Published : Thursday, 14 October, 2021 at 12:00 AM, Update: 14.10.2021 1:47:18 AM
তানভীর দিপু:
৫
মাসে সাড়ে ৩ কোটির টাকা মূল্যের নানান ধরনের সবজির চারা বিক্রি হয়
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সমেশপুর ‘চারা গ্রামে’। গ্রামের
অধিকাংশ পরিবার সবজির চারা উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকায় গ্রামটির নামও পড়ে
গেছে ‘চারা গ্রাম’ নামেই। সারা দেশে শীতকালীন সবজি আবাদে কুমিল্লার এই
গ্রামের চারার চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রাম থেকে চারা নিতে
আসেন সমেশ পুরে। গ্রামের অনেক যুবকই চারা চাষ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তবে
বীজের অতিরিক্ত দাম আর বৈরী আবহাওয়ায় এবছর লোকসানে আশংকায় আছে চারা চাষীরা।
লোকসানের আশংকায় থাকলেও চাষীদের প্রত্যাশা, কমে আসবে বীজের দাম। বৈরী
আবহাওয়াতেও যেন উন্নত চারা উৎপাদন করা যায় এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে কৃষি
সম্প্রসারণ বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সমেশপুরে কেউ কেউ চারা
চাষ করছে ৩ যুগের বেশি সময় ধরে। বাপ-দাদা থেকে পাওয়া এই কৃষিকাজ সফলতার
সাথেই চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ছোট পরিসর থেকে এখন বৃহৎ পরিসরে নার্সারি করে
চাষ হচ্ছে শাক-সবজির চারা। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, তালবেগুন, মরিচসহ
নানান ধরণের সবজির চারা উৎপাদন করছেন কৃষকরা। গোমতী নদীর অববাহিকা ও লালমাই
পাহাড়ের পাদদেশের গ্রামটির বেলে দো আঁশ মাটিতে বছরের ৫ মাসে উৎপাদিত সবজির
চারাগুলো দেশের অন্যান্য জায়গার চারার তুলনায় পুষ্ট এবং ফলনে ভালো। বাংলা
মাস ভাদ্র থেকে শুরু হয় এই চারা উৎপাদনের প্রক্রিয়া। নার্সারিতে মাটির
বেড-ছাউনি তৈরী সহ নানান কাজে প্রতিটি জমির মালিকের নার্সরিতে কাজ করে
অন্তত ৩ জন কৃষি শ্রমিক, সাথে থাকের পরিবারের সদস্যরা। আগাছা বাছাই, পানি ও
সার দেয়া থেকে শুরু করে নতুন বেড তৈরী এবং আবার বীজ রোপন এভাবেই চলতে থাকে
কার্যক্রম। প্রতি মৌসুমে চারা নার্সাারিতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ
করে তিন লাখ পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। জমির পরিমান বেশি হলে বাড়ে বিনিয়োগও।
তবে এই চারা চাষীদের মূল প্রতিবন্ধকতা এখন বেশি দামের বিদেশী বীজ।
সমেশপুরের চারা চাষী আমিনুল জানান, সবকিছুই ঠিক আছে। শুধু বীজের দাম আর
বৈরী আবহাওয়াই এখন চারা উৎপাদনে লোকসানের কারণ। দেশী কোন কোম্পানি ভালো
উন্নতমানের বীজ উৎপাদন না করায় এবং বিদেশী বীজের দাম বেশি হওয়ায় প্রতি বেডে
চারা উৎপাদনের খরচ দ্বিগুণ হয়। দেশী বীজ যেখানে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় কেনা
যেত, সেখানে বিদেশী কোম্পানির বীজ কিনতে হয় দুই/তিনগুণ বেশি দামে।
অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবছর টানা বৃষ্টিপাত হয়েই চলছে। যে কারনে
অনেক বীজতলা নষ্ট হয়েছে। গরম না কমায় অনেকে শীতকালীন সবজি চাষও শুরু করেনি।
এদিকে বীজতলায় চারা বড় হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরছে। অপর এক চাষী ফারুক
জানান, দেশী প্রযুক্তির বীজ উদ্ভাবণ করা গেলে বেশি দামে বিদেশী বীজ কেনা
লাগবে না। সরকারি ভাবে সবজির বীজ উৎপাদ করা গেলে এই চারা উৎপাদন আরো
বিস্তৃত হবে। সমেশপুর চারা গ্রামের কৃষকদের ক্ষোভ, অন্যান্য সব বিষয়ে
মনোযোগ থাকলেও চারা উৎপাদন নিয়ে নজর নেই কৃষি বিভাগের। কৃষি বিভাগের নিয়মিত
পরামর্শ পাওয়া গেলে বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করা যেত সহজে।
সমেশপুর
গ্রামের প্রায় দেড়শ পরিবার সবজির চারা উৎপাদনের সাথে জড়িত। গ্রামটির প্রায়
২৫ একর জমিতে চাষ হয় এসব চারা। দেশী কোন কোম্পানি বানিজ্যিক ভিত্তিতে
হাইব্রিড সবজির বীজ উৎপাদন না করায় চীন, তাইওয়ান, জাপান থেকে আমদানি করা
বীজ দিয়ে চাষ হয় এসব চারা। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানালেন, সরকারি ভাবেও উন্নত জাতের হাইব্রিড
বীজ গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া বেসকারি বীজ সরবরাহকারী
প্রতিষ্ঠানগুলোও উন্নত বীজ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ
বিভাগের মাঠ কর্মীরা সমেশপুরের চারা চাষীদের খোঁজ খবর নিচ্ছে নিয়মিত।