ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বন্ধুকে বিদায় জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আবুল হায়াত
Published : Tuesday, 12 October, 2021 at 12:39 PM
বন্ধুকে বিদায় জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আবুল হায়াতশিক্ষক-অভিনেতা ড. ইনামুল হকের মরদেহ তখনও এসে পৌঁছায়নি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। বর্ষীয়ান আরেক অভিনেতা আবুল হায়াত তখন বিদায় মঞ্চের ওপরে রাখা শ্রদ্ধাঞ্জলি খাতাটি আনমনে উল্টাচ্ছিলেন। এরপর বিমর্ষ চোখে কিছুক্ষণ ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। 

স্পষ্ট হলো, চোখজোড়া তার ঝাপসা। মুছে নিলেন চোখ, সামলে নিলেন চারপাশের কোলাহল দেখে। বললেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব ৫৫ বছরের। আনন্দের এই সংখ্যাটি এখন শুধুই শোকের।’ 

 
ঠিক তক্ষুনি এনামুল হকের মরদেহ আনা হলো শ্রদ্ধা-মঞ্চে। বন্ধুর শিওরে কোনোরকমে হাতের ফুলগুলো সঁপে দিলেন আবুল হায়াত। আর অঝোরে কাঁদতে লাগলেন তিনি। মেয়ে নাতাশা হায়াত বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়ে কিছুটা সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু হলো না।

গণমাধ্যমকর্মীরা কাছে যেতেই বললেন, ‘আর পারছি না। কিছুই বলার নেই।’

এরপর শ্রদ্ধাঞ্জলি মঞ্চের পেছনে এসে মিনিট দশেক বসলেন। তখনও তার চোখবেয়ে ঝরলো বন্ধু হারানোর অশ্রু।

আজ (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে দেশের অন্যতম নাট্যজন ও শিক্ষক ড. এনামুল হকের মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানেই সর্বস্তরের জনগণ তাকে শ্রদ্ধা জানান।

উপস্থিত হন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাক্তার জাফরুল্লাহ, অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, তানজিকা, নাতাশা হায়াত, মোমেনা চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, মীর সাব্বির, নির্মাতা অরণ্য আনোয়ারসহ অনেকে।

শ্রদ্ধা নিবেদনের এই আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

উপস্থিত ছিলেন ইনামুল হকের দুই জামাতা অভিনেতা লিটু আনাম ও সাজু খাদেম এবং দুই মেয়ে হৃদি হক ও প্রৈতি হক।

 
পারিবারিক সূত্র জানায়,  শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে এই নাট্যজনকে।

বর্ষীয়ান এ অভিনেতা ১১ অক্টোবর সকালে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। 

ড. ইনামুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলার মটবী এলাকায়। তার বাবা ওবায়দুল হক ও মা রাজিয়া খাতুন। ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি লাভ করেন ইনামুল হক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। নটরডেম কলেজে পড়াশোনাকালীন সময়েই তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন।

১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসেই ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র যাত্রা শুরু হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়ে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। নাটকটি ছিল আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। এরপর দলটির হয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯৫ সালের তিনি এই দল থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। নিজ দলের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘গৃহবাসী’। ১৯৮৩ সালে লেখা হয় নাটকটি। ঢাকার মঞ্চে বেশ আলোচিত নাটক এটি।

 
এ পর্যন্ত টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক লিখেছেন তিনি। তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’।

গুণী এই অভিনেতার পুরো পরিবার নাটকে সম্পৃক্ত। তার স্ত্রী লাকী ইনামও কিংবদন্তি অভিনেত্রী। মেয়ে হৃদি হক নির্দেশক এবং অভিনেত্রী। তার জামাই অভিনেতা লিটু আনাম। ড. ইনামুলের অপর মেয়ে প্রৈতি হকের স্বামী সাজু খাদেম।