বিভীষিকার হারে শেষ দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ
Published : Friday, 5 November, 2021 at 12:00 AM
প্রথম তিন
ওভারে নেই তিন উইকেট। ছয় ওভারে চারটি। পাওয়ার প্লে শেষ হতে না হতে আরেকটি।
ব্যাটিংয়ে দুঃস্বপ্নের শুরুর পর কোনোমতে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন
রান এড়াতে পারল বাংলাদেশ। কিন্তু পারল না বড় হার এড়াতে। অস্ট্রেলিয়ার
বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হার দিয়ে শেষ হলো মাহমুদউল্লাহদের বিব্রতকর
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে
বৃহস্পতিবার সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহদের ৭৩ রান স্রেফ ৬.২ ওভারে পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
বল
বাকি থাকার দিক দিয়ে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। ২০১০ সালে
হ্যামিল্টনে নিউ জিল্যান্ড জিতেছিল ৭০ বল বাকি থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে
মাহমুদউল্লাহরা হারলেন ৮২ বল বাকি থাকতে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টেস্ট
খেলুড়ে দেশের এটাই সবচেয়ে বড় হার। এই সংস্করণে বাংলাদেশের এর চেয়ে কম রান
আছে একটিই। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০। এ সব
সংখ্যাও ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ কতটা বিব্রতকর ছিল বাংলাদেশের পারফরম্যান্স।
ব্যাটিং উইকেটে জঘন্য ব্যাটিং প্রদর্শনীতে দলটি একটুও দেখাতে পারেনি
লড়াইয়ের মানসিকতা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ভোগান্তির শুরু
প্রথম ওভার থেকেই। মিচেল স্টার্কের গতিময় ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাট নামাতে
দেরি করেন লিটন দাস। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে।
লিটনের গোল্ডেন ডাকের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে বাংলাদেশ হারায় সৌম্য
সরকারকে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে জশ হেইজেলউডের সেটি ছিল শেষ বল। আপাত
সাদামাটা ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে আনেন সৌম্য।
তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে
মুশফিকুর রহিমকে বিদায় করে দেন ম্যাক্সওয়েল। শাফল করে ফ্লিক করার চেষ্টায়
ব্যাটে খেলতে পারেননি মুশফিক, ফিরে যান এলবিডব্লিউ হয়ে। ১০ রানে ৩ উইকেট
হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধের আশা জাগায় মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও মাহমুদউল্লাহর
ব্যাটে। তাদের জুটিতে আসে পাঁচটি বাউন্ডারি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে নাঈমকে
ফিরিয়ে সম্ভাবনাময় জুটি ভাঙেন হেইজেলউড।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর
আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেট পান জ্যাম্পা। এই লেগ স্পিনারই করেন
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে শামীম হোসেনের আশা
জাগানো ২৯ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। তাকে স্কয়ার কাট করার চেষ্টায় কট
বিহাইন্ড হন শামীম। একটি করে ছক্কা ও চারে ১৮ বলে ১৯ রান করেন তিনি। পরের
বলেই গুগলিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মেহেদি হাসান।
বাংলাদেশ শেষ ৫ উইকেট
হারায় কেবল ১১ রানে। শঙ্কা জাগে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার, তবে
কোনোমতে সেটি পেরিয়ে যায় তারা। এক প্রান্ত আগলে রাখা মাহমুদউল্লাহকে বিদায়
করেন স্টার্ক। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ
অধিনায়ক।
পঞ্চদশ ওভারে আক্রমণে ফিরে হ্যাটট্রিক হয়েই যেত জ্যাম্পার।
কিন্তু লেগ স্পিনারের বলে তাসকিন আহমেদের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি কিপার
ম্যাথু ওয়েড। সেই ওভারেই মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামকে ফিরিয়ে
বাংলাদেশকে ৭৩ রানে থামিয়ে দেন জ্যাম্পা। সঙ্গে গড়েন বিশ্বকাপে
অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৫
উইকেট নেন জ্যাম্পা। ২০১৬ আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে জেমস ফকনারের ২৭ রান
দিয়ে পাঁচটি ছিল আগের সেরা। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম পাঁচ উইকেট পেলেন
জ্যাম্পা। তার আগের সেরা ছিল ১৪ রানে ৩ উইকেট।
রান তাড়ায় উড়ন্ত শুরু
করে অস্ট্রেলিয়া। ঝাপটার বড় অংশই যায় মুস্তাফিজের ওপর দিয়ে। ২ ওভারে
বাঁহাতি এই পেসার দেন ৩২ রান। নিজের বলে অ্যারন ফিঞ্চের কঠিন একটি ক্যাচ
ছাড়েন তিনি। ভালোই করেন তাসকিন। তার বলে সীমানায় ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান
ফিঞ্চ। বেশ এগিয়ে থাকা সৌম্য বলে হাতই ছোঁয়াতে পারেননি। তার মাথার ওপর
দিয়ে উল্টো বাউন্ডারি পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত তাকে
থামান তাসকিনই। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন ফিঞ্চকে, ভাঙেন ৫৮ রানের
জুটি। ২০ বলে চারটি ছক্কা ও দুটি চারে ৪০ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার।
পরের ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারকে বোল্ড করে দেন শরিফুল ইসলাম। ম্যাক্সওয়েলকে
নিয়ে বাকিটা সারেন মিচেল মার্শ। সুপার টুয়েলভে সব হেরে বাংলাদেশ ফিরছে
শূন্য হাতে।