ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
 ৫ তলার অনুমোদন নিয়ে স্কুলের পাশে ১১ তলা ভবন!
বাড়িত অংশ ভাঙছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন
Published : Wednesday, 13 October, 2021 at 12:00 AM
 ৫ তলার অনুমোদন নিয়ে স্কুলের পাশে ১১ তলা ভবন!তানভীর দিপু: কুমিল্লা নগরীর ১১ নং ওয়ার্ডে দেশওয়ালিপট্টিতে ৫ তলার অনুমোদন নিয়ে গড়ে উঠেছে ১১তলা ভবন। মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের সীমানা ঘেঁষা এই ভবনটিতে ঝুঁকি নিয়েই নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছিলো বছরের পর বছর। তালুকদার হাউজ নামে ওই ভবনটির মালিক সাদেকুল ইসলাম তালুকদার কুমিল্লা পৌরসভা থাকাকালীন সময়ে জায়গাটিতে ৫তলা ভবনের অনুমোদন নেন। পরবর্তীতে দেড় বছর পর থেকেই একটু একটু করে ৫ তলার উপর গড়ে তোলেন আরো ৬ তলা। গলির ভেতরে এবং ভবনের সামনে অন্য ভবন থাকায় দীর্ঘ দিন প্রশাসন ও এলাকাবাসীর চোখে পড়েনি এই ভবনটি। পরে নজরে আসায় নকশা বহির্ভুতভাবে এবং ভবন নির্মাণ আইন অমান্য করে নির্মাণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ভবন মালিককে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার চিঠি দেয় সিটি কর্তৃপক্ষ। এর পর কয়েকবার ভবনের সামনে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হলেও টনক নড়েনি তালুকদার হাউজের মালিকের। এমনকি বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করেও দমানো যায়নি ভবনের মালিককে। একে একে অতিরিক্ত ৬তলা তৈরী করেন ৫ তলার উপর। সর্বশেষ গত সোমবার সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ভবনের মালিককে আবারো চিঠি দেয় এবং গতকাল মঙ্গলবার তাকে ওই স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু সকালে কুমিল্লা সিটি মেয়রসহ সিটি কর্তৃপক্ষ ওই ভবনে গিয়েও পায়নি মালিককে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও জেনারেটর ব্যবহার করছে ভবন মালিক। ভবনের নিচ তলায় ইট বালু সিমেন্টের মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিতলায়ই চলছে কিছু না কিছু নির্মান ও মেরামতের কাজ। অপরিচ্ছন্ন এবং ঘিঞ্জি ভবনটির ৫ম তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্ল্যাটের দরজায় তালাবদ্ধ। কেউ এসব ফ্ল্যাটে থাকে কি না বুঝার কোন উপায় নেই।
ভবনটির ম্যানেজার মিজানুর রহমান জানান, ভবনের মালিক বাসায় নেই। একটি পরিবার ৭ তলার বাসায় ভাড়া থাকে। তাদেরকেও চলে যেতে বলা হয়েছে। নির্মান কাজ আপাতত বন্ধ আছে।  
ভবনের ভাড়াটিয়া ৭তলার বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে আমরা জানি। আমরা ভবন ছেড়ে দিচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত উল্লেখ করে ব্যানার ঝুলানো দেখেছি। কিন্তু ৫ তলার উপর আরো ৬ তলা যে অবৈধ সেটা বুঝতে পারিনি। এত ঝুঁকি নিয়ে ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে! আমরা অবাক! সিটি কর্পোরেশন আরো আগেই এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা দরকার ছিলো। আর এই ভবনের ঠিক পেছনেই মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ক্লাশ করছে শত শত শিক্ষার্থী।
মনোহর পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালেহা বেগম জানান, কয়দিন আগেও এই ভবন থেকে রড পরে স্কুলে টয়লেটের উপর। অল্পের জন্য এক শিক্ষার্থী বেঁচে যায়। বারবার সিটি কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে বলেও এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে পারি নি। ভবনের সামনে সিটি কর্পোরেশন পরিত্যক্ত ব্যানার লাগিয়ে দিলেও ভবনের মালিক ব্যানার খুলে আবারো নির্মান কাজ শুরু করে। কিভাবে যে এই ভবন নির্মাণ কাজ চলে বুঝিনা। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই এক হাজার শিক্ষার্থী এই ভবনের পাশে ক্লাশ করছে।  
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সার্ভেয়ার আবুল কাশেম ভুইয়া জানান, ভবনের মালিককে বারবার নোটিশ দেয়ার পরও তিনি তা মানে নি। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভবনের বর্ধিত অংশ মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছে সিটি কর্তৃপক্ষ। ঝুঁকিপূর্ন এই ভবনের ঠিক পেছনেরই মনোহরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তার আশে পাশেই অন্যান্য আবাসিক-বানিজ্যিক স্থাপনা আছে। ৫ তলার উপর আরো সুউচ্চ ৬ তলা নির্মান আশেপাশের মানুষের জন্য খুবই ঝুঁকি পূর্ন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম জানান, সিটি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নগরীতে যেসব ভবন নকশা বহির্ভুত এবং নকশার অুনুমোদন ছাড়া গড়ে উঠেছে সেগুলোর তালিকা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে প্রক্রিয়াটিতে ধীরগতি থাকলেও এই ব্যবস্থা চলমান থাকবে।