নিত্যপণ্যের
ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে চাল, তেল, চিনির
দাম একেবারেই সাধারণের নাগালের মধ্যে নেই। জনমনেও দেখা দিয়েছে বিরূপ
প্রতিক্রিয়া। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আদৌ সফল হতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নও
দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের বাজারে কখন কোন পণ্যের দাম বাড়বে বা কমবে তা
নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। বাজারে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট সক্রিয়, এমন কথা
সব সময় শোনা যায়। এই সিন্ডিকেট ভাঙা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আবার এটাও
সত্য যে যখন কোনো বাজার আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে, তখন আন্তর্জাতিক
বাজারে দাম ওঠানামার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কিন্তু সেটাও যে নিয়ম মেনে
হয়, তা নয়। কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি জাতীয়
দৈনিকে লিখেছেন যে ‘বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের এখানে সমন্বয় হতে
অনেক বেশি সময় লাগে।’ যেমন-আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমেছে। কিন্তু
আমাদের এখানে ব্যবসায়ীদের যুক্তি, তাঁরা বেশি দামে আমদানি করেছিলেন। তাই
কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রি করবেন না। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের
দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু এখনকার মজুদটা তো আজকের
দামে কেনা নয়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব
কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি অবশ্য বাজারের এই অস্থিরতায় ক্ষোভ
প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এত লাভ করতে হবে কেন?’ পেঁয়াজের দাম
নিয়ে উদাহরণও দিয়েছেন তিনি। এই প্রথম ব্যবসায়ী সংগঠনের কোনো নেতা ভোক্তাদের
পক্ষে কথা বললেন।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের
প্রভাবে দেশে পণ্যের দাম বাড়লে সরকারের কিছু করার থাকে না। তিনি বলেছেন,
তাঁর মন্ত্রণালয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ‘প্রতিনিয়ত কাজ’ করে যাচ্ছে।
কিন্তু বাজারে তার প্রতিফলন কোথায়? বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশ
মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ। সরকার সবাইকে তো ভর্তুকি দিয়ে খাওয়াতে পারবে
না।’ কিন্তু ভোক্তাদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব তো সরকারের। মুক্তবাজার
অর্থনীতি মানে তো এই নয় যে ভোক্তা নিষ্পেষিত হবে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
মুক্তবাজার অর্থনীতিতেও সরকারকে নীতিগত সহায়তা দান এবং বাজারে প্রত্যক্ষ
হস্তক্ষেপের সুযোগ রাখতে হবে। গড়ে তুলতে হবে বিকল্প বাজারব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতা সরকারকে
রাখতে হবে। সরকারকে সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে
পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের
প্রত্যাশা।