে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করবে সিটি কর্পোরেশন।
সভাপতির
বক্তব্যে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান জানান, কুমিল্লার জেলা
প্রশাসক হওয়ার আগেই শুনেছি কুমিল্লা নগরীর অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। গত
কয়েক দিনে আগে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণ খুজতে রাস্তায় নেমে দেখি গাড়ির
চাকা পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কশনের অধিকাংশ রাস্তা বন্ধ হয়ে
পড়েছে। সেগুলো চিহিৃত করে সমাস্যা সমাধান করতে হবে।
কুমিল্লার
জলাবদ্ধতা ও যানজটসহ নগরীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বাসিন্দাদের নিয়ে বসে
আলোচনার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে কাজ করার আহবান জানিয়ে প্রধান অতিথির
বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান এনডিসি বলেন, যে কোন
সমস্যা সমাধানে আলোচনা করলে একটি সুন্দর পরিকল্পনা তৈরি হয় কাজ করার জন্য।
আগামীতে যাতে নগর উন্নয়নে কুমিল্লায় সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পিত উন্নয়নমূলক
কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেন।